অণু গল্প

অণুগল্প- জন্মদিন

জন্মদিন
– শান্তনু ব্যানার্জী

 

 

জন্মদিন কোনো দিন উদযাপন করি নি । না তেমন কোনো কারণ নেই, তবে কোনো দিনই এ ব্যাপারে উৎসাহ ছিল না। বলতে গেলে আমার কিন্তু তিনটে জন্মদিন। একটু অদ্ভুত লাগছে তাই তো! খুলেই বলা যাক। সবার মতো আমার তো একটা জন্মদিন আছেই। তাছাড়া আরও দু’টো তারিখ।
প্রথমটা সাঁইত্রিশ বছর আগের কথা। সকাল দশটাতেই আমার গৌহাটি অফিসে খবর এল যে আমার মৃত্যু হয়েছে। অন্যত্র কাজ সেরে অফিসে পৌছতে বেলা তিনটে হয়ে গেল । আমাকে দেখে সকলেই চমকে উঠলো যেন সাক্ষাত ভূত দেখছে। চারদিকে কেমন বিমর্ষ ভাব। কাজকর্ম বন্ধ করে চারদিকে গুঞ্জন চলছে। এবার আমি হাঁক মারতেই সকলের সম্বিত ফিরে এলো। কি ব্যাপার বলুন তো! অফিস খুলতে খুলতেই মুম্বই ( তখন বলা হত বোম্বে) হেড অফিস থেকে জানানো হয়েছে যে ট্রেন দুর্ঘটনায় আপনার মৃত্যু হয়েছে। কলকাতা অফিস থেকেও ফোন করে দুঃখ প্রকাশ করেছে। আমরা খালি আপনার বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু ফোনে যোগাযোগ হচ্ছিল না। তখন তো আর মোবাইল ছিল না, তাই অপারেটরকে হেড অফিসে হট লাইনে কানেক্ট করতে বললাম। কিছু বাদে লাইন পেলাম। বেশ কিছুক্ষণ উত্তেজিত ভাবে কথাবার্তা চললো। লাইন ছাড়তে সবাই ঘিরে ধরল ব্যাপারটা বোঝার জন্য। হেসে বললাম যে কিছুদিন আগে একটি অল্প বয়সী ছেলে মুম্বই যাচ্ছিল ইন্টারভিউ দিতে কোনো একটা কোম্পানিতে। আমার কাছে দু’দিন যাবৎ ইন্টারভিউ সংক্রান্ত আলোচনা করেছিল। ওকে আমার কার্ড সমেত কিছু প্রস্তুতি বিষয়ে কাগজপত্র দিয়ে ছিলাম। ইন্টারভিউ দিয়ে ফেরার পথে ট্রেন অ্যাকসিডেন্ট হয়। যদিও ওর কোনো ক্ষতি হয়নি তবু আমার দেওয়া কাগজপত্র রেল লাইনের চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে ছিল। পুলিশ সেগুলো সংগ্রহ করে হেড অফিসের ঠিকানা আর ফোন নম্বর দেখে যোগাযোগ করে।

দ্বিতীয়টা সাতাশ / আঠাশ বছর আগেই হবে। চিরকালই খুব আড্ডা মারতে ভালোবাসতাম। নিয়মিত যাতায়াতের জন্য ট্রেনের অনেক যাত্রীই চিনতো। ভেস্টিবিউল কোচের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে। খুব মার্জিন টাইম নিয়ে যাতায়াতের বদ অভ্যাসের জন্য অনেকেই একটা করে জায়গা আমার জন্য রেখে দিত । একদিন বিকেল পাঁচটার সময় শেষ মূহূর্তে ট্রেনের শেষ বগিতে উঠে পড়লাম। শীতের সন্ধ্যা। উঠে দেখি ওটা একমাত্র বগি ছিল সেদিন ভেস্টিবিউল থেকে আলাদা। পরের স্টেশন আড়াই ঘণ্টা বাদে। বসার জায়গা পরের কথা। আড্ডা মারবো কিভাবে! দরজার সামনে এসে দাঁড়ালাম। যদি কোনো স্টেশনে একটু দাঁড়িয়ে পড়ে তবে কামরা পাল্টে নেবো। আধঘণ্টার মধ্যে সুযোগ এসে গেলো। কিন্তু একি? আমি প্লাটফর্মের লোকজনের মাঝে পড়ে আছি। লোকজন আমাকে ধরে নিয়ে বেঞ্চে বসালো। আমার ব্রিফকেস লাইন থেকে তুলে আনলো।আর ট্রেনটা বেরিয়ে গেল। পুলিশ এলো। ভাবলো আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলাম। আমার কথা শুনে হাসতে হাসতে চলে গেল।
সেদিন কিন্তু ট্রেনটা স্টেশনে দাঁড়িয়ে গিয়ে ছিল মনে হয়ে ছিল। এটার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা কি জানিনা। তবে এটা আমার দ্বিতীয় নবজন্ম।

Loading

4 Comments

  • Anonymous

    তিনটি জন্মদিনের অনুগল্প পড়তে পড়তে, আমি নিজেই যেন কোথাও হারিয়ে গেলাম ! এই বুঝি আমারো দ্বিতীয় জন্ম হলো ! শান্তনু ব্যানার্জির এই কলম যেন, পাঠকদেরকে বার বার সম্বিৎ ফিরিয়ে দেয় ! অসামান্য, মন কেড়ে নেয়া, লেখকের প্রকাশভঙ্গি ও শব্দচয়ণ !👌👌👍👍আন্তরিক অভিনন্দন !”✌️✌️

    • Banerjee Santanu

      আপনার মন্তব্য আমাকে যথেষ্ট অনুপ্রাণিত করল । অসংখ্য ধন্যবাদ ।

  • Atul Saha

    তিনটি জন্মদিনের গল্প পড়তে পড়তে, আমি নিজেই যেন, কোথাও হারিয়ে গেলাম ! এই বুঝি, আমারও দ্বিতীয় জন্ম হয়ে গেলো ! শান্তনু ব্যানার্জির এই বলিষ্ঠ কলম যেন শাশ্বত হয়ে থাকে ! পাঠকদের বার বার সম্বিত ফিরিয়ে দেয় !অসামান্য, মন কেড়ে নেয়া লেখকের এই মিষ্টি প্রকাশভঙ্গি ও শব্দচয়ণ ! আমার আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা রইলো !✌️✌️👍👍👌👌

    • Banerjee Santanu

      আপ্লুত হলাম । অনেক ধন্যবাদ । আপনার মন্তব্য আমাকে যথেষ্ট সাহস যোগাবে পরবর্তী রচনা র ক্ষেত্রে ।

Leave A Comment

You cannot copy content of this page