৪৯৮(এ)
– শচীদুলাল পাল
কোলকাতার আভিজাত্য পরিবারের ছেলে অরিত্র, বয়স ২৬, সুদর্শন,মেধাবী। ছোট থেকে পড়াশোনা অন্ত প্রাণ। সব পরীক্ষায় খুব ভালো নম্বর পেয়ে এসেছে। কম্পিউটার সাইন্সে এম. টেক ডিগ্রি সহ অনেক প্রফেশনাল কোর্স করে কলকাতায় এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। বেতন লক্ষাধিক। গাড়ি বাড়ি প্রাচুর্যে ভরপুর।বাড়ীতে মা আছেন। বাবা অনেকদিন আগেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত।
অরিত্র নিজের ক্যারিয়ার নিয়েই ব্যস্ত থেকেছে। মেয়েদের সাথে মেলামেশা পছন্দ করেনি। অবক্ষয় সমাজে মেয়েদের সাথে মেলামেশায় তার পড়াশোনা, ক্যারিয়ার নষ্ট হবে এই আশঙ্কায়। বেশ ভালোই কাটছিল দিনগুলি।
হঠাৎ মোবাইলে একটা মেসেজ এলো “আমি তোমায় ভালবাসি।”
খুব একটা গুরুত্ব দিলো না।
একদিন পরপর একই মেসেজ আসতে লাগলো। অত্যন্ত বিরক্তিকর মনে হলেও শেষ পর্যন্ত মনটা নরম হলো যখন এই মেসেজটি পেলো- “আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না।”
কৌতুহল হলো। ক্রমে কন্ঠস্বর বিনিময়ের পালা।
একদিন সাক্ষাৎ হলো মেয়েটির দেওয়া এক নিরিবিলি স্থানে।
ফর্সা রূপসী স্লিম মেয়েটির মায়াবী চোখে এক আকর্ষণ। এমন পোশাকে এসেছে যে তার রূপ যৌবন পরিস্ফুটিত। দেখে অরিত্র মোহিত হয়ে গেলো।
মেয়েটি বললো, আমার নাম চন্দ্রা। আমার দিদির সদ্য বিয়ে হয়েছে আপনাদের পাড়ায়। আমি রোজ লুকিয়ে আপনাকে দেখতে দেখতে প্রেমে পড়ে গেছি।
আগ্রাসী মেয়েটি হাত ধরল।
তারপর বুকে মাথা রেখে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললো “আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি” অরিত্র প্রথম এইভাবে নারীসান্নিধ্য লাভে শিহরিত হলো। অঙ্গে অঙ্গে এক উষ্ণ স্রোত বয়ে গেলো। সে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলনা। তার পৌরুষ চন্দ্রার আবেদনে সাড়া দিল।
তারপর থেকে আর তাদের দেখা সাক্ষাৎ হয়নি। হোয়াটসঅ্যাপে ও মেসেঞ্জারে সীমাবদ্ধ ছিল। অরিত্রও চন্দ্রাকে ভালো
লাগতো। সর্বক্ষণ কাজের মধ্যে পড়াশোনার মধ্যে ডুবে থাকা অরিত্র মনোরঞ্জনের এক খোরাক পেয়ে গেলো।
একদিন মা বললো “দেখ বাবা আমার তো বয়স হলো। নানান রোগ ব্যাধিতে ভুগছি।এবার তোর বিয়ে দিয়ে বউ আনবো। তোর বিয়ের উপযুক্ত বয়স। এই দেখ তোর জন্য ঘটক কয়েকটি সম্বন্ধ এনেছে। ছবিগুলো দেখে বল, কোন কোনটা তোর পছন্দ?”
