অণু গল্প

অণুগল্প- সব শেষ

সব শেষ
– রাণা চ্যাটার্জী

 

 

“আরে চাচা মুঝে ড্রাইভ করনে দো না, আপকা নিঁদ আ গয়া”- খলিল দু’ চার বার অনুরোধ করলো ড্রাইভারের আসনে বসা বছর পঞ্চাশের তামিল ড্রাইভারকে। তামিলনাড়ুর নাম্বার প্লেটের বাসটা ত্রিশ জন পরিযায়ী শ্রমিক নিয়ে গত কাল ভোরে  বেরিয়েছে । একজন ড্রাইভার সঙ্গেই আছে, সে কাল প্রায় সারাদিন একাই চালিয়ে এতটাই কাহিল, রাতে ধুম জ্বর।

ভোর চারটের সময় কোনো এক অজানা অচেনা জায়গায় হাই রোডের ধারে বাস থামলো। ঝাঁকুনিতে ঘুম ভাঙতেই চাচা সকলকে নেমে ব্রাশ প্রাতকর্ম করার নির্দেশ দিতেই নজরে পড়ল একটা টহলরত ওড়িশা পুলিশের ভ্যান এসে খবরাখবর নিচ্ছে। দু’জন কনস্টেবল ফ্লাস্কের গরম চা, পাঁউরুটি, কলা প্রভৃতি দিয়ে দায়িত্ব পালনের দারুণ নজির রেখে গেল। বাসযাত্রীর প্রায় কুড়ি জনই নির্মীয়মান বহুতলের রাজমিস্ত্রি ও জোগাড়ে। বাকিরা চেন্নাইয়ের কাপড় কলের শ্রমিক। দীর্ঘ অপেক্ষা ও মানসিক বঞ্চনায় কেন্দ্র রাজ্য দড়ি টানাটানি শেষে ক্লান্ত বিধ্বস্ত চেহারায় শ্রমিকদের বাড়ি ফেরা আর কিছু ঘন্টার অপেক্ষা।

চা খেয়ে ক্লান্তি সাময়িক কাটলেও আবার চোখ জুড়ে ড্রাইভার চাচার ঘুম নামতেই পেছনের সিটে বসা বছর কুড়ির খলিলের অনুরোধে সিট ছাড়লো চাচা। গ্রামের মোরাম রাস্তায় ট্রাক্টর চালানোয় অভ্যস্ত হাত আজ ভোরের শূন্য হাই রোডে স্পিড তুলতেই অসুস্থ ড্রাইভারটি হাঁ হাঁ করে সাবধান করে উঠলো, ক্লান্ত চাচা ঘুমিয়ে গেছে। খলিলের মনের মধ্যে বাড়ি ফেরার আনন্দ, ভাইপোর মুখ ভাসছে তার ওপর কাল ঈদ উৎসব পালন।

হঠাৎ এক বিকট শব্দ-ধোঁয়ায় একাকার, কিচ্ছুটি চোখে দেখা যাচ্ছে না। পুলিশ এম্বুলেন্স স্থানীয় উদ্বিগ্ন লোকজনের ভিড় বাড়ছে, সবার মুখে চরম আফসোস। চাপ চাপ রক্তে এতগুলো মানুষের মৃত দেহে আচমকা বাতাস ভারী করেছে। একটা ভারী ডাম্পার সজোরে এসে ধাক্কা মেরেছে আশি স্পিডে ছোটা এই পরিযায়ীদের বাসটাকে। যে যেখানে খলিল, চাচা কেবিনে আর দু’জন সহ এতজন শ্রমিকের বেশির ভাগই স্পট ডেথ। বাকিদের আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভদ্রক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও বাঁচার আশা খুবই ক্ষীণ। বাড়ি ফেরার এত অপেক্ষা, বাসে করে এত দীর্ঘ যাত্রা, চাচাকে সাহায্য করতে যাওয়া সদ্য গোঁফ বেরুনো ছেলেটার কপালের দোষে কি যে হয়ে গেল । এতগুলো মানুষের বাড়ির লোকজনদের দুশ্চিন্তা যেন ঘূর্ণাবর্তে তলিয়ে গেল।

Loading

2 Comments

Leave A Comment

You cannot copy content of this page