করোনার দাওয়াই
– তূর্য বাইন
সাতসকালে নেতাই দেখি একখানা ঝুড়ি মাথায় নিয়ে হাঁকতে হাঁকতে যাচ্ছে, ওষুধ নেবে গো, ওষুধ।
ঝুড়িতে করে ওষুধ ফেরি করতে বাপের জন্মে দেখিনি, শুনিওনি কখনো।
ভাবলাম,খ্যাপার মাথাটা বুঝি আবার গরম হয়েছে। তাই পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিলাম।
নেতাই এক হাত দিয়ে খপাত করে আমার জামাটা টেনে ধরে বলল, এক্কেরে মোক্ষম ওষুধ,একবার নিয়েই দেখ না। এখনো গরম আছে, ভাপ বেরোচ্ছে।
আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কীসের ওষুধ,নেতাই?
সে দ্বিগুণ অবাক হয়ে বলল, এডা এট্টা জিগেস করার কতা হল? এই জন্যি লোকে তুমারে নে হাসাহাসি করে। কিচ্চু খবর রাকো নাকো। করোনার ওষুধ গো!
বলতে বলতে সে মাথা থেকে ঝুড়িটা নামাল। তাকিয়ে দেখি, তার মধ্যে তাল তাল গোবর, সত্যিই টাটকা!
আমি রেগে গিয়ে বললাম, খ্যাপামি করার আর জায়গা পাসনি? এটা করোনার ওষুধ!
সেও ক্ষেপে গিয়ে বার দুয়েক তুর্কি নাচ নেচে বলল,আমার কতা বিশ্বেস হচ্চে না? একবার এর মদ্দি হাত ডুবিয়ে দ্যাকো না! দিলীপবাবুর গোয়ালের খাঁটি মাল। এর মদ্দি সোনা মিশে আচে বলে হলদে দেকাচ্চে।
বলতে বলতে সে আমার হাত ধরে হ্যাঁচকা টান মারল।আমি টাল সামলাতে না পেরে হুমড়ি পড়লাম সেই গোবরের ঝুড়িতে। আমার গায়ে হাতে গোবর মেখে সে এক বিদিকিচ্ছিরি ব্যাপার।
আমার অবস্থা দেখে পাগলা হাততালি দিয়ে বলল, বেশ হয়েছে। এ যাত্রা তুমি বেঁচে গেলে! আর কোরনা তুমারে ছুঁতি পারবে নাকো!
–মানে?
–এই যে তুমি ওষুধ মেকে আচো, একন নিজির গালে-মুকি হাত দেবা? কিচু খাবা? কেউ তুমার হাত ধরবে? উল্টে টেরেনে-বাসে তুমারে জায়গা ছেড়ে দে লোক পালাবে! তালি কোরনা আসপে কনথে?
আমার মনে হল, নেতাইয়ের মন্ত্রী হওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা। আমি ওর হাতে একখানা একশ টাকার নোট গুঁজে দিয়ে সরে পড়লাম।