-না মা। আমি একটি মেয়েকে ভালোবেসে ফেলেছি।
– ও আচ্ছা। তা আগে বলিসনি কেন? ঠিক আছে। ওদের আমাদের বাড়ি আসতে বল।
– ঠিক আছে। তাই বলে দেব।
এক ছুটির দিনে মেয়ের মা ও আত্মীয়স্বজনরা দলবল নিয়ে এলো। তারা ছেলে দেখে পছন্দ করে বললো
– আমাদের ছেলে খুব পছন্দ। আপনারা একদিন আসুন। আমি গাড়ি পাঠিয়ে দেব।
আমরা এক গলির ভেতরে থাকি। ড্রাইভার আপনাদের সঠিক স্থানে নিয়ে যাবে।
অরিত্রর মা সাবিত্রী দেবী বললেন, “আমাদের কোনো দাবি দাওয়া নেই। ঘর ভর্তি ফার্নিচার। পর্যাপ্ত অলংকার আমার সব লকারে। আমি আমার সব গয়নাগাঁটি আমার পুত্রবধূর জন্য রেখেছি। সব দিয়ে দেব।
মেয়ের মার আনন্দে চোখদুটো চিক্ চিক্ করে উঠলো। খুব খুশিতে আবেগে মন নেচে উঠলো। বিদায়ের সময় ভাবী বেয়ানকে প্রণাম করে বললো,
“আমার মেয়ের এবং আমাদের কি পরম সৌভাগ্য। আপনার ছেলের মতো হীরের টুকরো ছেলে আমার মেয়ের স্বামী হবে আর আমি একমাত্র মেয়ের শাশুড়ী হবো।”
আর এক ছুটির দিনে নিকট আত্মীয়স্বজন ও অরিত্রকে নিয়ে চন্দ্রার মায়ের পাঠানো গাড়ীতে গিয়ে পৌছালো চন্দ্রাদের বাড়ি।কী সুন্দর সাজানো গোছানো বাড়ী।
মেয়ে সুন্দর শাড়ি পরিহিতা। সলজ্জ চাউনি।এসে সবাইকে প্রণাম করলো। মেয়ের রূপ লাবণ্য, ব্যবহার দেখে পাত্রপক্ষ সবাই মুগ্ধ হলো। জলখাবার ও দুপুরের খাবার খাইয়ে তবেই ছাড়লো। মেয়ের মা ছবি রায় বললো “সব আমার মেয়ে নিজের হাতে বানিয়েছে” স্বাদিষ্ঠ রান্নায় সবাই তৃপ্ত হলো।
অবশেষে বিয়ে পাকা হলো।
অরিত্র লকার থেকে প্রায় সব গয়না নিয়ে এলো। বিয়ের আগেই মাকে সাথে নিয়ে মা সাবিত্রী দেবী চন্দ্রাকে আশীর্বাদ করে এলো।
ম্যেরেজ রেজেস্ট্রি অফিসে গিয়ে রেজেস্ট্রিও হয়ে গেলো।
এক নির্ধারিত দিনে মহা ধূমধামে বিয়ে হয়ে গেল। প্রচুর আত্মীয় স্বজন বন্ধুবান্ধবদের ও বরযাত্রীদের উপস্থিতিতে সরগরম।
অরিত্র কনেকে নিয়ে নিজের ঘরে এলো। কালরাত্রির পরদিন বিশাল হলঘরে বিয়ের আয়োজন।
যে যার কাজে ব্যস্ত। অনেক রাত হলো। চন্দ্রা বললো আমার শরীর ভালো লাগছে না।একটু রেষ্ট নেব।
