Site icon আলাপী মন

গল্প- কালো মেয়ে

কালো মেয়ে
– জ্যোৎস্না ভট্টাচার্য ত্রিবেদী

 

 

কি রে তাহলে সত্যিই তুই যাবি না বাবু? অনুরাধা জিজ্ঞাসা করেন…
– না মা, তোমাকে তো বলেইছি, আমি ও সবে নেই। মেয়ে ফেয়ে দেখতে যাওয়া, আর হাসি মুখে বসে গান্ডে পিন্ডে মিষ্টিমন্ডা গিলে আসা, আমার ও সব পোষাবে না। এই ব্যাপারটা তোমরাই মিটিয়ে নাও, বিয়েটা আমি গিয়ে করে নেবোক্ষন…. বলেই মিটি মিটি হাসে প্রিয় ওরফে প্রিয়াংশু।
– সেই তো, তুমি কোনো ঝামেলা ঘাড়ে নেবে না খালি সেজে গুজে বিয়ে….মায়ের কথা শেষ হবার আগেই প্রিয় বলে ওঠে,
– ওরে বাবা, বিয়ে করাটা কি কম ঝামেলা নাকি? কি মনে করো তুমি? জানো, ছেলেদের কতো দায়িত্ত্ব নিতে হয়। আস্ত একটা মেয়ের দায়িত্ব সারা জীবন ঘাড়ে নিয়ে বেড়াতে হবে। এটা কম কিছু?
-তুই চুপ কর, কে যে কার দায়িত্ত্ব নেবে, সে আমার খুব জানা আছে। দেখি এ মেয়ে আবার কেমন হয়! ফুল পিসি তো বললো, খুব দায়িত্ত্বশীল, কাজে-কম্মে নাকি চৌখস আবার অনেক লেখাপড়াও করেছে। সবই ভালো….. বলে রান্নাঘরের দিকে চলে গেলেন আর মনে মনে বলতে লাগলেন, খালি রংটা একটু যা চাপা। তা একটু চাপা হলে ক্ষতি নেই। আমার রিমুও তো তাই। বাবার মতো চাপা রং পেয়েছে। তাতে কি মেয়ে আমার কোনো অংশে কম? কেমন সুন্দর দেখতে, এক মাথা ঝাঁকড়া চুল, চোখ নাক সব ভালো। তবে না এক দেখাতেই শিলাজিৎ-এর বাড়ীর লোকের পছন্দ হলো। তা তেমনটা হলেই না হয় চলবে, অবশ্য আমার বাবু তো শিলাজিৎ-এর মতো কালো নয়। বাবু তো আমার মতোই হয়েছে, ধপধপে মাখনের মতো রং। ছেলেদের ওমন রং আর সুন্দর চেহারা খুব কমই দেখা যায়। যে মেয়ে ওর বৌ হবে, সে আস্ত একটি রাজপুত্তুরই পাবে, হুম…

বিকেল চারটে নাগাদ, মেয়ে রিমু ওরফে রিমলিকে সাথে নিয়ে স্বামী স্ত্রী পরিতোষ বাবু এবং অনুরাধা দেবী সেজেগুজে গাড়ীতে গিয়ে বসলেন। নীলাদ্রিকে বলাই আছে কোথায় যেতে হবে, সে সেইমতো গাড়ী ঘুরিয়ে রওনা দিলো। ঘন্টা খানেকের মধ্যেই মেয়ের বাড়ী পৌঁছে গেলেন ওনারা।

যথেষ্ট আপ্যায়ন করে মেয়ের বাবা মা দাদা ওনাদের তিনজনকে ভেতরে নিয়ে গিয়ে সাজানো গোছানো বসার ঘরে বসালেন। বসার একটু পরেই একটি মিষ্টি মেয়ে ঠান্ডা পানীয় হাতে ঘরে ঢুকলো। ওনারা মেয়ের বৌদি বলে পরিচয় করালেন। অনুরাধা তখন ভালো করে দেখলেন, মেয়েটির ওল্টানো চুলের ভেতর এক চিলতে লাল রেখা। বেশ দেখতে মেয়েটিকে। মনে মনেই ভাবলেন, বাব্বা, আজকাল কি সব হয়েছে, সিঁদূর যেন না পড়লেই হয়। কোনো রকমে বুড়ি ছোঁয়া… অবশ্য এ সব আবার বলা যাবে না, তার ছেলে মেয়ে দুজনেই রে রে করে উঠবে।

