Site icon আলাপী মন

গল্প- গোপন অভিসার

গোপন অভিসার
– রাখী চক্রবর্তী

 

 

রাত বারোটা-
অভির ঘরের জানলার পর্দাগুলো হাওয়ায় ঝাপটাচ্ছে এদিকে ওদিকে। সিলিংফ্যানের হাওয়া তেমন শীতল না, যেন গরম ভাপ আসছে। অভি লক্ষ্য করছে গত দু’দিন ধরে এমনটি হচ্ছে অথচ দুপুরে তীব্র গরমের মধ্যেও ঘরে সিলিং ফ্যানের হাওয়া খেয়ে মন আমেজে ভরে যায়। অভি বিছানা থেকে উঠে জানলার পর্দা ধরে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষণ, ঠাণ্ডা হাওয়া দিচ্ছে বেশ।সারাকে খুব কাছে পেতে চাইছে অভি। সারার প্রেমকে তুচ্ছ মনে করে অভি। যখন বিষাদে মন ভরে যায় অভির তখনই সারার প্রতি ভালবাসা জন্মায় ওর।
অফিসে বসের নজরদারি, বসের মুখ ঝামটা তখন সারার ভালোবাসা অনুভব করে অভি।সবই তো ঠিক কিন্তু অভি সারাকে পছন্দ কেন করে না। ভালোবাসা পেতে ইচ্ছে করে অভির কিন্তু ভালোবাসা অত সহজ না এই যুক্তি দেখিয়ে সারার প্রেমকে প্রত্যাখ্যান করে অভি।
অভির স্বপ্নতে সারা নতুন বৌয়ের সাজসজ্জা নিয়ে হাজির হয়। বেনারসি শাড়ি পড়ে রজনীগন্ধার মালা খোঁপাতে লাগিয়ে অভিসারে যায় সারা, সিঁদুর কপালে জ্বলজ্বল করে ওর, পুরোনো দীঘির পাড়ে দুজনের প্রেমালাপে দীঘির জল তরঙ্গের সুরে দুলতে থাকে, কতো সুখী ওরা, সাক্ষী থাকে চাঁদ, আকাশ, পলাশ ফুলের গাছ..
অভি ধরফরিয়ে বিছানা থেকে উঠে বসে।স্বপ্ন বইতো সত্যি তো না।

গত পরশু সারা অভির সাথে দেখা করবে বলে ফোন করেছিল অভিকে। অভি অনিচ্ছা স্বত্বেও গেছিল পুরোনো দীঘির পাড়ে সারা কি বলবে তা শুনতে।পুরনো দীঘির পাড়ে সারি সারি ফুল গাছে পলাশ, শিমুল, মাধবীলতা জড়িয়ে আছে একে অপরকে। পলাশ ফুল কৃষ্ণচুড়া রাঙিয়ে দিয়েছে দীঘির পাড়।

ছমছম, ছমছম জমজমাট নুপুরের শব্দ অভির কানে প্রতিধ্বনি হতে লাগলো। চোখ বন্ধ করে অভি বসে আছে দীঘির পাড়ে।শিহরিত অভি। শরীর জুড়ে কামনার অগ্নিতে জ্বলছে ও। কিন্তু কেন এমন হচ্ছে? অভি তো কোন একটি মেয়ের প্রতি দূর্বল হতে পারে না। অনেক মেয়ের কামনা বাসনার মধ্যে অভি থাকবে। শত শত মেয়ের স্বপ্নের পুরুষ হবে অভি। কোনো একটি মেয়ের প্রেমিক হয়ে ও থাকতে পারবে না।

অভি..অভি..
সারার মিষ্টি সুরে অভি চোখ খুললো। সারা পলাশ গাছের ডালে মুখ গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে।

সারা কি সাজ সেজে এসেছে আমার কাছে, হাটু অব্দি ফিনফিনে শাড়ি, পিঠটা খোলা, পিঠের তামাটে বর্ণ পুরোটাই দেখা যাচ্ছে ।
সারা বলে ডাকতেই সারা অভিকে জড়িয়ে ধরে বললো, পারবো না তোমাকে ছেড়ে এক দণ্ড থাকতে। আমি তোমাকে ভালোবাসি।অভি সারার শরীরি সুখ অনুভব করছে। কোথায় গেল অভির শত শত নারীর প্রেম।অভি তো জাপটে ধরে আছে সারাকে।

– অভি পরশু আমার শাদি। আব্বাজান আমাকে বেঁধে রেখেছিল। অনেক কষ্টে সে বাঁধন ছিড়ে আমি তোমার কাছে এসেছি।ফিরিয়ে দিও না আমাকে। আমাকে বিয়ে করে তোমার ঘরে নিয়ে চল- আজই।
অভি সারার প্রতিটি কথা শুনছে চোখ বন্ধ করে।
সারা অভির মাথা ঝাঁকিয়ে বলে উঠলো এখুনি পালাতে হবে আমাদের। আব্বাজান যে কোনও সময় চলে আসতে পারে।অভি কিছু বলার আগেই সারার আব্বাজান সারাকে নিয়ে গেল।সারা চিৎকার করে বলল আমি বাঁচব না অভি তোমাকে ছাড়া।