হল ঘরে কনে পক্ষের এক ছেলে চন্দ্রাকে নিয়ে হল ঘরের এক রুমে শোবার ঘরে নিয়ে গেলো। রাত অনেক হলো এবার কিছু খাওয়া দাওয়া সেরে ঘরে ফেরার পালা। অরিত্র চন্দ্রাকে ডাকতে গিয়ে দেখলো দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। দরজায় নক করতে ছেলেটা দরজা খুলে দিল। বিয়ের সাজে চন্দ্রা কেমন যেন বিশ্রীভাবে শুয়ে আছে। অরিত্রকে দেখে ধড়ফড় করে উঠে সাজগোছ ঠিক করে খেতে গেলো দু’জনে। ভরপেট খাওয়া দাওয়া সারলো চন্দ্রা। বিয়ের অনুষ্ঠান হল প্রায় ফাঁকা। অরিত্র চন্দ্রাকে নিয়ে কারে নিজের ঘরে এলো। আজ ফুলসজ্জা। সুন্দর করে সাজানো। সোহাগ রাতের বিছানা।
অরিত্র প্রেম আদর করতে গেলে
চন্দ্রা বললো “ওসব ছাড়ো। এসো আমরা মিলিত হই।”
অরিত্র প্রথম নারীর সান্নিধ্যে একটু ঘাবড়ে গেলো। স্মিত আলোয় দেখলো চন্দ্রার শরীরে কিছুক্ষণ আগে মিলনের চিহ্ন। সে নিজের ভ্রম ভেবে নিল। এভাবে রাত শেষে সকাল হলো।
অরিত্র সকাল সকাল উঠে নিজের কাজকর্ম শেষ করে বেডরুমে এসে দেখল চন্দ্রা তখনও শুয়ে আছে। অরিত্র বলল “বেলা এগারোটা বাজে ওঠো।”
– এগারোটা বাজলো তো কি হলো, মোবাইল সুইচ অন করে চ্যাটিং-এ ব্যস্ত হয়ে গেল। বারোটা বাজলো শাশুড়ি এসে বললো “বউমা ওঠো ” মুখহাত ধুয়ে খাবার খেয়ে নাও”
চন্দ্রা মুখঝামটা দিয়ে বললো “আমার খুশি মতো উঠবো। তোমার কি? বেশি বিরক্ত করবে না।”
মেয়ে রাগী ভেবে শাশুড়ী মা চলে গেলো।
দু’ একদিন এভাবে কাটলো। অরিত্র ডিউটি জয়েন করে নিজের কাজে ডুবে গেলো।
প্রতিদিন রাত্রে বাড়ি এসে ডিনার শেষে যখন শুতে আসে তখন দেখে চন্দ্রা মোবাইলে চ্যাট করতে ব্যস্ত।
অরিত্র বললো “এসব ছাড়ো। এসো আমরা কিছু সুখ দুঃখের কথা বলি।”
– আমার মর্জি আমি মোবাইলে ফেসবুকে ব্যস্ত থাকব আমাকে ডিস্টার্ব করবে না।
– আমরা নতুন বিয়ে করেছি। চলো আমরা হানিমুনে কোথাও বেড়িয়ে আসি।
হনিমুন? পরে একটু ভেবে বললো, খুব ভালো। তবে আমাদের সাথে আমার এক দাদাও যাবে।
অরিত্র রাজি হলো। তিনজনে পুরীতে হোটেল বুক করে রওনা হলো।
সারাদিন সমুদ্র সৈকতে দ্রষ্টব্য স্থানে ঘুরে বেড়িয়ে হোটেলে ফিরে আসতো। অরিত্র আর চন্দ্রা একটা রুমে আর ঠিক পাশের রুমে তার সম্পর্কিত দাদা রাজীব।
প্রথমদিন ক্লান্ত শরীরে অরিত্র ঘুমিয়ে পড়েছিল। হঠাৎ মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে অরিত্র দেখল পাশে চন্দ্রা নেই। ভাবলো হয়তো বাথরুমে গিয়েছে।
আবার সে ঘুমিয়ে পড়ল। ঘন্টা খানেক পর ঘুম থেকে উঠে চন্দ্রাকে না দেখতে পেয়ে দরজার দিকে এগিয়ে গেল। দেখলো দরজা খোলা। ধীর পায়ে রাজীবের রুমের সামনে গিয়ে চন্দ্রার কন্ঠস্বর শুনে দরজা একটু ফাঁক করতেই দেখলো নগ্ন চন্দ্রা রাজীবের দেহমিলন।
