ঊন পঞ্চান্ন
– উজ্জ্বল দাস
কাঁপা কাঁপা শরীর নিয়ে টলতে টলতে তিনি ঢুকলেন। পুজোয় বসবেন। কি মূর্তি বা কোন ঠাকুরের পুজোতে বসবেন সেটা জানেন না অবিনাশ বাবু। সে যাই হোক, তেত্রিশ কোটি দেবদেবীর কোন একজন হবেন নিশ্চয়ই। মদ্দাকথা কাজ হলেই হলো। মানে ঠাকুরও ঘুষ খায় তাহলে! এটা বুঝেছে অবিনাশ সিনহা। ছেলেটার মাথা একদম গেছে ইদানিং। একটুও কথা শুনছে না। এই উনিশেই বিয়ে পাগলা হয়ে উঠেছে। উচ্চ মাধ্যমিক দিয়ে একটা জালি মেয়ের খপ্পরে পরে কি যাতা অবস্থা। বলছে আজ- কালই নাকি ওকে পিঁড়ি কিনে দিতে হবে। সেই পিঁড়িতে বসেই বিয়ে করবে ছেলে।
ষাটোর্ধ্ব কাঁপা বুড়ি, উচ্চতা সাড়ে পাঁচ ফুট হবে, কপালে লাল তিলক কেটে, বোম বোম করতে করতে ঘর ভরতি লোকের মাঝে কাঁপতে কাঁপতে এসে ধমাস করে বসে পড়লো মাটিতে। সে কি গোঙানি। লাল পেড়ে সাদা শাড়ি, সে এক ভয়ানক চেহারা। চার দিকে ধুপ ধুনো তে ঘরে ধোঁয়ায় ধোঁয়া। সঙ্গে দুটো চ্যাংকা ছোঁড়া। তাদের দুজনেরই গায়ে উত্তরীয় আর পরণে ধুতি। ধুতি গুলো যে কোন এক সময়ে সাদা রঙেরই বানানো হয়েছিলো সেটাও বোঝবার জো নেই। আর বুড়িমার চ্যালা বলে কথা। বাবারে সে কি রোয়াব তাদের। ওদের গায়ের গন্ধে যেন ধুনোর গন্ধই চাপা পড়ে যাচ্ছে।
অবিনাশ সিনহা বেশ বুঝতে পারছে বাইরে কেন বড় বড় করে লেখা আছে
“শিশুদের প্রবেশ নিষেধ”।
মনে মনে ভাবছে “শালা জমপেশ জায়গায় এসেছে। হেঁ হেঁ এবার ঐ মেয়েটা মানে পত্রালী না চৈতালি হাড়ে হাড়ে মজাটা টের পাবে বাপধন। কার ছেলের পেছনে লেগেচো জানো না তো!”
(দুই)
হু হু হু হু করে ধুনোর ধোঁয়া বেড়ে চলেছে। চার দিকে মুহুর মুহু উলুধ্বনি দিচ্ছে সকলে। চ্যাংকা গুলো সজোরে কাঁপা বুড়িকে বাতাস করে যাচ্ছে। একজন একটা বাজখাঁই আওয়াজের কাঁসর দমাদ্দম পিটিয়ে চলেছে প্রাণপণে। আর বুড়ি ততক্ষণে ভরে পড়েছে। সঙ্গে গোঙানি।সে কি নাকের আর গলার আওয়াজ। নাসিকা গর্জন যেন কামানের গোলার মতো বেরোচ্ছে। হুর র র র র র……ফুর র র র র দুনিয়া কাঁপানো চিরবিরোনি আওয়াজ। পুরোনো কড়ি বড়গার বাড়ি। নিচু নিচু খড়খড়ির জানালা। কেঁপে কেঁপে উঠছে সব, বাপরে। সব কটাই আলতো করে ফাঁক করা আছে। যাতে কেউ ধোঁয়ায় কষ্ট পেলে জানলা দিয়েই তাকে তৎক্ষণাৎ সটাং বাইরে ফেলে দেওয়া যায়।
হেঁ হেঁ এ যে সে বুড়ি নয় স্বয়ং কাঁপা বুড়ি বলে কথা।
