Site icon আলাপী মন

কবিতা- অট্টালিকার আত্মকথন

অট্টালিকার আত্মকথন
– শিলাবৃষ্টি

 

 

নিস্তব্ধ এই রাতে অতন্দ্র প্রহরী আমি,
শতাব্দী হতে শতাব্দী; আজ অস্তগামী।
কবে কখন কে প্রতিষ্ঠা করেছিল ভিত!
স্মৃতিপটে নাই লেখা, যদিও বা কদাচিৎ…
ফ্ল্যাশব্যাকে মাঝে মাঝে ফিরে আসে সম্বিৎ
ভীষণ যন্ত্রণা হয় শিরায় শিরায়..
বেদনা গভীর হয় হিয়ায় হিয়ায় ।
একদা ছিলাম এক সেরা অট্টালিকা-
প্রতিটি কড়িকাঠে তার ছিল জয়টীকা।
অন্দর বাহিরে কত দাসদাসী ভরা…
সৌন্দর্য সুষমা তার ছিল মনোহরা।
উৎসব আনন্দে শত মানুষের ভিড়-
সে গৃহ একদা ছিল শান্তির নীড়।
মরাই ভরা ধান ছিল, ছিল পাকার ঘাট…
ফুলে ভরা, ফলে ভরা আনন্দেরই হাট।
অন্দরেতে দেবমন্দির- কতই ছিল নিয়ম,
ঘরভর্তি লোকজনেতে করতো যে গমগম।
গৃহকর্তা খোশমেজাজে সামলে নিত রাজ,
ভাগচাষীর আনাগোনা সকাল থেকে সাঁঝ
কাল কেটেছে তার নিয়মে…কিসের যেন পাপে,
ধ্বংসলীলার মাতন আজি, কাহার অভিশাপে!
চার শতাব্দী দাঁড়িয়ে আছি- জীর্ণতার এই প্রতীক;
নব নব সৃষ্টিতে আজ ভরলো চতুর্দিক।
বয়েস ভারে কুব্জ দেহ, কদর আমার নাই,
নতুন নিয়ে মাতছে সবে! মূল্য কোথায় পাই!
আমার ছায়ায় কোন কালেই হয়নি কারো ক্ষতি;
সুখে থাকুক, ভালো থাকুক সন্তান সন্ততি।
চার দিকেতে গজিয়ে ওঠা আগাছাদের মেলা,
বিশাল বিশাল মহীরুহে করছে বাতাস খেলা;
নাইকো মরাই, খড়ের গাদা- নাইকো পুকুর পাকা;
নিঃঝুম এক যক্ষপুরী- দাঁড়িয়ে আমি একা!
চারশো বছর বয়েস আমার- রোগ, ব্যাধি আর জরায়;
হাতুড়ি, শাবল, গাঁইতির আশে রইনু প্রতীক্ষায়।

Exit mobile version