বাঘ-বিধবা
– সুমিত মোদক
জল-জ্যান্ত মানুষটাকেই মানুষখেকো নিয়ে নিলো;
জল-জ্যান্ত মানুষটাকে …
মানুষটা অন্য বারের মতো গিয়ে ছিল
কাঁকড়া ধরতে, খাঁড়ি পথে;
ফেরার দিনও হয়ে এসে ছিল;
ফিরতে পারলো না আর …
রাতের অন্ধকারে নৌকা থেকে তুলে নিয়ে গেল
মানুষখেকো;
সঙ্গীরা যখন বুঝতে পারে তখন আর কিচ্ছু করার নেই;
কিচ্ছু করার থাকে না ওই খাঁড়ি পথে,
জীবন ও মৃত্যুর মাঝখানে দাঁড়িয়ে;
পঞ্চায়েত বাবুরা বলে ছিল টাকা দেবে;
বাঘ-বিধবার টাকা …
কিন্তু, সে টাকাও জুটল না কপালে;
কাগজ নাকি ঠিকঠাক নেই;
যে মানুষটার শরীরের একটুকরোও পাওয়া যায়নি,
তার কাগজ হবে কিভাবে!
কিভাবে কাগজ করতে হয় বাবু!
বাঘ-বিধবার কাগজ!
জল-জ্যান্ত মানুষটাকেই মানুষখেকো নিয়ে নিলো;
জল-জ্যান্ত মানুষটাকে …
আমি তো শাঁখা-সিঁদুর বন্ধক রেখে ছিলাম
বনবিবির কাছে;
সেও তো আমাকে ফিরিয়ে দিতে পারলো না
আমার মানুষটাকে,
খোকার বাপটাকে!
খোকা এখন স্কুলে যায়;
খোকা এখন স্কুলে খায় …
লেখাপড়া শিখিয়ে খোকাটাকে মানুষ করতে হবে;
মস্ত বড় মানুষ;
সত্যিকারের মানুষ;
সে জন্য আমার নদীতে যাওয়া,
মিন ধরা;
লুকোচুরি খেলা কুমিরের সঙ্গে
প্রতিদিন,
প্রতিনিয়ত;
খোকাটাকে মানুষ করতেই হবে;
করতে হবে পঞ্চায়েত বাবু …
তাহলে ওর বাপের মতো ঢুকতে হবে না আর
খাঁড়ি পথে;
তাহলে বাঘ-বিধবারাও নামবে না আর নদীতে;
বাবু,
এখানকার জল-জ্যান্ত মানুষদের
মানুষখেকো তুলে নিয়ে যায় গভীর বনে;
এখানকার জল-জ্যান্ত মানুষদের
মানুষখেকো টেনে নিয়ে যায় নোনা জলে;
এ বাদাবনের, এ কাদাজলের রোজনামচা বাবু,
রোজনামচা।
খুব ভালো লাগল। কবিতার প্রতি ছত্রে যেন বাঘ বিধবার আর্তিনাদ প্রতি ধ্বনিত হয়…