অবিনাশ সিনহা তো আনন্দে আত্মহারা। মনে মনে ভাবে লে হালুয়া এতো টাও তো ভাবেনি। এ যেন পুরো চেঙ্গিজ খাঁ। আপিসের বিকাশ বাবু ভালো একটা পাত্তা দিয়েছে বটে। এবার একে একে সবাই তাদের সমস্যা বলবে, আর কাঁপা বুড়িও মন্ত্রপুত মাদুলি, মন্ত্রপুত টোটকা দিয়ে সব সমাধান করবে। আর যদি কাউকে কিছু নিয়ে আসতে বলে থাকে তো সেগুলো দিলেই বুড়িমা মন্ত্র পড়ে দেবে। সেগুলো যেভাবে কাজে লাগাতে বলা হবে সে ভাবে ব্যবহার করলেই ব্যাস, কেল্লাফতে।
“ও টুনির মা তোমার টুনি কথা শোনে না
যার তার লগে ডেটিং করে আমায় চেনে না”
ওমা একিরে বাবা। ধর্মের স্থানে এসব আবার কি। অবিনাশ বাবু তাকিয়ে দেখে এক ছোঁড়ার মোবাইলে বেজে উঠেছে হঠাৎ। আর বুড়িমা চোখ বড় বড় করে যেই তাকিয়েছে ছোঁড়া তো ভয়েই মরে। তবে কথা গুলো সবই শোনা গেল সেই মোবাইলের স্পিকারে।
–হ, হল ল।
–বলতাসি আপনেগো কবে আইবেন।
–কেডা কয় কেডা।
–বেহালা থিকা হালায় দুকানদার কইতাসি। ওই ধুপ, ধুনা আর মিষ্টির লোইঘা কিসু বাকি আসিল।
–অস্যা। অহন সেম্বারে আসি। কাল বেহালায় সেম্বার আসে। যহন জামু, কথা কইমু।
বলে ফোন টাকে কেটে দিলো। আবার বাজখাঁই কাঁসর টা নিয়ে উন্মাদের মতো পেটাতে শুরু করলো। অবিনাশ বাবু বুঝলো এই চ্যাংকা ছোঁড়াটা হলো আসলে বিকাশ বাবুর মতো পারচেজ ম্যানেজার। উফ্ফ! কি ডেডিকেশান। তাই এর সঙ্গে বিকাশ বাবুর আলাপ। তবেই না বিকাশ বাবু এখানকার পাতা দিতে পারেন।
(তিন)
পালানো কেস নিয়ে প্রথমেই একজন মহিলা তার নাম নাকি ঝাঁসি মিষ্টিরানি। বুড়িমার কাছে এসে, সে তো কেঁদে কেটে একসা। কি! না, তার নাকি মেয়ে পালিয়েছে। এক হপ্তা ধরে বুড়িমাও কিছু করতে পারেনি। এবার বুড়িমা বলেছে আসল অস্ত্রটা ছাড়বে। সেই আশায় ঝাঁসি দেবী থানায় ডাইরি ও করেননি। আচ্ছা বেশ। আরো কটা দিন দেখে নাকি তারপর পুলিশে খবর দেবেন। কারণ এই সমস্ত অপহরণ বা পালিয়ে যাওয়া কেস গুলোতে পুলিশকে জানালে নাকি বুড়ির ওষুধ আর কাজ করে না। ওটা ডবল ধামাকা হয়ে যায়। আর তাতে কিনা মেয়ে, পাচার ও হয়ে যেতে পারে বিদেশে। সে তো আরো ভয়ের ব্যাপার। তা এখন সেই ঝাঁসি দেবীর জন্য ওষুধ তৈরি করে দেবে বুড়িমা।
ঝার- ফুঁক- তুক -তাক, অনেকক্ষণ ধরে করে একটা হরলিক্স এর শিশিতে কিছু কালো কালো গোল মরিচ আর একটু জল মিশিয়ে তাকে দেওয়া হলো। আর বলা হলো সেটা যেন বড় বাথরুম থেকে মানে ই-য়ে করে এসে একদম কেউ ছুঁয়ে না ফেলে। বুড়িমা তো ঠক ঠক করে খুব কাঁপছে। হাত থেকে এই বুঝি শিশি পরে যায় পরে যায়। যাই হোক, সেই ঝাঁসি দেবী