ততোক্ষণে ঠান্ডা পানীয়তে গলা ভেজাতে ভেজাতে বাপ বেটী ওনাদের সাথে গল্পে মেতেছে। অনুরাধা চুপচাপ বসে ঘর সাজানো দেখতে ব্যস্ত, হঠাৎ মেয়ের মা রীতা দেবী জিজ্ঞাসা করলেন, কি হলো দিদি, আপনার কিছু অসুবিধা হচ্ছে?
– না তো, অসুবিধা কিসের? অবাক হয়ে তাকান অনুরাধা।
-না, আসলে আপনি তো সরবত খাচ্ছেন না আর কিছু বলছেনও না তাই….. রীতা দেবী হেসে বলেন।
-না না, কিছু না, বলে সরবতের গ্লাসটা নিয়ে একটা চুমুক দেন। তারপর এমনিই কিছু কথা ওনার সাথে বলতে শুরু করেন।

কিছুক্ষণ পর মেয়ের বৌদি এবং আর একটি মেয়ে, এই নিশ্চয়ই পাত্রী, দু’টো ট্রে ভর্তি মিষ্টি, নোনতা সব খাবার নিয়ে ঘরে ঢুকলো। খাবারের ট্রে টেবিলে রেখে মেয়েটি মাথা নিচু করে দাঁড়াতে, মেয়ের মা পরিচয় করালেন, এই আমার মেয়ে। মেয়েটি ধীরে ধীরে ওনাদের দুজনকে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলো, আর রিমুকে হাত জোড় করে- সামনে এসে যখন প্রণাম করলো অনুরাধা দেবীকে, তখন ভালো করে দেখলেন মেয়েটিকে। ও বাবা, এতো খুব কালো। মনটা তখনই বেশ দমে গেলো। মেয়েটি সামনেই চেয়ারে বসলো জড়োসড়ো হয়ে। আজকের দিনের মেয়েরা এতোটা লজ্জা ভয়ে জড়োসড়ো, আগে দেখেন নি। এর আগে যে কয়টা মেয়ে দেখেছেন সবই আল্ট্রা মর্ডান, শাড়ীই পরে না কেউ। সালোয়ার স্যুট বা অন্য কোনো মর্ডান ড্রেস। একটি মেয়ে তো আবার টাইট জিন্স তাও আবার হাঁটুর নিচে অব্দি আর ওপরে যেটি পরেছে সেও কোমর অব্দি এসে পৌঁছাতে পারছে না। দেখে মনে হচ্ছিলো, ছোট বোনেরটা পরেছে। দেখেই তো দুজনেই আঁতকে উঠেছে। তার মা আবার বলেই দিলেন, মেয়ে আমার এইসব ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরতেই ভালোবাসে। শাড়ী সালোয়ার কামিজ পরেই না।
নাহ্, সে সব এক কথায় না বলেছেন। এই প্রথম একজনকে শাড়ীতে দেখলেন। কিন্তু এতো কালো… একবার দেখেই আর দেখার ইচ্ছা হচ্ছে না। মেয়েটির মুখটা কেমন, হাইট, হেলথ কিছুই দেখার বা জানার ইচ্ছা নেই। অথচ রিমু কেমন আলাপ জমিয়েছে দেখো। কি পড়েছে, এখন কি করছে, কি ভালোবাসে এই সব কথা জিজ্ঞাসা করছে। ওর বাবাও হেসে হেসে কথা বলছে মেয়েটার সাথে। ওনার রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে। কি দরকার এই সবের, ওই ভুস্কুন্ডি কালো মেয়েকে উনি কোনো মতেই বাবুর বৌ করবেন না। ওনার রাজপুত্রের মতো সুন্দর ছেলে। মুখ গোঁজ করে বসে রইলেন। ওরা বাপ বেটী ভালো মতো সবার সাথে গল্প-গাছি করে, খাবারও কিছু কিছু খেয়ে তারপর বাড়ী যাবার কথা বললো। মেয়ের মা তখন অনুরাধা দেবীকে অনুরোধ করলেন, আপনি তো দিদি কিছুই নিলেন না। আর মেয়েকে কিছুই জিজ্ঞাসা করলেন না। প্লিজ একটু কিছু মুখে দিন..
না না, আমি কিচ্ছু খাবো না দিদি, আমার বড্ড শরীরটা খারাপ করছে। এই বলে উঠে পড়লেন।

