প্রবন্ধ

প্রবন্ধ- বোধন

বোধন
– সুজিত চট্টোপাধ্যায়

 

 

আচ্ছা বন্ধুরা, লক্ষ্য করেছেন নিশ্চয়ই , চারিদিকে মানুষের আচরণে, কেমন যেন একটা হামবড়িয়া ভাব তৈরি হয়েছে?

কেউ কাউকে মানতেই চাইছে না। ভাবুন একবার, এই যে এতকাল ধরে শুনে এলাম এবং বিশ্বাস করে এলাম, পুলিশে ছুঁলে ছত্রিশ ঘা, মিথ্যে হয়ে গেল?
জেলের ঘানি টানা, পাথর ভাঙা, আড়ং ধোলাই, সব বিলকুল উধাও?
বেশ..মানবাধিকার বলে একটি ব্যাপার আছে। কোর্টের রায় আছে, বুঝলাম।
কিন্তু জেলের ভেতর খণ্ডযুদ্ধ, মাদকের রমরমা, মুঠোফোন, বেওয়ারিশ আগ্নেয়াস্ত্র, এসব নিত্যকার ব্যাপার নিশ্চয় আদালতের নির্দেশনামায় নেই, তাহলে?

ইঁদুর যখন বুঝলো, বিড়ালটা মাছ পেলেই ল্যাজ নাড়ে, তখনই ইঁদুর তাকে মাছের যোগান দিতে শুরু করলো। চুক্তি হলো, ওই মাছ ভেটের পুরস্কার হিসেবে, ইঁদুর রোজ বেড়ালের পিঠে চেপে ময়দানে হাওয়া খেতে যাবে।
এতেকরে দু’টো কাজ হলো। এক, ইঁদুরের ইজ্জৎ বাড়লো। দুই, বেড়ালের ভয়ে আর লুকিয়ে কিংবা পালিয়ে বাঁচতে হবে না। উল্টে বেড়ালই তাকে পাহাড়া দিয়ে বাঁচিয়ে রাখবে। সুতরাং.. হাম হ্যায় রাজা। কে আমার কী করবি আয়।
অসম চুক্তি। এই চুক্তিতে বিশ্বাসের ব নেই। স্বার্থের সমঝোতা টেঁকসই হয় না। যখন-তখন খারিজ হতে পারে। প্রবল সম্ভাবনা। হলোও তাই। বেড়ালের মাছ বন্ধ, ইঁদুরের হাওয়া খাওয়া শেষ। এবার দুজনেই দুজনের বন্ধুত্ব হারিয়ে বেজায় শত্রু। শত্রুতার পরিণতি যা হবার তাই হলো।

আসলে পদমর্যাদার মান রক্ষা করা জরুরী । কিন্তু মোহ? সে তো আঠালো। সহজে রেহাই নেই। টোপ গিলবেই।
হায়রে, টোপ থাকবে, বঁড়শি থাকবে না! তাই কি হয়! নে, এবার ঠোঁটে বঁড়শির ফলা আটকে ছটফটিয়ে মর। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, ক্ষমতাসীন, তার নিজের দোষেই পদমর্যাদার মান খুইয়ে বসেন। দুষ্কৃতকারীর মান আর ভ্যানরিস্কার হেডলাইট- একই কথা ।
ওসব ভদ্দরনোকের একচেটিয়া অধিকারের জিনিস, দুষ্টদের সে বালাই থাকা বারণ।
আরে বাপু আগে পেট। তারপর যা বলবি বল। খালি পেটে বাপের নামও মনে আসে না।

পুলিশ জানতাম শান্তি রক্ষক। এখন তো দেখছি অশান্তি বর্ধক। আগে দেখতাম পুলিশ অশান্তি-কারিদের তাড়া করে তাড়িয়ে দিয়ে, শান্তি ফিরিয়ে আনছে । এখন দেখছি, তাড়া খেয়ে পুলিশ পালাচ্ছে। চাচা আপন প্রাণ বাঁচা। রক্তাক্ত পুলিশ জনতার হাতে মার খেয়ে, রাস্তায় চিৎপটাং। কিন্তু কেন?
খুবই স্বাভাবিক নিরীহ প্রশ্ন। কেন?

ইঁদুর, বেড়ালকে মাছ খাইয়ে বশ করবে। কিসের স্বার্থে? নিশ্চয় সৎকর্ম হিতকারী উদ্দেশ্যে নয়। বেড়াল বশীভূত হবে কেন? সহজ উত্তর, মোহ, লোভ। লোভে পাপ, পাপে নিপাত। ধ্রুব সত্য।
ক্ষমতার অপব্যবহার, ক্ষমতাকে লাঞ্চিত করে। সাময়িক সুখ অবশ্যই দেয় কিন্তু শেষমেশ পরিণতি ভয়ংকর। কুঠার তখনই গাছের ক্ষতি করতে পারে, যখন গাছেরই একটি অংশ হাতল হয়ে কুঠারের সঙ্গী হয়। এই অসম যোগ, কাঠুরিয়ার ব্যবসায়িক মস্তিষ্কপ্রসূত। লোকে বলবে, এতো জীবন জীবিকার তাগিদে। বোঝা গেল। কিন্তু এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব নিশ্চয়ই সমাজের পক্ষে হিতকর নয়।
তাই কোনও একপক্ষের বা শ্রেণির কুকর্ম, কালের নিয়মে কেবলমাত্র সামাজিক অবক্ষয়ের নিশ্চিত কারণ হয়ে ওঠে।
মানুষ অভ্যাসের দাস। তাই, অনেক কিছুই অভ্যাসবশত সায় দিয়ে চলে। প্রশ্নাতীত থেকে যায়। তবুও মনের মধ্যে কোথাও যেন একটা ঝনঝনানি আওয়াজ তোলে। আর সেই ধ্বনি যখন প্রতিধ্বনিত হয়ে অনেক অনেক মনে ছড়িয়ে যেতে থাকে, তখনই তৈরি হয় ভাষা। প্রতিবাদের কন্ঠস্বর।
কালের নিয়মে মানুষ শিক্ষিত হয়। শিক্ষা আনে জ্ঞানের জ্যোতি। অন্ধকার দূর হয়ে বোধন হয় নবযুগের।
তার পদধ্বনিই কী শুনতে পাচ্ছি, আকাশে বাতাসে? কে জানে হয়তো বা।

Loading

2 Comments

Leave A Comment

You cannot copy content of this page