পকেটমার
– সুজিত চট্টোপাধ্যায়
প্রলয়, বাস থেকে নেমেই বুঝলো, মানিব্যাগটা পকেটে নেই। সেটা নির্ঘাৎ নর্দমায় গড়াগড়ি দিচ্ছে, আর তার পেটের ভিতর রাখা টাকাগুলো, কোনও সুনিপুণ খল হস্ত শিল্পীর সেবায় নিয়োজিত। পকেটমার।
এই মুহূর্তে সে সাময়িক কপর্দকহীন, ভারতীয় সংখ্যা গরিষ্ঠ শ্রেণীর একজন।
মন খারাপ। স্বাভাবিক। খুইয়ে কেইবা খুশিতে তা থৈ নেত্য করে ।
বাড়ি সামনেই। হেঁটে এখান থেকে মিনিট পাঁচেক বড়জোর। সুতরাং সমস্যা সেটা নয়। সমস্যা মালতী। ও জানতে পারলে আর রেহাই নেই।
তার উচ্চস্বরে ধারাবাহিক ভাবে দেওয়া সাবধান বাণীর এহেন অবমাননা সে কিছুতেই মেনে নেবে না, সে বিষয়ে কোনও সংশয় নেই এবং তার কী নিদারুণ পরিনতি হতে পারে সেই কথা ভেবে, প্রলয় আগামী মিনিট পাঁচেক ভেবে নিতে চেষ্টা করতে থাকলো, মালতীকে কী ভাবে ম্যানেজ করবে।
ট্রেনে, বাসে, রাস্তায় নিজের পকেট সামলে চলবে, বুঝেছ হাঁদারাম। মালতী প্রলয়কে ভালবেসে নাকি অবহেলে মাঝেমধ্যে এই নামেই ডাকে। আজ বুঝি সেই নাম সার্থক হলো। দীর্ঘশ্বাস।
এখন সন্ধ্যে সাতটা। মালতী দু’কাপ চা ইত্যাদি নিয়ে প্রলয়ের মুখোমুখি বসে। চা মিশিয়ে সারাদিনের জমানো কথাগুলো আওড়ায়। প্রলয় শোনে। হুঁ, হাঁ করে উত্তর দেয়। কিন্তু আজকের ব্যাপারটা একটু অন্যরকম হলো।
চায়ের পাত্র যে শব্দে টেবিলে নেমে এলো, তা সত্যিই বিরল। প্রলয় বুঝলো এটা ঝড়ের সিগনাল। এবার আসল তরবারি বেরবে। প্রলয় রেডি হচ্ছে। যেন ব্যাটসম্যান শচীন টেন্ডুলকার রেডি হচ্ছে শ্যেনওয়ার্নের ঘুর্ণির মোকাবিলা করতে। কোনও ভনিতা নয়, মালতীর ফুলটস..তোমার মানিব্যাগ কোথায়?
প্রলয়ের মাথায় আসেনা, ওর পার্সোনাল কতকিছু এদিক ওদিক হয়ে যায়। সিগারেটের প্যাকেট, লাইটার, চশমা, মোবাইল ফোন, কই, তখন তো এইভাবে তেড়ে এসে জেরা হয় না!
প্রলয় জানতো এটা হবে। আশঙ্কা ছিল। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি হবে, সেটা হিসেবে ছিল না।
মালতীর প্রতিদিনের রুটিনের মধ্যে এটা একটি বিশেষ কাজ, প্রলয়ের মানিব্যাগ হাতড়ানো। এই বিশেষ কাজটি সম্ভবত অধিকাংশ ঘরেই প্রাচীনকাল থেকেই প্রচলিত। আজও সেই প্রচলিত কাজের কামাই ছিল না। কিন্তু কপাল মন্দ। হাঁড়িও নাই মাংসও নাই। সুতরাং কামাইও নাই। মেজাজ গেল বিগড়ে। প্রথমে বিড়বিড়, তারপর আস্ফালন। ঢ্যাঁড়স একটা। হাঁদারাম। লোকে পকেট মারছে উনি মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছেন। পকেটমার ব্যাটা পকেট মারার আগে মুখ দেখেই বুঝতে পারে, কে চালাক আর কে ক্যাবলা। নইলে এতো লোক থাকতে..ছ্যা ছ্যা.. ভ্যাবলা কোথাকার!
এরপরে? চালাও হাত। কিল চড় ঘুসি, চুলের মুঠি, সব একত্রে। গেরিলা আক্রমণ।
প্রতিবেশীদের জানালায় কৌতুহলী মুখের সারি। কেবল একটি মহিলা কন্ঠ আকাশ বিদীর্ণ করছে।
নেক্সট সীন
ডাক্তারবাবুর বাড়িতে আগমন। মাথায় ব্যান্ডেজ। ইঞ্জেকশন, পেইন কিলার ট্যাবলেট।
না না চিন্তা নেই। ওটা প্রলয়ের জন্য। প্রলয় ঝড়ের পরের অবস্থা।
দূর বাবা, মাথায় অত জোরে কেউ মারে! একটু আস্তে মারলে কী এমন ক্ষতি হতো? বউগুলো এতো অবুঝ না..কী বলবো! ধুস..
শালা পকেটমার।