তো কাঁদতে কাঁদতে একটা ছোঁড়ার হাতে তিনশো এক টাকা দক্ষিণা স্বরূপ গুঁজে দিয়ে ঘর থেকে চুপ চাপ অশ্রু বিসর্জন করতে করতে বেরিয়ে গেলেন। আগে বাড়ি গিয়ে ওই জল সারা বাড়িতে ছিটিয়ে দিতে হবে। আর পাশের বাড়ির লোকজন যাদেরকে সন্দেহ হয়, তাদেরকে ও একটু ওই মন্ত্রপুত জল শুকিয়ে দিলেই চলবে। ব্যাস এটাই বুড়িমার চরম অস্ত্র। নাহলে পুলিশেই ভরসা রাখতে হবে এর পর। তবে এ নাকি অব্যর্থ মহৌষধ।
(চার)
এর পরে যার লাইন তিনি বছর পঞ্চান্নর এক জন প্রেমিক ভদ্রলোক। নাম ঝিনকা চিকু চন্দ। নাদুস নুদুস চেহারা। চশমা পরিহিত ভদ্রলোকের সখ টি ষোলআনা। সে আবার বশীকরণের জন্য মাস দুয়েক ধরে হত্যে দিয়ে পরে আছে বুড়িমার দরজায়। কাজও নাকি বেশ এগোচ্ছে তরতরিয়ে। তার দাবী হচ্ছে একটা মাল কিছুতেই পোটছে না, রোজ একই বাসে অফিস যাবার সময় দেখা হয়। কিন্তু ওই টুকুই, ব্যাস। প্রথম প্রথম নাকি একটুও তাকাতো না, হপ্তা খানেক হলো সিট খালি থাকলে পাশেও এসে বসছে। স্বভাবতই বুড়িমার ওপর তার বিশ্বাস এখুন তুঙ্গে। মহিলার ওপর আকৃষ্ট হওয়ার একমাত্র কারণ হলো তার নাকি কালো পিঠে মস্ত বড় আঁচিল আছে। সেটাই নাকি ঝিঙ্কু বাবুকে আকৃষ্ট করেছে। তা ভালো কথা।
তাকে গতবার বলা হয়েছিলো শাড়ির আঁচল বা দোপাট্টার এক টুকরো সুতো, যেন তেন প্রকারেণ নিয়ে আসতে হবে। আর সেটা যদি একবার বুড়িমা পড়ে দেন তো আর দেখে কে। সেই নাদুস ভদ্রলোক তো খুব উত্তেজনায় ফুটছে।
এবার বুঝি পটলো বলে।
এবার বুঝি পটলো বলে।
তার কথায় যেই নাকি গত শুক্রবার এসে পাশের সিটে বসেছে ব্যাস কায়দা করে সেই সুতোয় টান। আরেকটু হলেই ধরা পড়ে যাচ্ছিলো আর….কি। মোটা ধুমসো মহিলা তেড়ে ফুঁড়ে এসেছিলো দাঁত বের করে। যাইহোক সে যাত্রায় বুড়িমার ওপর অগাধ ভরসা রেখে একটু মুচকি হাসাতেই রক্ষা পেয়েছিলেন। নাহলে কানের দু ইঞ্চি নীচে যা জোর খেতো না মাইরি ঝিঙ্কু চন্দ। এই যাত্রায় বেঁচে গিয়ে বুড়িমার ওপর বিশ্বাসের বহর হুর হুর করে ইলাস্টিকের মতো বেড়ে চলেছে।
এবার কাঁপা বুড়িমা স্বযত্নে চুরি করে আনা সুতোটায় মন্ত্র পড়বেন বলে তৈরি। আবার নাসিকা গর্জন শুরু। অবিনাশ বাবু মনে মনে ভাবছে জিও গুরু, মানে কথা, এমন একজনের সন্ধান কেন যে বিয়ের আগে পায়নি। উফফ তাহলে তো সেই ফাটাফাটি দেখতে মেয়েটাকেই বশীকরণ করা যেত। বলা নেই কওয়া নেই হঠাৎ হাত ফস্কে বেহাত হয়ে যেত না।