অভির মাথার ওপর দিয়ে দু’টো চড়ুই কিচিরমিচির করতে করতে উড়ে গেল।নির্বাক অভি সারার বলা কথাগুলো অনুভব করছে। এ ভালোবাসা অস্বীকার করার মতো সাধ্য অভির নেই। অভি সময় নষ্ট না করে সারার বাড়িতে গেল। সারাকে বিয়ে করবে অভি। মনস্থির করে নিয়েছে। কিন্তু তা হওয়ার নয়। সারার পরিবার এ সম্পর্ক মানলো না।
অভি বাড়ি ফিরে এল।

পর দিন সকাল বেলায় সারার খোঁজ নিতে গিয়ে অভি জানতে পারল সারাকে নিয়ে ওর পরিবার ভোর বেলায় দেশের বাড়ি যাওয়ার জন্য রওনা দিয়েছে। আনমনা অভির কাজে মন নেই,তাই অফিস থেকে দিনকয়েক ছুটি নিয়েছে।

কাল রাত বারোটার সময় দমকা হাওয়াতে অভির চোখ খুলে গেল, অভি দেখলো,খাট ধরে দাড়িয়ে আছে সারা,
– সারা তুমি এতো রাতে এখানে?
– অভিসারে যাব বলে এসেছি। কেমন লাগছে বলো?
– খুব সুন্দর লাগছে।
সারা অভির হাত ধরে নিয়ে গেল পুরোনো দীঘির পাড়ে, রাতের আকাশ ঝলমল করছে চাঁদের আলোতে। ওদের কতো গল্প, মান আভিমান সব কিছুর সাক্ষী থাকল নীল আকাশ, দীঘির জল।
সকাল বেলায় অভি ঘুম থেকে উঠেই চমকে গেল সারার গলায় যে লকেটটা ছিল সেই লকেটটা ওর বিছানায় কী করে এল?
সারা তো কাল রাতে দীঘির পাড় থেকে আর এখানে আসেনি, তবে.. ভাবতে লাগল অভি কি করা যায়! লকেটটা সারাকে দিতে হবে, থাক রাতে এলেই দিয়ে দেবে।
যাই হোক অভি আজ খোশমেজাজে আছে, সারা বলেছে আজ রাতে ও আসবে।

রাত বারোটার অপেক্ষা করছে অভি,
ছমছম.. ছমছম..
অভি সিগারেট ধরিয়ে চেয়ারেই বসে আছে, এতো সুন্দর গন্ধ বাতাসে ভাসছে তাতে মন প্রাণ তাজা হয়ে যায় এক নিমেষেই।
অভি.. অভি..
– আমি এখানে সারা।
— চলো।
সারা রাত দীঘির জলে ওরা খেলা করলো, সারার ভেজা চুলের ঝাপটায় অভি নাজেহাল হয়ে গেল। অভি ভাবছে এতো সুখ প্রেমে, সারা এতো ভালোবাসে আমাকে!
অভি বললো, সারা আজ দুপুর বেলায় তুমি আমার বাড়িতে আসবে, আমাদের বিয়ের কথা পাকা হবে আজ।
সারা মাথা নিচু করে বললো, এখন বাড়ি চলো।
আঁধার থাকতে থাকতে সারা অভিকে বাড়িতে দিয়ে চলে গেল।
অভি ঘুম থেকে উঠেই ওর মাকে বললো, আজ সারা আসবে মা, আমাদের বিয়ের কথা পাকা করবে তুমি, ঠিক আছে তো।

অভির মা হতবাক অভির মুখে এই কথা শুনে, তুই কিছু শুনিস নি অভি?
-কি শুনিনি মা
-সারা..
– হ্যাঁ কি বলো, বলো
– আরে কাজের দিদি কাল বিকেল বেলায় কাজ করতে এসে বলছিলো, সারা নাকি ট্রেন থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। এই দু’দিন হল.. সারার আব্বাজান ওকে নিয়ে ওদের দেশের বাড়ি যাচ্ছিল ট্রেনে করে। তালেগোলে তোকে বলা হয়নি। সারার নাকি বিয়ে ঠিক হয়েছিল পরশু দিন।
সব শুনে অভি মাথায় হাত দিয়ে মেঝেতে বসে পড়লো। তবে সারা যে অভিসারে আমার সাথে গেল? তবে কি সেটা গোপন অভিসার ছিল সারার?

রাত বারোটার সময় ছমছম.. ছমছম..
কেউ মানুক আর না মানুক সারা প্রতি রাতে অভিসারে যায় অভির সাথে, গোপন অভিসার।
ভালোবাসার ফুল যেমন নষ্ট হয় না কোনোদিন। ঠিক তেমনি ভালোবাসার মৃত্যু হয় না কোনদিন,
অভি অনুভব করে সারার উপস্থিতি, তাই তো সারার ভালবাসাকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছে আজও অভি।

Exit mobile version