সে ধীর পায়ে নিজের রুমে ফিরে এলো। ভদ্র শান্ত শিক্ষিত আদর্শবান অরিত্র কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেলো। ভিতরে ভিতরে গভীর জ্বালা অনুভব করতে লাগলো। সে ঠকে গেছে। সে পরাজিত। তার সংস্কারে প্রচন্ড আঘাত লাগলো।
যে কদিন ছিল পুরিতে চন্দ্রা তাকে খাবারের সাথে ঘুমের অষুধ মিশিয়ে দিত। সে সকাল পর্যন্ত ঘুমাতো।
নির্ধারিত দিনে রিজার্ভেশনে তারা ফিরে এলো। বাড়িতে ফিরে এসে চন্দ্রার আসল রূপ প্রকাশিত হলো।
শাশুড়ী রান্না করে। অরিত্র ডিউটিতে। চন্দ্রা দিনরাত মোবাইলে নাহলে বিছানায়।
একদিন অরিত্রর মা সাবিত্রী দেবী বলল “দেখ বউমা, আজ আমার শরীর ভালো নেই সকাল থেকে মাথা ঘুরছে তুমি যদি আজকে রান্নাটা করে দিতে।”
চন্দ্রা খেঁকিয়ে উঠলো “আমাকে কি রান্না করার জন্য এনেছেন? ওসব আমি পারবো না”
– ঠিক আছে আমি নাহলে কষ্ট করে রান্নাটা করে দিচ্ছি। তুমি একটু সাহায্য কর।
– কি বললি আমি তোর ঝিয়ের কাজ করবো! কি পেয়েছিস আমাকে হারামজাদী। আমাকে রান্না করার কাজ করাবি।
– দু’ একদিনের জন্যে তো বলছি বউমা।
– কোন ছোটলোক ফ্যামিলিতে আমার বিয়ে হলো। আমাকে দিয়ে রান্না করাবি। দু’দিন পরে বাসন মাজাবি। হারামজাদি।
চন্দ্রার এই ব্যবহারে সাবিত্রী দেবী অত্যন্ত আহত হলো। তার হৃদয়ে এক বিশাল ধাক্কা অনুভুত হলো। চন্দ্রা অরিত্রর আলমারি খুলে টাকা বের করে সেজেগুজে ঠোঁটে লিপস্টিক লাগিয়ে বের হয়ে গেল।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো। ফিরলো বার থেকে ভরপেট খেয়ে সন্ধ্যার অন্ধকারে টলতে টলতে। এসে সটান শুয়ে পড়লো। শাশুড়ি কি খেয়েছে না খেয়েছে শরীর কেমন একটুও খোঁজ নিল না।
অরিত্র রাতে ডিউটি শেষে ঘরে ফিরে দেখল মার খুব জ্বর।
মাকে জিজ্ঞেস করল “একি মা তোমার তো খুব জ্বর। কিছু খেয়েছো।”
– কে দেবে বল বাবা?
– আর চন্দ্রা?
সে তো কোথায় বেরিয়ে গিয়ে এইমাত্র ফিরলো। দরজা খুলে দেখি মুখে মদের গন্ধ।
জিজ্ঞেস করলে বললো বাইরে খেয়ে এসেছে।
— অরিত্র নিজের বেডরুমে গিয়ে দেখল চন্দ্রা কার সাথে মোবাইলে কথা বলছে।
অরিত্র বললো “মা অসুস্থ। একটু ওষুধ পত্র বা চা হরলিক্স কিছু করে দিতে পারতে?