পুরনো চটকে যাওয়া প্রেম নিয়ে ভাবতে ভাবতে একটু অন্যমনস্কই হয়ে পড়েছিলেন অবিনাশ বাবু। এমন সময় হাতের ওপর একটা সজোরে পায়ের চাপে সম্বিৎ ফিরলো। তাকিয়ে দেখেন ঝিঙ্কু বাবু মাটিতে পরে গোঁ গোঁ করে গোঙাচ্ছে, খেয়ালই করেনি অবিনাশ বাবু। ওরে বাবা! একি রকম ওষুধ। বুড়িমা ঝিঙ্কু বাবুর এতো বড় দশাসই চেহারাটার ওপর চড়ে বসে তর্জন গর্জন করছেন আর স্যাঙাত গুলো লম্ফ ঝম্ফ করে দেদার মজা লুটছে সঙ্গে বাজখাঁই কাঁসর টা যার পর নাই জোরে পিটিয়ে চলেছে। বাকিদের অবস্থাও তথৈবচ, কপালে ঘন ঘন হাত ঠেকিয়ে চলেছে। কেউ কেউ দেয়ালেও জোরে জোরে মাথা ঠুকে ভরপুর আশীর্বাদ নেবার চেষ্টা করে চলেছে।
এই সব কান্ড দেখে অবিনাশ বাবুর এবার একটু ভয় ভয় হলো। তাকেও এই বয়সে মারধর করবে নাকি কে জানে। মাল পটাতে এসে যদি কেউ মার খায় তাহলে ছেলের মাল হটানোর জন্য কি না করতে পারে। এই সব ভেবে একবার ভাবলো পালিয়ে যাবে। নাকি শেষ দেখেই যাবে। এমন সময় আবার সব স্বাভাবিক হয়ে যাওয়ায় সাহস করে নড়ে বসলেন। আর ঝিঙ্কু বাবু কোনো রকমে এইয়া বড় শরীর টাকে নিয়ে কাঁপা বুড়ির মন্ত্রপুত সুতোখানা একটা মাদুলিতে পুড়ে চড় চাপড় খেয়ে বেজায় আনন্দে সারা গায়ে ব্যাথা নিয়ে নড়তে নড়তে তিনশো এক দিয়ে ধম্ম স্থান ত্যাগ করলেন।
(পাঁচ)
এবার এলেন অদ্ভুত দর্শন ভদ্রলোক গোবর্ধন গুছাইত। ছেলের ঘাড় টাকে সপাটে ধরে বুড়িমার পায়ের কাছে বসালেন। সে কি ধমক চমক ছেলের ওপর। ওরে বাবারে বাবা। ছোট্ট ছেলে এমন করলে হয় নাকি। তার বক্তব্য–
“ছেলে নাকি পড়ে না
বিছানা থেকে নড়ে না।।
সারাদিন হোয়াটস অ্যপ
লেখাপড়ায় পুরো গ্যাপ।।
সাথে দোসর ফেসবুক
ছেলে বড় উজবুক।।
বাবা মাকে মানে না
কিল চড় ও থামে না।।”
নালিশ শেষে গোবর বাবু, থুড়ি থুড়ি, গোবর্ধন বাবু ছেলের পাশে বসলেন। বসতে না বসতেই কাঁপা বুড়ির ইশারায় কাঁসর বাজানো থামিয়ে চ্যাংকা ছোঁড়া টা সজোরে একটা চড় গোবর বাবুর বাঁ কানের নীচে কষিয়ে দিয়েই আবার এক পা তুলে বাজখাঁই কাঁসর টা নিয়ে কাজে লেগে পরলো। উরি শালা, কেলো করেছে। অবিনাশ বাবু তো দৃঢ় বিশ্বাস করতে শুরু করলেন যে তার কপালেও নির্ঘাত ক্যালানি আছে। পালাবে কিনা ভাবছে কারণ তার ও ছেলেকে নিয়েই সমস্যা।
বেচারা গোবর বাবু তো থাবড়া খেয়ে প্রায় কেঁদেই ফেলেছে । এদিকে বাপকে খামোখা ক্যালাচ্ছে দেখে আহাম্মক ছেলের তো আনন্দ আর ধরে না। কাঁপা বুড়ি কাঁপতে কাঁপতে এবার শুরু করলো,
–তোকে এই ধম্মস্থানে কাব্যি কত্তে কইছি!!
