দেওয়াল
– সোমনাথ বেনিয়া
ছেলেটি একটি বেসরকারী কোম্পানিতে কাজ করে। ইদানীং তার কাজের রিপোর্ট খারাপের দিকে যাচ্ছে কারণ তার জন্মগত শারীরিক ত্রুটির জন্য। বাইরে থেকে খুব একটা বোঝা না গেলেও সে মেরুদণ্ডের ডিফর্মেটিসে সব সময় একটা যন্ত্রণা অনুভব করে। প্রথম-প্রথম এতটা শরীর খারাপ অনুভব করেনি কিন্তু যতদিন যাচ্ছে তার এই সমস্যা নানান অসুবিধ সৃষ্টি করছে। যেমন কোনো কিছুতে হেলান দিয়ে বসলে তার একটু আরাম হয়। কিন্তু সব সময় তা পাবে কোথায়। সহকর্মীদের সাথে গল্প করতে গেলে তাদের অনেকেই চেয়ার ছেড়ে দেয় বসার জন্য। কিন্তু বাসে-ট্রামে তো আর তা হবে না কারণ সে তো ফিজিক্যালি হ্যান্ডিক্যাপ্টড নয়। সমস্যা তো ভিতরে। কে বাইরে থেকে বুঝবে যতক্ষণ না বলা হয়। এখন লোকে অনেক চালাক হয়ে গেছে, বললে, বলবে – যেই বাসে উঠলো, অমনি শরীর খারাপ হয়ে গেল। সে আবার বেশিক্ষণ দাঁড়াতে পারে না। ফলত কিছুটা ফাঁকা বাস দেখে উঠে, রাস্তা ভেঙে-ভেঙে বাড়িতে ফেরে। এতে ভালোই খরচ বাড়ে যাতায়াতের ক্ষেত্রে। কিন্তু তাকে এটা করতে হয় বাড়ির একমাত্র রোজগেরে বলে।
একটা সময় দাঁড়ালো যে তাকে চাকরি ছেড়ে দিতে হলো। শারীরিক সমস্যায় তার দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল। উর্দ্ধতন কতৃপক্ষ সব রকম চেষ্টা করেছিল যাতে চাকরিটা থাকে কিন্তু সে তো শয্যাশায়ী হয়ে পড়লো। এখন উপায়! সহকর্মী বন্ধুদের বলতো – আমার তো জন্মলগ্ন থেকেই দেওয়ালে পিঠ ঠেকে আছে। আর কী হবে? এখন সংসার চালাতে গিয়ে তার বউকে কাজে নামতে হলো। কিন্তু তার বউয়ের ভালো-ভালো সাজগোজ ও ঘন ঘন ফোন আসায় সে বুঝেছিল এখন শুধু শরীর নয়, নিজের মনটাও দেওয়ালে ঠেকে গেছে …