তনুমানসা
-মানিক দাক্ষিত
অন্ধকার অতল সমুদ্রে
আবছা কালো মেঘলা রৌদ্রে
যদিও একটা অস্পষ্ট কায়া ঘোরে;
তবুও সেটা চৈতন্যরসে সিক্ত,
তৃষ্ণার্ত চিত্তের তনুমানসা।
যযাতির উপভোগে বাড়ে স্পৃহা,
অমাবস্যা নামে ক্রমে ক্রমে।
ঘূর্ণায়মান চাকায় বাঁধা জীব
অবশ্যই শিবের নীচে মুহ্যমান
নিরন্তর সুখের আশায়।
দুরন্ত ভ্রমর হুমড়ি খেয়ে ওঠে;
ঠিক সেই ক্ষণে ঘি-টা তরল
আগুনের সামান্য তাপে।
তনুমানসার অস্তিত্ব বিপন্ন
চৈতন্যসত্ত্বার বিলোপের সম্ভাবনায়।
ভোগের আসক্তিতে কর্মদৈত্য প্রকট;
স্বপ্নের শ্বেতহস্তী আকাশে ঘোরে।
কর্মের আলাদা সত্ত্বা পরিষ্কার দেখি
নোংরা বাতাসে বয়–
খুঁজে কি পাবো আমরা তনুমানসায়?
শীর্ণতার পরিবেশে
ভোগের স্পর্শ খুঁজি হাতড়িয়ে।
সম্মুখে গভীর খাদ–
হুমড়িয়ে পড়ে যাই কিন্তু।
কী সাংঘাতিক প্রখর দৃষ্টি!
প্রশান্তির প্রলেপের লোভে
রাতের অন্ধকারে অন্বেষণ চালাই
স্নিগ্ধ তনুমানসার।
চাতকটা কাঠফাটা রৌদ্রে
তাকিয়ে থাকে ঠায় আকাশপানে।
কী অপরূপ দৈন্যতার বিরূপ প্রকাশ।
ভোরের আলোয় আমরা বিস্মৃত
চাহিদার আসল বিষয়।
ক্ষণিকের সুখভোগে
মত্তহস্তী শৃঙ্খলিত
বিষয়ের রঙীন কারায়।
তনুমানসা অদৃশ্য
আসক্তির কুমীর দৃষ্টিতে।
বৈরাগ্য সাহস বীর্য সহজলভ্য?
কামনার আনাগোনা অবিরত–
কোথায় চেতনার পুষ্প সৌরভ?
পর্বতসমান ক্রোধের মুক্তি
শরীরের রক্ত হঠাত্ মস্তকে ওঠা।
বিশাল ধূমে আবৃত অগ্নিশিখা
আচ্ছন্ন কামনার চেতনায়।
আলো তাই স্বচ্ছন্দে বাঁধা পড়ে
অন্ধকারের শক্ত গোঁজে।
কি সাংঘাতিক যন্ত্রণা
জীবনের অস্থিতে পোকার কামড়ে।
নরম স্পর্শে, ঠাণ্ডা জলে
কিংবা দৈত্যের পাওয়ায়
শান্তি কি এসে যায় হাতের মুঠোয়।
তনুমানসার প্রশান্তি দৃষ্টি
সাত তাড়াতাড়ি না পড়লে দক্ষযজ্ঞ।
রক্ত-মাংসাদির বিকার
আর কতদিন সওয়া যায়।
সৃষ্টির প্রয়াসে মন কিন্তু মুখর।
বিষয়সম্ভোগে বিষয়প্রাপ্তি দুর্লভ।
অন্ধকারে কাল কাটা
সংখ্যার মৃত্যুই।
জীবনের আসল প্রকাশ
সূর্যের উষ্ণ তেজে।
আসক্তির মৃত্যুতে শিবের মুক্তি।
ভোরের আলোতে প্রশান্তি নামে
সারা দেহ-মনে।
তনুমানসা এখন দাঁড়িয়ে
একেবারে শিবের মুখোমুখি।