–না বুড়িমা।
–থালে কবিতা কইসিস ক্যান।
–ভুল হয়ে গেছে বুড়িমা।
–আমি বুড়ি?
–আজ্ঞে হ্যাঁ, মানে না বুড়িমা।
–ছেলেকে সামলাইতে পারিস না ক্যান।
–আচ্ছা আজ্ঞে, মানে….
এই সব আবোল তাবোল দেখে তো অবিনাশ বাবুর আত্মারাম খাঁচা ছাড়া হয় হয় আরকি। এই বয়সেও প্যান্টটা একটু ভিজে ভিজে ঠেকছে। হলদে পায়জামা পরে এলে হয়তো ভালো হতো, অন্তত ইয়ে টিয়ে হয়ে গেলে…..
পালানোর রাস্তা আছে কিনা এদিক ওদিক চোখ চালাচ্ছে। হঠাৎই মনে হলো ঘর থেকে দৌড়ে বেরিয়ে যায়। সোজা বাসে উঠে বাড়ি মুখো হয়ে ছেলেকে বুঝিয়ে সুজিয়ে যদি এ যাত্রায় পার পাওয়া যায়। এখানে বসে থাকলে কপালে নির্ঘাত চড় থাপ্পড় সঙ্গে তিনশো এক। হাত পা কাঁপছে এবার। বুড়ি কাঁপছে না অবিনাশ বাবু কাঁপছেন তাও বোঝা যাচ্ছে না। বাকি সবার কি অদ্ভুত অভিব্যক্তি। কারুর কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। পৃথিবী রসাতলে গেলেও ওরা কাঁপা বুড়ির স্বপক্ষে। চ্যাংকা গুলো ভুলেই গেছে রাত না দিন, ধুতি গুলো জায়গা মতো আছে কিনা সেটাও হয়তো বা মনে নেই।
(ছয়)
এই সব ভাবতে ভাবতে মনে মনে একটু শক্তি সঞ্চয় করেছে সবে, ঠিক তক্ষুনি কাঁপা বুড়ি হয়তো বুঝে গেছে যে এ মাল পালানোর চেষ্টা করছে। হেই হেই বলে এক হুঙ্কার দিয়েই আবার কাঁপা শুরু করেছে। অবিনাশ বাবু তো বেজায় ফাঁপরে। আশ্চর্য্য তো। এইবার, হ্যাঁ এইবার চরম শক্তি সঞ্চয় করেই এক লম্ফ দিয়ে উঠে দাঁড়িয়েছে অবিনাশ বাবু। কোনো রকমে এদিক ওদিক মেপে দরজার ছিটকিনি টাও খুলে ফেলেছে। যেই না বাইরে পা রেখেছে ব্যাস…. প্রপাত ধরনী তলে। মস্ত বড় উঁচু চৌকাঠে পা আটকে আছড়ে পড়লো মাটিতে। আর সঙ্গে সঙ্গে একটা চ্যাংকা এসে জাপটে ধরে পাঁজা কোলে করে তুলে পাশেই শুয়ে দিলো, দিয়েই চোখে মুখে জলের ঝাপটা আর ঝাপটা। একটু আধটু চোখ মেলে তাকাতেই প্রশ্ন ধেয়ে এলো–
–পালাইতে চিলি ক্যান।
–(খুব ভয়ে ভয়ে) আজ্ঞে না মানে একটু ইয়ে করতে ইয়েতে যাচ্ছিলাম মানে ভাবছিলাম….
