নাটক- আনন্দ আশ্রম

“আনন্দ আশ্রম “
– রাখী চক্রবর্তী

 

 

চরিত্রায়ণে ****

* ডক্টর দেবনাথ
* সিস্টার ফরিদা
* চঞ্চল রায়,
* মধুমিতা রায়
*সবিতা দেবী (চঞ্চল রায়ের মা )
* পাঁচটা বাচ্চা ছেলে

***************

হুম হু হু হু হু হুম আবহ সংগীত

সিস্টার ফরিদা — ডক্টর,, পেশেন্টের আঙুলটা কেঁপে উঠল।ইয়েস ডক্টর পেশেন্টের জ্ঞান ফিরবে ।

—ডক্টর তমাল দেবনাথ পেশেন্টের মাথায় হাত রেখে বললেন, এমন মিরাকেল হয় না বলেই চলে ।ভগবান আমাদের সহায় আছেন তা না হলে পেশেন্টকে বাচানো তো যেত না ,, ।
আচ্ছা সিস্টার মিউজিক থেরাপির কথা আপনাকে কে বলেছে আই মিন আপনার মাথায় কিভাবে এলো।আপনার জন্যই তো আজ পেশেন্ট সাড়া দিল।
—ডক্টর দেবনাথ আমি পেশেন্টের মার মুখে শুনেছি চঞ্চল বাবু গানের জগতে থাকতে ভালবাসেন।গান ছাড়া তিনি নাকি কিছু ভাবতেই পারেন না,সুমধুর কণ্ঠস্বর ভগবান ওনাকে দিয়েছেন,
তাই আমি একবার শেষ চেষ্টা করে দেখলাম ।গানের সুর টা শুনেই চঞ্চল বাবুর হাত কেঁপে উঠল। উনি সুস্থ হয়ে উঠবেন তাই না ডক্টর দেবনাথ ।
— হ্যা ,
তবে একটা রিস্ক আছে ।জ্ঞান ফিরে যদি সেই মর্মান্তিক ঘটনা আবার মনে করেন তবে হার্ট ফেল হবার সম্ভাবনা আছে ।আমি একটা ইনজেকশন দিয়ে দিচ্ছি ।আস্তে আস্তে সব স্বাভাবিক হবে ।

— ডক্টর চঞ্চল বাবুকে বাঁচতে হবে ওনার মার জন্য, আমার জন্য !

—মানে ! কি বলছেন সিস্টার ?

–হ্যা ডক্টর, আমার ভাইয়ের ছায়া দেখেছি ওনার মধ্যে তিন দিন ধরে আমি ঘুমোতে পারিনি ।আজ ঘুমাবো ডক্টর ,আজ ঘুমাবো।

আবহ সংগীত

সিস্টার ফরিদা — মাসীমা আপনার ছেলের জ্ঞান ফিরবে আর কোন চিন্তা নেই ।এবার বাড়ি যান মাসিমা ।আপনাকে সুস্থ থাকতে হবে তো ছেলের জন্য ।

সবিতা দেবী—- হ্যা মা ,আমি বাচতে চাই বাবুর জন্য ।
কতো হাসিখুশি ছেলে ছিল আমার ।

সিস্টার ফরিদা —-কি এমন হয়ে ছিল মাসিমা যে আপনার ছেলের এই পরিণতি হল।

সবিতা দেবী–
সুখের সংসার ছিল আমাদের ।বৌমার খুনসুটি আবদার দিয়ে সকাল শুরু হতো আমাদের ,

(অতীতের দৃশ্যায়ন)

মধুমিতা রায় — ও মা,, কি বলছে শোন তোমার ছেলে
সবিতা দেবী—-বাবু তুই আবার বৌমার পেছনে লাগছিস

চঞ্চল রায় — কোথায় মা।তোমার বৌমা বলল এবারের জন্ম দিনে হীরের লকেট দিতে হবে ওকে ।তাই বললাম ,রাতে বাড়ির সমস্ত আলো নিভিয়ে রাখব।লাইটের বিলে কম টাকা দিতে লাগবে আমার টাকা বাচবে । আর হীরে তো ঝলমল করবে অন্ধকার হলে । হা হা হা ।