চন্দ্রা অসভ্যের মতো আচরণ করে বলল যা কোনো ভদ্র সমাজের মেয়ে উচ্চারণ করতে পারেনা।
– মায়ের উপর এত যদি দরদ তাহলে মায়েরই সাথে সংগম কর। আমার কাছে এসেছো কি মরতে।
তারপর অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করলো।
এমনিভাবে দিন দিন শাশুড়ি স্বামীকে নির্যাতন শুরু করলো। রোজ দুপুরে বাড়ি থেকে বের হয়ে কোথায় যায় কি করে সেই জানে।
একদিন অরিত্র অফিস থেকে ফিরে এসে দেখে মাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করছে। সহ্য হলনা। কষে এক চড় মারল।
চন্দ্রা জোরে জোরে কান্নাকাটি করে পাড়ার লোক জড়ো করলো। ইনিয়ে বিনিয়ে পাড়ার লোকদের অরিত্র আর শাশুড়ীর নামে অভিযোগ করতে লাগলো।
অরিত্র সহ্য করতে না পেরে চন্দ্রার মাকে ফোন করে সববিস্তারে জানাল।
— চন্দ্রার মা শুনে মনে মনে ভাবলো তার পরিকল্পনা কাজে লেগেছে। বললো “সব দোষ তোমাদের। তোমরা আমার মেয়েকে নির্যাতন করছো। তুমি একটা নামরদ।পুরুষত্বহীন। লজ্জা করে না। উল্টো আমার মেয়ের নামে নালিশ করছো। এবার পুলিশে ডায়েরি করব।”
অরিত্র বললো, “কি? আমি পুরুষত্বহীন। একথাটা উচ্চারণ করতে পারলেন? প্রমাণ দিতে পারবেন? “
– তুমি আমার সাথে শোবে? একদিন এসো না আমার বিছানায়। দেখবো তুমি কত মরদ।
– শুনতেও আমার ঘৃণা হচ্ছে। আপনার মেয়ে শুধু নয় আপনিও চরিত্রহীনা।
– তুই কুত্তার বাচ্চা।
– আপনি কি চান?
– আমি চাই আমার মেয়েকে অবাধ স্বাধীনতা দিতে হবে। নাহলে তোমাদের নামে 498(A) ধারায় কেস করে দেব।
– এবার অরিত্র হতবম্ব হয়ে গেলো। কল কেটে দিয়ে চুপচাপ ভিতরে ভিতরে কাঁদতে লাগলো। সারারাত ভাবতে ভাবতে বিনিদ্র রজনী কেটে গেলো। অফিসে গেলো। কাজে মন নেই। কেমন যেন মনমরা। এক অপরাধ বোধ তাকে গ্রাস করলো। তবে কী সে পুরুষত্বহীন। নামরদ!
ঘরে এসে সবকিছু ভুলে স্ত্রীর সাথে সহবাস করলো। চন্দ্রার ক্লাইমেক্স অনুভব করলো।
অরিত্র কিছুটা আস্বস্ত হলো।
অফিসে গেলো। অফিসের অন্য সেকসনের একটি মেয়ে কাকলি তাকে ভালোবাসত।কিন্তু অরিত্র কোনোদিন তাকে পাত্তাই দেয় নি।
আজ লিফটে কাকলির সাথে তার দেখা।চোখাচোখি হলো। লিফটের ভীড়ে একেবারে কাছাকাছি। চোখের ভাষা বুঝে একেবারেই কণ্ঠলগ্ন। অরিত্র সবার অলক্ষে কাকলির কোমরে হাত দিলো। কাকলি কোনো আপত্তি করলো না।
অফিস ছুটির পরে দেখে ওর জন্য অপেক্ষা করছে।
এ কথা সে কথার পর কাকলি অরিত্রকে ওর বাড়িতে নিয়ে গেল।
ঘরে বাবা মা দুই দাদা বৌদি ও তাদের একজনের এক ছেলে। আর এক দাদার এক মেয়ে। ঘর ভর্তি সংসার। দাদারা অফিসার। বৌদিরা স্কুল টিচার। তাদের সবার সাথে অরিত্রকে পরিচয় করিয়ে দিল। চা জল খাবার দিল।
কাকলি ড্রেস চেঞ্জ করে ঘরের সাধারণ পোশাক পরে চা পানের পর নিজের বেডরুমে নিয়ে গেল।
বিশাল বড়ো রুম। একপাশে তানপুরা। সেল্ফে প্রচুর বই। আর ঘরময় প্রচুর বোর্ড পেন্টিং। রঙ তুলি।
অরিত্র জিজ্ঞেস করলে বলল “আমি ক্লাসিকাল মিউজিকে ডিগ্রি করেছি। নিত্য রেওয়াজ করি।”
সেলফ থেকে কয়েকটি বই এনে বললো, “আমার লেখা। কবিতা গল্প প্রবন্ধ লিখেছি।”
– আর এইসব পেন্টিং?