–আঃ…তা বললেই হতো। তা যা, ঐ যে ডান দিকে।
অবিনাশ বাবু কোনো রকমে উৎপটাং হয়ে পরে যাওয়া শরীর টাকে তুলে নিয়ে কোমরে হাত দিয়ে একটা ছোট্ট দরজা দেখতে পেয়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে ঢুকে গেলেন। বাইরে তো চ্যাংকা টা পাহারা দিচ্ছে। শালা দুধের ছেলে তুই তুই করে কথা বলে, সাহস কি!
এইবার ভেতরে ঢুকে এদিক ওদিক দেখে নিলেন অবিনাশ বাবু। টিম টিম করে জ্বলছে একটা নাইট বাল্ব। চৌবাচ্ছায় জল পরে বয়ে চলেছে। পাশেই দুটো ইট পাতা। বাঁ দিকটা করে একটা নোংরা কমোড, দেখে মনে হয় কেনার পর আর কোনো দিন পরিষ্কার হয়নি। আর ঠিক তার ওপরেই একটা ঘুলঘুলি, একটু চেষ্টা করলে একটা মানুষ গোলে যেতে পারবে। সেখান থেকে একটু খানি দিনের আলো বাথরুমে ঢুকছে। সেই দেখেই অবিনাশ বাবুর মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেলো। সোজা কমোডের ওপর উঠে দাঁড়ালেন আর ঘুলঘুলি দিয়ে বাইরে মুখটা গলিয়ে দিলেন। দিনের আলোয় মনটা বেশ ফুরফুরিয়ে উঠলো। যেন গলা ছেড়ে গাইতেই যাচ্ছিলেন
“এই এতো আলো এতো বাতাস আগে দেখিনি”
না বাইরে ছোঁড়া টা পাহারায় আছে ভেবে উত্তেজনা সম্বরণ করলেন। এবার শ্যাওলা পরা স্যাঁত স্যাঁতে দেওয়াল টাকে জাপটে ধরে গোলে যাবার চেষ্টা করতেই কড় কড় মর মর করে একে বারে কমোড ভেঙে মাটি থেকে উপড়ে মেঝেতে পরে গেলেন। আর তার পর যা হওয়ার তাই আর কি। সারা মেঝেতে টিম টিমে আলোয় দেখা গেলো ইয়ে টিয়ে ছড়িয়ে একাকার। আর অবিনাশ বাবুর গায়ে-মুখে-হাতে-বুকে-পেটে সে তো বলাই বাহুল্য।
এতো জোর আওয়াজ হতেই দরজায় দুমাদ্দুম ধাক্কা পরলো। সারা গা ভরতি ইয়ে টিয়ে নিয়ে যখন কোনো ক্রমে বেরোলেন তখন বাইরে গোটা দশ জোড়া উৎসাহী চোখের ভিড়। কি করবেন কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না। কেউ আর সাহস করে অবিনাশ বাবুকেও ধরছে না। যেন বিজয়ীর হাসি হাসতে হাসতে সোজা মেইন দরজা দিয়ে বুক ফুলিয়ে বাইরে এসেই দে ছুট।
দুটো স্টপেজ টানা দৌড়ে বাড়ি এসে বাথরুমে ঢুকেতে গিয়েই ছন্দ পতন। কি রকম!!
ঘুমটা গেলো ভেঙে বৌয়ের হাঁক ডাকে। চমকে গিয়ে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ঘুম থেকে উঠেই এই ভয়ঙ্কর স্বপ্নের কথা ভেবে হাসতে লাগলেন। বিছানায় একবার হাত বুলিয়ে নিয়ে সত্যি টা যাচাই করে নিলেন আদৌ সেখানে কিছু হয়ে গেলো নাকি! হাসতে হাসতে বুঝতে পারলেন সত্যি যে ইয়ে পেয়েছে এবার। তাই সোজা ইয়েতে গিয়ে ঢুকলেন।
আর হ্যাঁ শুনুন- পাঠকদের ও বলিহারি, এই গল্পটা পড়ে এখনো ভাবছেন গল্পের নামটা এমন কেন দিলাম। বিশ্বাস করুন ওটাও স্বপ্নে পাওয়া। ঊন_পঞ্চান্ন কতোর পিঠে কতো আমিও জানি না। আপনারা একবার চেষ্টা করে দেখবেন নাকি!
~সমাপ্ত~