তখন পরিতোষ বাবু আর রিমলিও বাধ্য হয়েই উঠে পড়লো। পরিতোষ বাবু অনুরাধার মুখের দিকে তাকিয়েই প্রমাদ গুনলেন। হঠাৎ করেই পুরো পরিবেশটাই বদলে গেলো। আনন্দের পরিবর্তে বিষাদ ঘিরে ধরলো। অনুরাধা দেবী হাত জোড় করে ওনাদের প্রণাম জানিয়েই বাইরে যাবার জন্য পা বাড়ালেন। স্বাভাবিক ভাবেই বাপ বেটী দুজনেই ওনাদের প্রনাম জানিয়ে অনুরাধাকে অনুসরণ করলো, এছাড়া কোনো উপায় ছিলো না। দুজনেই অনুরাধাকে বেশ ভয়ই পায়। এমনিতে মানুষ ভালোই, কিন্তু ভীষণ রাশভারি। অপছন্দের কিছু হলেই আর রক্ষে নেই। এখনও ঠিক তেমনটাই আশঙ্কা করলেন পরিতোষ বাবু। যাই হোক, কন্যা পক্ষও মোটামুটি বুঝেই গেলো মেয়ে ওনাদের পছন্দ হয়নি। বিশেষ করে ছেলের মায়ের, কালো মেয়ে পছন্দ নয়।

রীতা দেবী ধরা গলায় বললেন, কি আশ্চর্য, আমার মেয়ের গায়ের রঙটাই খালি উনি দেখলেন, আর মেয়ের মুখখানা যে প্রতিমার মতো, মেয়ের যে এতো গুণ, এতো শিক্ষিত আমার মেয়ে, এতো মিষ্টি গানের গলা, কোনো কিছুই উনি দেখলেন না শুনলেন না…! খালি রঙটাই কি সব কিছু?

ওদিকে গাড়ীতে উঠে বসেও কিছুক্ষণ পর্যন্ত অনুরাধা গুম হয়েই থাকলেন। পরিতোষবাবু আর থাকতে না পেরে জিজ্ঞাসা করেই ফেললেন, তুমি ওমন করে উঠে চলে এলে কেন? একটুও ভদ্রতা নেই তোমার? তুমি তো এতোটা রূঢ় কখনো ছিলেন না। আজ এমন করলে কেন?

ফোঁস করে উঠলো অনুরাধা, চুপ করো তুমি। ওই মেয়ে? কালো ভূতের মতো চেহারা…!

মা, ঠিক করে কথা বলো। রঙটা কালো হলে কি হবে, মুখখানা ভারি সুন্দর। আর কতো পড়াশোনা করেছে। কি সুন্দর মিশুকে, গলাটা কি মিষ্টি। গানও গায় বললো, নিশ্চয়ই খুব ভালো গায়।

তুই চুপ কর, তোকে নিয়ে আসাই ভুল হয়েছে। কি বুঝিস তুই এ ব্যপারে?

যাই হোক আর যতো গুণীই হোক, ও মেয়ে আমার বাবুর বৌ কক্ষনো হবে না। ওমন রাজপুত্রের মতো ছেলে আমার। তার ওই শাঁকচুন্নি বৌ…!

আহ অনু, কি হচ্ছেটা কি! কারোর মেয়েকে তুমি ওভাবে বলতে পারো না। আচ্ছা বলতো, ওর ওই রঙটার জন্য কি ও দায়ী? ওর কোনো হাত আছে ওতে? না তো, তাহলে মেয়েটিকে দুষছো কেন? ঈশ্বর ওকে যেমন গড়েছেন ও তেমনই..