সবিতা দেবী —পাগল ছেলে ।

সকাল থেকেই শুরু হতো ওদের খুনসুটি । ওদের বিয়ের
একবছর ভালো ভাবেই কাটল।নিজেরা দেখেশুনে বিয়ে করেছিল ওরা।
হঠাত্ করে বৌমা পাল্টাতে শুরু করল।টাকা ,পয়সা গয়না এছাড়া আর কিছু জানতো না বৌমা ।অফিসে লোন নিয়ে একটার পর একটা জমি কিনছে বাবু।সব কিছুই হচ্ছে বৌমার নামে ।আমি সবটা জানতে পেরে বাবুকে বলেছিলাম নিজের নামেও কিছু রাখ ।
বাবু বলেছিল ,আমার তুমি আছো তো মা

সিস্টার ফরিদা— তারপর কি হল মাসিমা ?

সবিতা দেবী—- বৌমা একদিন এ বাড়ি ছেড়ে চলে গেল বাপের বাড়িতে।প্রথম প্রথম কিছু টের পাইনি । ভেবেছিলাম বাবুর সাথে বোধহয় মনোমালিন্য হয়েছে ,পরে ঠিক হয়ে যাবে
হঠাত্
বৌমা একদিন এ বাড়িতে এল ডিভোর্সের ফর্ম নিয়ে। বাবুকে সই করতে বলল।বাবু সই করল না।সব সম্পত্তি বৌমার নামে যে।শুধু এই ভিটে টা ছাড়া ।বাবু
ভেতর ভেতর খোজ নিয়ে জানতে পারল বৌমা অন্য ছেলের সাথে মেলামেশা করছে ।বৌমা তখন বাপের বাড়িতেই থাকত।
যেদিন মর্মান্তিক ঘটনাটা ঘটেছিল সেদিন বাবুর জন্ম দিন ছিল ।আমি পায়েস করলাম ।তারপর মন্দির যাব বলে তৈরি হচ্ছি এমন সময় ফোন এল বৌমা নাকি খুব অসুস্থ ।বাবু অস্থির হয়ে উঠল এ খবরে।কি করবে ভেবে পাচ্ছিল না।তারপর রওনা দিল বৌমার বাপের বাড়ি উদ্দেশ্যে ।তারপর যা হল তা তো সব জানোই মা।পায়েস বাবুর মুখে তুলতে পারিনি মা।বাবুকে বাইক নিয়ে যেতে বারণ করেছিলাম,শুনল না আমার কথা,

আবহ সংগীত

চঞ্চল রায়. –মা মা
সবিতা দেবী –এই তো বাবু আমি।
চঞ্চল রায়—আমি বাঁচতে চাই না। ও বিশ্বাসঘাতক । আমাকে মিথ্যে কথা বলে ডেকেছিল ও,সই করার জন্য ডেকেছিল,

সবিতা দেবী — শান্ত হ বাবা ,চোখ খুলে চেয়ে দেখ বাবা ,তোর জন্ম দিনে ওরা এসেছিল কিন্তু তখন তো তুই,,

চঞ্চল রায়. –মা আমি কোথায় ? আমি বেঁচে আছি ! আমাকে ও মরে যেতে বলেছিল
সবিতা দেবী–ষাঠ বালাই, তুই বাচবি বাবা।
চঞ্চল রায়–কারা এসেছে মা
সবিতা দেবী–ঐ দেখ ।

বাচ্চা ছেলে—-শুভ জন্ম দিনের শুভেচ্ছা দিলাম দাদা

চঞ্চল রায়–আরে তোরা আয় আয়।
তোদের মুখে হাসি নেই কেন? চোখে জল তোদের,কেন রে, কি হয়েছে আমার?
বাচ্চাদের মধ্যে একজন— তোমার জন্য তো আমাদের মতো অনাথ গুলো বেঁচে আছে এখনও,তুমি ভালো হয়ে যাবে,আমাদের প্রার্থনা ভগবান শুনবে দেখো,

