কবিতা- স্বপ্নে আমি আর রবি ঠাকুর

স্বপ্নে আমি আর রবি ঠাকুর
-সুমিতা পয়ড়্যা

 

 

কোন প্ল্যানচেট নয়; তবুও মুখোমুখি আমি আর রবি ঠাকুর
জোব্বা পরিধানে সামান্য ঝুঁকে দাঁড়িওয়ালা আমাদের রবি ঠাকুর।
অবাক আমি, বিস্ময়ে বললাম—
আমার কাছে! আমিতো সাধারণ মেয়ে
তোমার শরৎ বাবুর লেখা খ্যাতিমান সাধারণ মেয়ে নই আমি।
এখানে আমার কথা কেউ বলে না!
এখানে আমার কথা কেউ শোনে না, কেউ চেনে না, কেউ জানে না।
আমি একা, একাকীত্বই আমার সঙ্গী।
রবি ঠাকুর শুধু বললেন, “সৃজনশীল মানুষ সমাজের অমূল্য সম্পদ।

যত্ন করে বাঁচিয়ে রাখ তোর সৃষ্টিকে।”
আমার অঝোর ধারা নেমে এলো চোখে
এত আনন্দ, এত মূল্য কোথায় রাখবো!
এ যেন সাত রাজার ধন পাওয়া!
তবু আমি বললাম, আমার কথা বাদ দাও ঠাকুর।
তোমার কথা বল; আমি প্রাণভরে শুনি!
তখন প্রাণের ঠাকুর বলতে থাকলেন, “আমার সব কথা —
ওসব পেয়ে যাবি আমার গানে, তানে, গল্পে, কবিতায়, উপন্যাসে।
ছোটবেলা থেকেই তো আমার সম্পর্কে অনেক কিছু জেনেছিস।
আমি শুনলাম তোরা খুব অস্থির সময়ের মধ্য দিয়ে চলেছিস।
একদিকে মহামারীর প্রাদুর্ভাব; অন্যদিকে প্রকৃতির অসন্তোষ,
বিশ্বে মনুষ্যত্বের অবক্ষয়; বিবেকের পতন,
চেতনার জলাঞ্জলি; ঔদ্ধত্যের রাজ চলছে।
এ বড় কঠিন সময় রে। সাবধানে থাকিস,
তোর সৃষ্টির মধ্যে দিয়ে সুন্দর কে পৌঁছে দে জনজোয়ারে।
গৃহবন্দি মানুষের জীবন দুর্বিষহ! অমলের কথা পড়েছিস?
কত অসহায় ভাবে জীবন কাটিয়েছে অমল!
প্রকৃতির সান্নিধ্যে সৌন্দর্যের সম্ভোগে আনন্দ প্রাণ পায়।
ভিতরে আর বাইরের মেলবন্ধন হলেই প্রাণ জীবন্ত হয়ে ওঠে।
বুঝলি কিছু!”
আমি শুধু অবাক হয়ে শুনছি।
আরো বললেন,”আমাদের সময় স্বাধীনতার লড়াই চলছিল।
আমাদের প্রাণ দেশমাতৃকার চরণে নিবেদিত ছিল।
সে সময়ও অস্থিরতা ছিল; কিন্তু মানুষের মনুষ্যত্ব, বিবেক পূর্ণতায় ভরপুর।
তা না হলে দেশ কি স্বাধীন হতো?
এই গল্প তো তোর জানা!কি রে
ঠিক বললাম তো!”
আমি হতবাক, অবাক চোখে দেখছি, শুনছি গোগ্রাসে।
এক দারুন অনুভূতি, এক দারুণ আনন্দ
আমি আবেগের স্বরে বলে উঠলাম, জানো ঠাকুর
তোমার শান্তিনিকেতনে আমি অনেকবার গেছি।
সেখানে গেলে সত্যি শান্তি খুঁজে পায়; আমার ভীষণ প্রিয়।
এত কাছে জোড়াসাঁকোর বাড়িতে কখনো আমার যাওয়া হয়ে ওঠেনি।
তোমার গানে আমি আমার প্রাণ খুঁজে পাই,
তোমার কবিতা আমার আবৃত্তি করতে ভীষণ ভালো লাগে।
তোমাকে কি দিয়ে অভ্যর্থনা করি বলতো ঠাকুর!
আমার কথা শুনে হাসলেন, বললেন—
“ওরে পাগলি প্রাণের ঠাকুর কে তো প্রাণেই রেখেছিস;
ওটাই তো আমার অভ্যর্থনা।
আমাকে প্রতিনিয়ত মনে করছিস,
এ তো আমার পরম পাওয়া রে।”
বলে মাথায় হাত রাখলেন।
আমি তার চরণে মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম করতে করতে গেয়ে উঠলাম—-
“আমার মাথা নত করে দাও হে প্রভু
তোমার চরণ তলে……………..”

দেখি মা ডাকছে,’ওঠ আর কত ঘুমাবি।’
উঠলাম, শুনতে পেলাম এফএম রেডিও তে বাজছে এই গানটা।
রেশটা অনেকক্ষণ ধরে রইলো!
কি যে এক অদ্ভুত ভালোলাগা-অদ্ভুত ভালোবাসা,
অদ্ভুত অনুভূতি তা বলে বোঝানোর ভাষা নেই।

শুধু মাকে বললাম, কেন ডাকলে?…

Loading

Leave A Comment