এই সব কথা কাটাকাটি হতে হতে বাড়ী পৌঁছে গেলেন তিনজন। বাড়ী পৌঁছেই আগে খোঁজ করলেন, বাবু, বাবু কই রে? বাবু নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে এসে অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো, কি হয়েছে মা? বাড়ী ঢুকেই এভাবে হাঁক ডাক করছো কেন? হলো-টা কি?
শোন বাবু, ও মেয়ের সাথে তোর বিয়ে দেবো না। কিছুতেই দেবোনা। ও যতোই ফুল পিসির ননদের জায়ের মেয়ে হোক। আর বাবুর বাবা, তুমি এক্ষুণি ফোন করে ওনাদের জানিয়ে দাও। ব্যাস…. এই বলে অনুরাধা দুম দুম করে নিজের ঘরে ঢুকে দড়াম করে দরজা বন্ধ করলেন। বাবু এবং বাকি সবাই হতভম্ব হয়ে এ ওর মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে। বাবু মানে প্রিয় হঠাৎ জিজ্ঞাসা করলো বোনকে, কি হয়েছে রে রিমলি? মা এতো ক্ষাপ্পা কেন? কোনো অপমানজনক কিছু…..

আরে না না সে সব কিছু না। আয় ঘরে বলছি। বলে ওর ঘরেই গিয়ে ঢুকলো দুজনে। প্রিয়তোষ বাবু হতাশ হয়ে বসে পড়লেন সোফায়। নন্দুকে হাঁক দিলেন, এক গ্লাস ঠান্ডা জল দিয়ে যা নন্দু…

ঘরে ঢুকে রিমলি দাদাকে আদ্যপান্ত সমস্ত কিছু বললো। মেয়েটি যথেষ্ট সুন্দর আর সব চেয়ে সুন্দর তার ব্যবহার, কথাবাত্রা। ইকোনমিক্সে মাস্টার্স করেছে। বি.এড-ও করেছে, একটা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে উঁচু ক্লাসেই পড়ায়। এ ছাড়া ক্লাসিকাল মিউজিকেও সিক্সথ ইয়ার পাস। গলাও ভারি মিষ্টি, যদিও গান শোনা হয়নি। কিন্তু নিশ্চিত খুব ভালো গায়, আঁকেও ভালো। ঘরে সুন্দর সুন্দর পেইন্টিংস সাজানো। এতো গুণী একটা মেয়েকে শুধু রঙটা একটু কালো বলে মা এমন বিচ্ছিরি ব্যবহার করে চলে এলো, কি ভাবলেন বল তো ওরা..!

রিমলি হঠাৎ দেখলো ওর দাদা উদাস হয়ে জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে কি যেন ভাবছে। কিছুক্ষণ চুপ থেকে রিমলি বললো, কি রে দাদা, কি ভাবছিস? কালো মেয়ে তোরও পছন্দ নয়?

প্রিয় যেন কিছুই শোনেনি, হঠাৎ মুখ ফিরিয়ে বলে উঠলো, আমি যাবো…..
রিমিলি তো অবাক! কোথায় যাবি দাদা…?
আমি শতরুপার বাড়ী যাব। ওর সাথে কথা বলতে চাই। তুই ব্যবস্থা কর।

রিমলি তো পড়লো মহা ফাঁপড়ে… সে এখন কি করে মা কে বলে এ কথা? আর ভীষণ অবাকও হলো। কিন্তু মা শুনলে যে মহা কেলেঙ্কারি বাঁধাবে। কিচ্ছু ভেবে পেলো না রিমিলি। আর দাদাও তো, ওই একটা কথা বলেই সে যে নিজের বইয়ের পাতায় মুখ ঢুকিয়ে বসে গেলো। আর তো হাজার জিজ্ঞাসা করলেও উত্তর পাওয়া যাবে না।