- এগুলি সবই আমার আঁকা।
পেন্টিংগুলি দেখাতে গিয়ে হটাৎ একটা পেন্টিং-এ অরিত্রর নজর পড়লো। খুব ভালো করে দেখতে বুঝলো এটি এক নগ্ন নারী পুরুষের ছবি। পুরুষটি হুবুহু অরিত্র আর নারীটি কাকলি।
অরিত্র কাকলির দিকে তাকাতেই কাকলি এগিয়ে এসে বললো, আমি তোমাকেই চাই। তুমিই আমার প্রেমিক।
অরিত্র জড়িয়ে চুমু খেতেই সমর্পণ করলো।সহবাস হলো। অনেকক্ষন সহবাসের পর ক্লাইমেক্সে পৌছে গেলো। তার তৃপ্ততায় অরিত্রর হীনমন্যতা দূর হলো। আমি নামরদ নই। পুরুষত্বহীন নই। নিজেকে বিজয়ী অনুভব করলাম। মাথা উঁচু করে কাকলিকে বললাম “তুমি আমার যা উপকার করলে তা আমি সারাজীবন ভুলবো না। তোমার ঋণ কখনো শোধ করতে পারব কিনা জানিনা।”
– আমি তোমাকে ছাড়া অন্য কাউকে মন দিই নি।আজ আমার মনোবাসনা পূর্ণ হলো।
– অরিত্র সদর্পে ঘরে ফিরলো।
ঘরে এসে দেখে চিত্রা প্রতিদিনের মতো মায়ের সাথে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করছে।
– এসব তার গা সওয়া হয়ে গেছে। এক নীচ জাতীয়া মেয়ের সাথে তার বিয়ে হয়েছে।অনেকটা মেনে নিল। একদিন মা অসুস্থ হলো। শয্যাগত। বাড়িতে কাজের মেয়ে ও রান্নার লোক রাখলো। অরিত্রদের বাড়িটি ছিল দোতলা। উপরতলায় আগে ভাড়া দেওয়া হতো এখন খালি। ভাড়াটিয়াদের জন্য অন্য সিঁড়ি। ঘরটি খালিই পড়ে ছিল।
কাজের মেয়েটি একদিন বললো “বাবু! আপনি যখন অফিসে থাকেন, আমি কাজ শেষ করে অন্য বাড়িতে কাজে যায় ফেরার পথে দেখি আপনাদের বাড়ির দোতলায় অন্য মরদ আসে। একদিন পা টিপে টিপে উপরে উঠে দেখি আপনার বউ অন্যের সাথে দুপুর বেলা এক বিছানায়।”
অরিত্র কিছুক্ষন চুপ করে গেলো। তারপর বললো, ঠিক আছে তুমি যাও। মাঝে মাঝে দেখবে।
অরিত্র দোতলার ঘরে সি সি টিভি ( হিডিন) ক্যেমেরা লাগালো। ওয়ারলেস ক্যমেরাটি তার আই ফোনে সংযুক্ত করলো। দেখলো কাজের মেয়েটি যা বলছে সব সত্যি। একটা নয় বেশ কয়েকটি ছেলে বাড়িতে আসে।
ঘৃনায় তার মন ভরে গেলো। একটা বেশ্যার সাথে তার বিয়ে হয়েছে। সে কিছুই ভাবতে পারছে না। কি করবে কিছুই ভেবে পেলনা।
