চক্ষুদান
– রাণা চ্যাটার্জী
কি রে ভাই কাঁদছিস! আয় আমার কাছে বলে মৌ হাত বাড়িয়ে ভাই রণিতকে খোঁজার চেষ্টা করলো। ভাইয়ের ফোঁপানোর কান্না মোটেও ভুল শোনেনি সে যতই জন্মান্ধ হোক, ঘ্রাণ শক্তি তার প্রখর। মা ঘরে ঢুকে জানালো ভাই স্কুলের স্পোর্টসে চ্যাম্পিয়ন হয়ে বড়ো ট্রফি পেয়েছে। গোটা গ্রাম ঘুরে হিপ হিপ হুররে করে বাড়ি ফিরতেই কান্না দিদি তো দেখতে পাবে না তার এই উপহার। আহারে যে দিদি সকাল সন্ধ্যা তাকে উৎসাহ দেয় তার কিনা এত কষ্ট-এটা ভেবেই হাপুস নয়নে কান্না আসছে।
মৌ জানে তাকে নিয়ে ভাইয়ের উদ্বেগের কথা। যখনই আক্ষেপ “ইস দিদি যদি দেখতে পেত “-প্রতিবারেই মৌ ভাইকে সান্ত্বনা দিয়েছে, “তুই বড় হয়ে ডাক্তার হয়ে না হয় আমার চোখে আলো ফেরাবি।”
আজ হঠাৎ সুযোগে হাসপাতালের বেডে উৎকন্ঠায় সারাদিন শুয়ে মৌ। চোখের জটিল অপারেশন তার সফল হয়েছে। এ এক দারুণ তৃপ্তির খবর। আজ কিনা সে প্রথম পৃথিবীর আলো, মা, বাবা,ভাইকে দেখবে! এ আনন্দানুভূতি কাউকে সত্যই বোঝানো দুস্কর।
এতদিন শুধুই অন্ধকার চোখে ভালোবাসা, স্নেহের অনাবিল স্রোত, দারিদ্রতার পাঞ্জা লড়াই, তাচ্ছিল্য সব লিপিবদ্ধ আছে। বাবার মৃত্যু যেন তার ইচ্ছাতে আরো অন্ধকার আনে।
আজ কড়া নাড়লো ইচ্ছেরা। এতগুলো বছরের অনুভূতি, স্পর্শ আক্ষেপ যেন এক লহমায় বানভাসি!
বুট জুতোর আওয়াজ। তবে কি ডাক্তার কাকু এলেন, এই বুঝি আসবে শুভ মুহূর্ত “চোখ খোলো, তাকাও-বলো কাকে প্রথম দেখতে চাও?”
বাপরে, ঝলমলে পৃথিবী, এত্ত সুন্দর! এতোকাল অন্ধকার জগতে বিচরণ, কল্পনায় এই আলোর জগৎ সম্পর্কে ভাবনা আর আজ আলোর দ্যুতি যে কি জোরালো তা দেখেই শিহরিত মৌ। একি মা উনি কে?কাঁদছেন এভাবে?
অঝোর ধারায় এক মহিলা কেঁদেই চলেছেন তখনো। উদ্বিগ্ন মৌ, মা তুমি বলো উনি কাঁদছেন কেন?
গর্ভধারিনী মা মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
“উনি তোমার আর এক মা। দুর্ঘটনায় ওনার ছেলের মৃত্যু হলেও উনি এগিয়ে এসেছেন কারুর চোখে আলো ফেরাতে। ওনারই মৃত সন্তানের চক্ষুদানের আলোয় তুমি আজ উদ্ভাসিত।