চিন্তিত মুখে ঘর থেকে বেরিয়ে বাবার কাছে এসে দাঁড়ালো। বাবা ভাঙা গলায় জিজ্ঞাসা করলেন- কি হলো, ছেলেও কি মায়ের মতো কালো….
-না বাবা, সব শুনে দাদা একবার শতরূপার সাথে কথা বলতে চাইলো। যেতে চাইলো ওদের বাড়ী। পরিতোষ বাবু খুশী হয়ে বললেন, সত্যি? জানতাম, ও যে আমার ছেলে। ওর মা যতোই বলুক…
-সে না হয় হলো, কিন্তু কি করে এটা সম্ভব হবে? মা যদি জানতে পারে তাহলে ভাবতে পারছো? জানবে কেন তোর মা? আমি তেমনই ব্যবস্থা করবো। তুই খালি কিচ্ছু বলিস না, দেখ এবার আমি কি করি। বলেই একটু মিটমিটিয়ে হাসলেন।

আজ বৃহস্পতিবার, আজ প্রিয়াংশুর সাথে শতরুপার দেখা করার কথা। অবশ্য বাইরেই, শতরুপার বাড়ীতে নয়। প্রিয়তোষ বাবু আর শতরুপার বাবা মিলে এমনটাই স্থির করেছেন। অনুরাধাদেবী ঘুণাক্ষরেও জানতে পারলেন না তাঁর পিঠ পিছে কি খিচুড়ি যে পাকানো হলো…

ওই ঘটনার ঠিক আড়াই মাস পরে…. আজ শতরূপা বৌ হয়ে এ বাড়ীতে আসছে। গতকাল ধুমধাম করেই ওদের বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। অনুরাধা দেবীর মন ভালো নেই। তাঁর অমতেই সেই কালো মেয়ের প্রেমেই পড়লো তার রাজপুত্রের মতো ছেলে! আবার বলে কিনা দরকার হলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে নিজের গায়ের রঙ। কালো করে নেবো রূপুর মতো। হায় রে…. এ কি দিনকাল পড়লো। মা ঠাকুমা, সত্যিই বলতো, কালো মেয়েদের স্বামীভাগ্য ভালো হয়, রূপবান বর পায় তারা।
আর শুধু ছেলেই বা কেন, তার স্বামী আর পেটের মেয়েও তো তাকে ঠকালো। তাকে না জানিয়ে ওদের দেখা শোনা করিয়ে, ছিঃ ছিঃ… কি লজ্জা কি লজ্জা….

অত্যন্ত মন খারাপ নিয়েই বরণডালা, শ্রী, সব তৈরী করলেন। একটা সুন্দর নতুন শাড়ীও পড়লেন, না হলে লোকে তো নিন্দে করবে।

হৈ হৈ করে বর কনে এসে পড়লো। উনি চুপচাপ গিয়ে দুজনকে বরণ করলেন। হঠাৎ দেখেন সেই কালো মেয়ে নিচু হয়ে ওকে প্রণাম করে উঠেই জড়িয়ে ধরলো। মা গো, ক্ষমা করে দাও মা তোমার এই কালো মেয়েটাকে। আর তুমি রাগ করে মুখ গোমড়া করে থেকো না মা। আমিও তো তোমার একটা মেয়ে আজ থেকে মা….তোমার সব কথা শুনবো, অন্যায় করলে ভুল করলে তুমি বকবে আমি চুপ করে শুনবো মাগো…বলে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো…

ব্যাস, আর চুপ থাকতে পারলো না অনুরাধা, চুপ কর মেয়ে, আজকের দিনে কাঁদতে আছে? নিজের গরদের শাড়ীর আঁচল দিয়ে শতরুপার চোখ মুছিয়ে দিলেন, এদিকে নিজের দু’গালও চোখের জলে ভাসছে। অথচ মুখে হাসি….

পরিতোষ বাবু চেঁচিয়ে উঠলেন, এই বাইরে দেখ তো, মনে হয় শিয়াল কুকুরের বিয়ে হচ্ছে রে, রোদ আর বৃষ্টি একসাথে… অনুরাধা তো একদিকে হাসছে আর এদিকে দু’চোখে জলের ধারা….
এভাবেই হলো…… মধুরেণসমাপয়েৎ।।

Exit mobile version