বিকৃত ব্যর্থ স্তম্ভ..!
-রীণা চ্যাটার্জী
সুধী,
সময়টা বড়োই অস্থির বর্তমানে, অস্থিরতার মাঝে আমরাই বা আর স্থির থাকি কি করে? আমরাও বড়ো অস্থির হয়ে উঠছি। ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে, সহিষ্ণুতা হারিয়ে যাচ্ছে। তবুও সর্বসংহা হয়ে মন লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে বালির বাঁধ দিয়ে- কিন্তু কতদিন সম্ভব? প্রয়োজনই বা আর কতদিনের কে জানে? জীবন ভীষণ সস্তা এখন- কান পাতলেই শুনি তার.. পদধ্বনি। সকাল- সন্ধ্যায় এক সংবাদ- আক্রান্ত আরো..আরো.. আতঙ্ক গ্ৰাস করছে ক্রমশঃ।
সংবাদ পরিবেশনা সেও যেন আরো ভয়ানক আতঙ্ক..মনে যেন আরো আতঙ্কের সৃষ্টি করছে নিত্যনতুন। কিভাবে, কোন ভঙ্গীমায় সংবাদ পরিবেশন করছেন আপনারা একটু ভাবছেন কি? গণতন্ত্রের চতুর্থ ও অপরিহার্য স্তম্ভ! আপনাদের উপস্থাপনা, সংযোজন- বিয়োজন সব কেমন হৃদয়হীনতার সাক্ষ্য দিচ্ছে, দিয়ে চলেছে ক্রমাগত। সবটাই কেমন যেন ব্যবসায়িক দিক- কিন্তু সংবাদ মাধ্যম বা পরিবেশনা কি সত্যিই শুধুই ব্যবসায়িক দিক আর বিজ্ঞাপনের চমক? তার জন্যই কি ঘন্টায় ঘন্টায় আপডেট?
সে সংবাদের সারবত্তা থাক বা না থাক? ভুলে ভরা, ভ্রান্তিতে গড়া চমকপ্রদ খবর, রোগ- ভোগ, শঙ্কা- ঝঞ্ছা সবেতেই বেমানান ভঙ্গী? আকস্মিক হৃদয়বিদারক মৃত্যুর সংবাদ বলতেও গলার স্বরে যেন বিজ্ঞাপনী ঝলক। অবশ্য বিজ্ঞাপন তো বটেই- কারণ সাথে সাথেই আপনারা এটা বলতে ভোলেন না আপনাদের কৃতিত্ব- এই সংবাদ আপনাদের চ্যানেল প্রথম প্রকাশ করছে, আর তার পুনঃ পুনঃ নির্লজ্জ প্রচার।
মনে পড়ে যায় দূরদর্শনের সাড়ে সাতটার সংবাদ। পনেরো মিনিটের উপস্থাপনা- অপেক্ষা থাকতো সারাদিনের। বাড়ির ভাবগম্ভীর বয়ঃজ্যেষ্ঠ বনেদীয়ানা ও সাবেকি প্রথায় বিশ্বাসী কর্তাব্যক্তিরাও ওই সময়টায় দূরদর্শনের পর্দার সামনে থাকতেন। সংবাদ পাঠক/ পাঠিকার গলার স্বরের সাথে পরিবেশ বদলে যেত। একটি শোকবার্তা প্রকাশের বাচনভঙ্গীতে মনটাও গুমরে উঠতো। সবটাই অতীত, কারণ সেখানেও এখন নানা ফিতের ফাঁসে শুধুই ফিতে কাটার অপ্রয়োজনীয় প্রচার। স্বাধীনতা- সেখানে অনেকটাই যেন সংসারে গিন্নীমায়ের চাল বের করে দেওয়ার মতো কুক্ষিগত। অবশ্য তবুও তাঁদের বাচনভঙ্গি আজো বিকৃত হয়ে যায় নি- এটুকুই স্বস্তি।
আর আপনারা দশ- শত- সহস্র- লক্ষ মৃত্যু সংখ্যা হাত- পা, চোখের নাটুকে ভঙ্গীতে অবলীলায় প্রকাশ করে চলেছেন! এক সাথেই মুচমুচে সস্তা রাজনৈতিক তরজা- সমালোচনার ঝড় তুলছেন নির্লজ্জের মতো।
আর যাঁরা সত্যি কথা বলতে, সত্যি সংবাদ প্রকাশ করতে জীবন বাজি রেখে সংবাদ সংগ্ৰহ করছেন- তাঁদের খবর প্রকাশ্যে আসছে না কারণ সংবাদ এখন প্রশাসন অনুমোদিত অনুচ্ছেদ, আর তাই তাঁরা তাঁদের সংবাদের সাথেই হয় কারাগারের পেছনে না হয় রক্তচক্ষুর আড়ালে হারিয়ে যাচ্ছেন।
সংবাদ ফেরিওয়ালারা একটু সততা আর সাহসী মনোভাব নিয়ে ভাববেন- চার স্তম্ভের একটি স্তম্ভ যদি ভেঙে পড়ে, তবে আমাদের গণতন্ত্রও ভেঙে পড়বে। অবশ্য গণতন্ত্র আর কতটা বাকি আছে, সেটাও সংখ্যাতীত অঙ্কের প্রশ্ন চিহ্নের সম্মুখীন আজ…
আগামীর ঐকান্তিক শুভকামনা আলাপী মন-এর পক্ষ থেকে পরিবারের সকলের জন্য। অপেক্ষা রাখি আমরা ধৈর্য্যের হাত ধরে- এর বেশী কিছু বলার ভাষা বোধহয় আজ আর কারোর কাছেই নেই।