“উপহার”
– সোমা কর্মকার
প্ল্যান করা পুরো ভ্যালেনটাইন সপ্তাহটাই ভেস্তে গেলো অফিসের কাজের চাপে। কবে থেকে ভাবছি একদিন একটু তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে একটা গিফট কিনবো ওর জন্য। আজ ‘ভ্যালেনটাইনস ডে’ ভাবলাম অন্তত আজকের দিনটা ছুটি নিয়ে ওকে কোথাও একটু ঘুরতে নিয়ে যাবো। ছুটি নেওয়া, আগে বেরোনো তো দুরের কথা অন্য দিনের থেকে আজ একঘন্টা দেরীতে বেরোলাম। কি করে যে মুখ দেখাবো ইশানীকে? ছি! ছি! কি যে করি? কোনো গিফটের দোকানও খোলা নেই এই সময় যে কিছু কিনে নিয়ে যাবো। ভাগ্যক্রমে একটা দোকান খোলা পেলাম সেখান থেকে অগত্যা পাঁচটা ক্যডবেরি নিয়ে স্টেশনের দিকে এগোলাম, মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো। স্টেশনে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলাম এমন সময় পেছনদিক থেকে কে যেন আমার জামা ধরে টানলো। পেছন ঘুরে দেখি একটা ছোট্ট ছেলে, হাতে পাঁচ-ছটা গোলাপ নিয়ে বলছে বাবু এই গোলাপ কটা নেবে? তোমার বউকে দেবে.. আজ তো ভালোবাসার দিন সবাই তার ভালোবাসার মানুষকে আজ গোলাপ দেয় নাও না গো, মাত্র এ কটাই পরে আছে বেশী লাগবে না কুড়ি টাকা দিলেই হবে, আমি ভাই এর জন্য একটা পাউরুটি কিনবো। বাচ্ছাটিকে দেখে খুব মায়া হলো, নিজেই এতো ছোটো বাচ্চা হয়ে আবার ভাই এর পেট চালানোরও কথা ভাবছে। ওর হাত থেকে গোলাপগুলো নিয়ে পকেট থেকে একশো টাকা বার করে ওকে দিয়ে দিলাম। ও বললো এতো লাগবে না বাবু, মাত্র কুড়ি টাকা। বললাম এটা আজকের দিনে আমি তোকে উপহার দিলাম। খুব খুশি হয়ে ও নিষ্পাপ হাসি দিয়ে চলে গেলো। গোলাপগুলো পেয়ে আমিও খুব খুশি হলাম, ওই নাই মামা থেকে তো কানা মামা ভালো আরকি। দেখতে দেখতে বাড়ী ফিরে এলাম, লজ্জায় ও ভয়ে ইশানীকে উইশ করে গোলাপ আর চকলেটগুলো দিলাম। মিষ্টি করে হেসে ও জিনিসগুলো সাদরে খুব যত্নের সহিত গ্রহণ করলো এবং আমাকেও একটা রিটার্ন গিফট দিলো, একটা সুন্দর ঘড়ি আর একটা লাল খামে বন্দি একটা গ্ৰিটিংস কার্ড তাতে ওর নিজের হস্তাক্ষরে লেখা আছে- “I love you always. ভালোবাসার জন্য আলাদা করে কোনো দিনের দরকার হয় না”। খুব পছন্দ হয়েছে ওর গিফটা আমার। দু’জনে খাওয়া দাওয়া সেরে ঘরে গিয়ে ওকে রাস্তায় ছেলেটার ঘটনা সব বললাম, এও বললাম- আজকের দিনটা নিয়ে অনেক প্লান করেছিলাম জানো কাজের প্রেসারে সব ভেস্তে গেলো। তুমি খুব রাগ করেছো তাই না? ও বললো আরে এটা কোনো ব্যাপারই নয়, আমি এসব মানিনা জানো সম্পর্ক ঠিক থাকলে প্রতিটি দিনই বিশেষ দিন হয়ে উঠতে পারে। নাইবা আমায় কোথাও নিয়ে যেতে পারলে, নাইবা ছুটি নিলে, কিন্তু তুমি চিরকাল আমার পাশে থেকো এটাই যথেষ্ট। তাছাড়া কাজের চাপ থাকলে তো তোমারও কিছু করার নেই তাইনা? আর তোমার জন্য তো ওই শিশুটাও খুব খুশি হলো, ছুটি নিলে তো আর এতো কিছু হতো না, এটাও বা কম কোথায় বলো? তাছাড়া লাল গোলাপ আর চকলেট আমার সবচেয়ে বেশী প্রিয় জিনিস, সেটাই তো আমি পেয়েছি আর কি চাই? কতো লোক যে প্রতিদিন ঠিক মতো খেতেও পায় না। ওর কথাগুলো শুনে আমি এতোটাই মুগ্ধ হয়ে গেলাম যে আর কিছু বলার ভাষা পেলাম না। শুধু মনে মনে ইশ্বরকে ধন্যবাদ জানালাম।
মন ছুয়ে গেলো, খুব সুন্দর লেখা। অপূর্ব।
অনেক ধন্যবাদ
অনেক ধন্যবাদ