কবিতা

কবিতা- এক অসহায় মায়ের কথা

এক অসহায় মায়ের কথা

-অর্পিতা ঘোষ 

 

 

আমি ক্ষুধার্ত ছিলাম,
না ! আমার জন্য নয়
আমি ক্ষুধার্ত ছিলাম আমার গর্ভস্থ শিশুর জন্য,

যে নাকি তখনো পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জীব এই মানুষরুপী প্রাণী শাসিত ধরণীর আলো দেখে নি। 

ওরা আনারস খেতে দিলো
আমি বুঝিনি তার ভেতর বোমা ভরে আমাকে খেতে দেবে !
আমি বিশ্বাস করেছিলাম,
আমি বিশ্বাস করেছিলাম,
আমি মানুষকে বিশ্বাস করেছিলাম !

মুখে পুরতেই প্রচন্ড বিস্ফোরণের শব্দ,
শরীরের ভেতরটা দগ্ধ হতে হতে মুখের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছিলো গর্ভিনী মায়ের তাজা রক্তের স্রোত !
আমি যখন যন্ত্রনায় দিকশূন্য হয়ে প্রাণ ভিক্ষা চাইছিলাম,
জরায়ুর অভ্যন্তরে আমার ছোট্ট প্রাণটা যখন বাঁচার শেষ নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য ছটফট করছিল
ওরা তখন জয়োল্লাস করছিলো !

আমি জানতাম মৃত্যু আমার আসন্ন তবুও নীরব থেকে তৃষিত নয়নে চেয়েছিলাম নতুন প্রাণটা বাঁচুক,
নদীর জলে মুখ ডুবিয়ে বাঁচাতে চেয়েছিলাম আগামী প্রজন্মকে
কিন্তু হায় !

ওরা কি মানুষ !
ভবিষ্যতের হত্যার পাপ লেগেছে ওদের হাতে,
বিস্বাসঘাতকতার বিষে পূর্ণ হয়েছে ওদের পাপের ঘড়া;
ধরিত্রী মায়ের অভিশাপে দাউদাউ করে জ্বলে উঠবে ওদের লোভ, লালসা, অহংকার !
মুখ, পেট ছিঁড়ে বেরিয়ে আসবে পুঁথিগত বিদ্যা, জংধরা শিক্ষার বহর ।
একদিন মুছে যাবে শ্রেষ্ঠত্বের সকল চিহ্ন, কেবল রয়ে যাবে অহিংসা, ভালোবাসা ।

এখনো সময় আছে নিষ্ঠুর মানবজাতি
শুধরে নাও নিজেকে, ফিরিয়ে আনো নিজের মানবিকতা !
সম্মান করতে শেখো নীরবতাকে,
এ বসুন্ধরা সবার, একা তোমাদের নয়…
হাঁটু মুড়ে ক্ষমা চেয়ে নাও মায়ের কাছে ,
আগামীকালের ভোরে আমরা নিঃশ্বাস নাই বা নিলাম
তোমরা বেঁচে ওঠো মান-হুশ নিয়ে, মানুষ হয়ে…

Loading

Leave A Comment

You cannot copy content of this page