এর মধ্যে শাশুড়ীর ডাকে একদিন চিত্রা মায়ের বাড়ি গেল। মায়ের কাছ থেকে এসে চন্দ্রা ঝগড়াঝাটির মাত্রা আরোও বাড়ালো। ঝুটমুট ঝগড়া। চদ্রার মায়ের পরিকল্পনা মতো। অরিত্র ও অরিত্রর মাকে মারধর শুরু করলো। অরিত্র সহ্য করতে না পেরে এক থাপ্পড় দিল। সে জোরে জোরে কাঁদতে লাগলো। মাকে ফোন করে জানালো। মায়ের পরিকল্পনা মতো ঘরে ঢুকে ফ্যানের সিলিং এ শাড়ি জড়িয়ে সুইসাইড করতে ঢুকলো। চন্দ্রার মা পরিকল্পনা মাফিক একদল লোকজন ও পুলিশ নিয়ে অরিত্র বাড়ি পৌঁছালো। পুলিশ দরজা ভেঙে অভিনেত্রী চন্দ্রাকে উদ্ধার করলো। পূর্বের এফ আই আর ও বর্তমান পরিস্থিতিতে ৪৫৮ এ ধারায় মা ও ছেলেকে এরেস্ট করে পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়ে জেল হাজতে পুরে দিল।
জামিন অযোগ্য ধারায় কেস হলো।
অরিত্র মামলায় সিসিটিভির ফুটেজ সাবমিট করলো।
আদালতে চিত্রা বললো “আমার স্বামী নামরদ।পুরুষত্ব হীন।
চিত্রার উকিল বললো “মি লর্ড। আমার মক্কেল যদি অন্যপুরুষের সাথে লিপ্ত থাকে তাহলেও অপরাধী নয়। সুপ্রিম কোর্টের আইনানুসারে পরকীয়া বৈধ।” ১০২ ধারায় খোরপোশের আবেদন করলে বিচারে গৃহীত হলো। এককালীন ৫০ লাখ দিয়ে মিউচুয়াল ডিভোর্স হলো।
অবশেষে ৯০ দিন জেল হাজতে থেকে মা ও ছেলে ছাড়া পেলো।
এই ঘটনার পর হঠাৎ চিত্রার মায়ের এক প্রেমিক ঘরে এসে হাজির। চরিত্রহীনা মা পুরানো শয্যাসঙ্গী নিয়ে ঘর করতে লাগলো। ব্লাড টেস্ট রিপোর্ট অনুসারে দু’জনেই এইচ আই ভি পজিটিভ।
চিত্রা মায়ের ঘরে এসে এবং বিপুল অঙ্কের টাকা পেয়ে নিত্য নতুন পুরুষ সঙ্গী নিয়ে উচ্ছৃখল জীবন ভোগ করতে লাগলো।
(২)
অরিত্র একদিন অফিস থেকে ফেরার পথে কাকলিকে গাড়িতে তুলে ঘরে নিয়ে এলো। সমস্ত ঘটনা কাকলিকে অকপটে শুনালো।
অরিত্র বললো “বলো কাকলি। এরপরও কী তুমি আমাকে ভালোবাসবে? আমাকে কী তুমি বিয়ে করবে?”
কাকলি অরিত্রর হাত ধরে বললো “আমি তোমাকে প্রথম যেদিন দেখি সেদিন থেকে আজও তোমাকেই ভালোবাসি। আমার দেহমনে তুমি ছাড়া আর কোনো পুরুষ আসেনি। আর আসবেও না। আমি রাজি।তোমাকেই বিয়ে করবো।’
মহাধুমধামে অরিত্র কাকলির বিয়ে হয়ে গেলো।
এখন শাশুড়ি সাবিত্রী দেবী কাকলিকে পেয়ে খুব খুশী। কাকলি সাবিত্রী দেবীকে নিজে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেল। সুস্থ হলো। সাবিত্রী কাকলিকে নিজের মেয়ের মতো আদরে আবদারে রাখল। অরিত্র কাকলির গান, পেনটিং ও লেখালেখি যাতে বন্ধ না হয় তার উপযুক্ত সহায়তা করলো। কাকলিকে পেয়ে সুখে দিন কাটাতে লাগালো।
———————–
“সংসার সুখের হয় রমনীর গুণে
রমনী সুন্দর হয় সতীত্ব গৌরবে।”