আবহ সংগীত

চঞ্চল রায়—
মা, আমি বাঁচার রাস্তা পেয়ে গেছি মা।এদের নিয়ে আমি নতুন করে জীবন শুরু করবো তুমি থাকবে তো আমার পাশে ।আমি এই অনাথ শিশুদের নিয়ে আমার বাড়ি টাকেই আশ্রম বানাব। নাম দেবো “আনন্দ আশ্রম” ।ওদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করবো।আমি পারবো তো মা।
সবিতা দেবী—ভগবান তোর সহায় আছে তুই পারবি বাবা,
ব্যাক গ্রাউন্ডে গান,,

“তিনটি মন্ত্র নিয়ে যাদের জীবন সত্যম শিবম সুন্দরম দুঃখের পৃথিবীটা তাদের কাছে এক আনন্দ আশ্রম “
এক বছর পর,

চঞ্চল রায়— মা আজকের খবরের কাগজে” আনন্দ আশ্রম” নিয়ে আরটিকেল বেরিয়েছে।এক বছর পূর্ণ হল। আমি ভাবতে পারিনি আমার আশ্রম পাঁচ জন শিশু থেকে এক বছরে সত্তর জন হবে ।সব তোমার ভালবাসা ও যত্নতে হয়েছে মা।

জনৈকা মহিলা –গ্রিলের গেট ধরে ,মা মা
সবিতা দেবী—কে ডাকলো রে বাবু আমাকে ।গলার আওয়াজ টা চেনা চেনা লাগল।

চঞ্চল রায়— বাচ্চা কোলে নিয়ে এক মহিলা এসেছেন মা।
যাও মা দরজা টা খুলে ভেতরে নিয়ে এসো ওনাকে
—জনৈকা মহিলা—মা আমাকে ক্ষমা করে দাও।
সবিতা দেবী—কে কে তুমি ?ঘোমটা খোল ।কে !

—-আমি মা।মধুমিতা
এই তোমার বংশধর ।
আমি থাকতে আসেনি ।ওকে ফেলে দিও না মা।ওর কষ্ট আমি দেখতে পারব না।ভুল আমি করেছি। তার শাস্তি পাচ্ছি আমি,
চঞ্চল রায়—কে এসেছে মা?
চলে যেতে বলো মা।
আমি সহ্য করতে পারছি না।
মধুমিতা—আমি থাকতে আসেনি ।এ আমাদের সন্তান ।
ওকে গ্রহন করো।
আমি বাধ্য হয়ে এখান থেকে চলে গেছিলাম ।তোমাকে ভালবাসার আগে অন্য একজনের সাথে আমার সম্পর্ক ছিল ।আমাকে ভয় দেখিয়ে ও সব কাজ করিয়েছে।তোমাকে ছেড়ে যাওয়ার সময় আমাদের সন্তান আমার গর্ভে বড় হচ্ছিল ।ওই রাসকেল টা আমার সব সম্পত্তি নিয়ে আমাকে ছেড়ে পালিয়ে গেছে ।আমি আজ অনুতপ্ত ।জানি এ ভুলের কোন ক্ষমা নেই ।আনন্দকে গ্রহন করবে না?ও তোমার সন্তান ।
সবিতা দেবী–আনন্দ আশ্রমে আনন্দ এসেছে বাবা কোলে নে একবার সব দুঃখ ভুলে যাবি, নে কোলে নে।
চঞ্চল রায় আনন্দকে কোলে নিয়ে আদর করছে
আর ব্যাক গ্রাউন্ডে গান হচ্ছে
“তিনটি মন্ত্র নিয়ে যাদের জীবন সত্যম শিবম সুন্দরম দুঃখের পৃথিবীটা তাদের কাছে এক আনন্দ আশ্রম”
সমাপ্ত

Loading

Leave A Comment