অণুগল্প- ভুল

ভুল
– তমালী বন্দ্যোপাধ্যায়

 

 

অফিসের একটা কাজের ব্যাপারেই প্রথম ফোনে যোগাযোগ ওর সাথে। ফোনের সেই মিষ্টি গলাটা শুনতে শুনতে কখন যেন মনের মধ্যে তোলপাড় শুরু হলো। কারণে অকারণে কাজের অছিলায় ফোন করতে শুরু করলাম। ও হয়তো বুঝতো কিন্তু আমি ভাবতাম হয়তো বোঝেনি।

তারপর সেই ফোনালাপ পেরিয়ে দেখা হলো একদিন। কবেকার সে’সব কথা- আমার অফিস কোলকাতায় আর ও অনেকটাই দূরে, সেই ব্যারাকপুর। তা-ও দেখা হতো, কথা হতো, তারপর ক’বে যেন আমার ঘরের চৌকাঠ পেরোলো ওর আলতা রাঙা পা।

অনেক রঙীন আলো সারারাত জ্বলেও ভোরের দিকে ক্লান্ত তো হয়- নিভে তো যায় সেই আলো।
সুন্দর সাজানো তটভূমিতে বালির ঝড়ও তো ওঠে? ঠিক তেমনি বাসা ভাঙা পাখির মত পড়ে রইলাম আমি। ও চলে গেলো ভাঙা কাঁচ মাড়িয়ে- সেই আলতা রাঙা পা রক্তে রাঙা হলো ।

আমার দায়কে কিভাবে অস্বীকার করবো আমি? পারিনা- পারিনা তা। আমার এই বদমেজাজ, সন্দেহবাতিক মন, জেদ, নিজের কাজে ডুবে গিয়ে ওকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করা।

আজ পাঁচবছর- ডিভোর্সের পরে নিজেকেই ক্ষতবিক্ষত করেছি। পাল্টাতে চেষ্টা করেছি নিজেকে। মেডিটেশন করেছি, দীক্ষা নিয়েছি, শান্ত হয়েছি, বয়সের সাথে সাথে আজ কিছুটা পরিণতও হয়েছি।

না, অন্য কোন মেয়েকে আর মনে ধরেনি।গল্প করেছি, কথা বলেছি ওদের সাথে-ওদের কেউ কেউ মায়া দেখিয়ে কাছে আসার চেষ্টাও করেছে কিন্তু আমি ব্যবধান বাড়িয়েছি। আমি কাউকে চাইনা। শুধু ওকে আমার ভীষণ দরকার- আমার মল্লিকাকে।

কিন্তু ওর মত শান্তশিষ্ট, মিষ্টি, কোমল মনের মেয়ের সামনে আমি কি মুখ নিয়ে দাঁড়াবো?হয়তো ও ভালো আছে- হয়তো নতুন কোনো সম্পর্কে জড়িয়েছে ও। হয়তো আমাকে ভুলে গেছে, আমি তো খুব বাজে একটা মানুষ।

আবার ফোনে ওর মিষ্টি গলাটা শোনার জন্য ছটফট করতে লাগলাম। মোবাইলে ওর নম্বরে কল করলাম…বাজছে ফোনটা…ও’কি ধরবে না? ও কি আমাকে ক্ষমা করে দেবে না?

কিছুক্ষণ রিং হবার পর ফোনের ওপার থেকে মোটা গলার এক পুরুষ কন্ঠ ফোনটা ধরলেন।
কাকে চাই বলতে বল্লাম মল্লিকাকে একটু দিন না।
বিস্ময়ভরা কন্ঠে লোকটি বললেন- মল্লিকা?
না, সেইনামে এখানে কেউ থাকে না তো।

আমি বললাম, কিন্তু এটাতো মল্লিকার নাম্বার।
লোকটি গম্ভীর শব্দে ঈষৎ হেসে বললেন-স্যরি, রং নাম্বার…এটা আমার ফোন নাম্বার।দেখুন হয়তো ভুল টাইপ করেছেন কিংবা হয়তো সে ভুল নাম্বার দিয়েছে আপনাকে।

ফোনটা কেটে দিলাম।

Loading

Leave A Comment