গল্প- প্রেম স্বপ্ন উড়ান

প্রেম স্বপ্ন উড়ান
– সুজিত চট্টোপাধ্যায়

 

 

মৌ, এক নিঃশ্বাসে গ্লাসের হুইস্কি শেষ করেই, ঝটপট গায়ের সমস্ত আবরণ খুলে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে, একেবারে উন্মুক্ত হয়ে গেল।তারপরেই টেনে টেনে নীলকে উন্মুক্ত করে দিয়ে, তাকে এক ধাক্কায় বিছানায় ফেলে দিয়ে, বাঘিনীর মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে, পাগলের মতো আঁচড়াতে কামড়াতে লাগলো।
নীল একবার বলার চেষ্টা করলো- ‘কী হলো মৌ হঠাৎ..’
মৌ তীব্র উত্তেজনায় জড়ানো গলায় বললো, ‘এসব হঠাৎই হয় নীল, আই লাভ ইউ ডিয়ার..’

এখন মধ্যরাত। মৌ আর নীল- হোটেলের ঝুল বারান্দায় বসে। দূরে সমুদ্র। অন্ধকারে পরিস্কার দেখা যায় না। গর্জন কানে আসে। তট ভিজিয়ে চলে যায় ঢেউ। একের পর এক।
মৌ লম্বা সিগারেট লাইটার দিয়ে ধরিয়ে, একরাশ ধোঁয়া ছেড়ে বললো, – নীল, একটা কথা..
নীল সমুদ্রের দিকে চোখ রেখে বললো,
– কী?
মৌ তার উলঙ্গ লম্বা পা দু’টো আড়াআড়ি ভাঁজ করে, বারান্দার রেলিঙের ওপর তুলে দিয়ে ভাবলেশহীন গলায় বললো, -আমাকে কখনও বিয়ে করার কথা বলো না নীল।’
নীল ঘাড় ঘুরিয়ে মৌ এর দিকে তাকাতেই , মৌ সঙ্গে সঙ্গে বললো, প্লিজ।
বিয়ে মানেই বাঁধা পড়ে যাওয়া। মেনে নেওয়া, মানিয়ে নেওয়া, দ্বিধা- দ্বন্দ্ব, বাছ-বিচার, ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, স্বাধীন-পরাধীন, না..না নীল, সেখানে সব থাকে, দায়িত্ব, কর্তব্য সব সব। শুধু ভালবাসা থাকে না। এক ছাদের নিচে শরীর থাকে, শরীরের চাওয়া পাওয়া থাকে, শুধু প্রেম থাকে না। যা থাকে তা কৃত্রিমতায় ভরা। শুধু চাহিদা পুরণের প্রত্যাশা।
না না নীল প্লিজ, তুমি আমাকে বিয়ে করতে চেয়ো না। আমি আমার প্রেমকে হারাতে চাই না। প্লিজ নীল..
কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে উচ্চারণ করে, একটু থেমে আবারও খুব জোরে জোরে সিগারেট টেনে ধোঁয়া ছাড়তে থাকলো। তারপর একটু মোলায়েম সুরে, নীলের খোলা উরুতে হাত রেখে বললো, – প্লিজ, ডোন্ট মাইন্ড নীল। আমার কথাগুলোকে অন্যভাবে বিচার করো না। বিশ্বাস করো, এ আমার অভিজ্ঞতা। অনেক দেখেছি। বিয়ে নামক তৈরি করা সামাজিক বন্ধন, কীভাবে ধীরে ধীরে বাঁধন হারা হয়ে, ছিন্নভিন্ন হয়ে মাটিতে মিশে যায়।অবহেলিত, লাঞ্ছিত অপমানিত হয়।তখন পড়ে থাকে শুধু স্মৃতি আর চোখের জল। পদ্ম পাতায় টলমল প্রেম। আমার বড় ভয় করে নীল।না না নীল। আমি আমার ভালবাসার মরণ সইতে পারবো না।তারচেয়ে এই ভালো। তুমি আছ আমি আছি আর আছে আমাদের ভালবাসা।
আমি সুখী নীল, আমি সুখী। বিশ্বাস করো এর বেশি আর কিছুই চাই না। কিচ্ছু না। ঘর সংসার, তা তোলা থাক অন্যদের জন্যে। আমার এই বেশ। এই সুখ। এই আনন্দ। বিয়ের সোনার খাঁচায় তাকে বন্দী করো না নীল।

মধ্যরাতের ঘন অন্ধকারে, সুখী নিঃস্তব্ধতাকে ভেঙে খানখান করার ব্যর্থ চেষ্টা চালাচ্ছিলো- খুশিতে ডগমগ ঝিঁঝিঁ পোকার দল আর সৈকতে আছড়ে পড়া ঢেউ এর কামনা সিক্ত শব্দ।

নীল মৌ-এর হাত থেকে, আধ খাওয়া সিগারেটের টুকরোটা নিয়ে একটা হালকা টান দিয়ে বললো, – ইউ আর গ্রেট মাই ডিয়ার।
মৌ গোলাপি ঠোঁটে হালকা হাসি বিছিয়ে আদুরে গলায় বললো, – থ্যাংকস ফর কমপ্লিমেন্ট, বাট হোয়াই?
নীল চেয়ার ছেড়ে উঠে মৌ-এর পিছনে দাঁড়িয়ে ঝুঁকে পড়ে জড়িয়ে ধরে, গালে একটা আলতো চুমু খেয়ে, কানের কাছে ঠোঁট এনে ফিসফিস করে বললো, – তোমার আর আমার মনের স্রোত একই সমুদ্রে মিশেছে মৌ।

কথাটা শেষ করেই আবারও একটা চুমু খেয়ে নীল চেয়ারে এসে বসলো।
তার এই বসে পড়ার মধ্যে, অদ্ভুত একটা নিশ্চিন্ততা আর ভার মুক্ত হওয়ার ইউক্যালিপটাস গন্ধ ছিল। যা, সে গোপন করবার জন্য গেলাসের তলায় পড়ে থাকা হুইস্কি এক চুমুকে শেষ করে দিয়ে, সিগারেটে মৌতাত টান মেরে, ধোঁয়া ছেড়ে বললো, – মৌ, আমারও একটা ইচ্ছে আছে, শুনবে, বলবো?
মৌ নিজের জায়গা ছেড়ে, নীলের কোলে এসে বসলো। নীলের মাথা নিজের বুকের মধ্যে টেনে নিয়ে বললো- বলো, আজ এই মধ্যরাতে সমুদ্রের কাছে দুজনের দুটো ইচ্ছে জানাই।
নীল মৌ-এর উন্মুক্ত স্তনে হাত রেখে বললো, -হাসবে না বলো..
মৌ নীলের কোঁকড়া চুলে বিলি কাটতে কাটতে, অস্ফুট স্বরে বললো, বলো..
নীল গলার স্বরে অদ্ভুত মাদকতা ছড়িয়ে বললো, -মৌ আমি জানি না, পরজন্ম আছে কিনা। কিন্তু যদি থেকে থাকে, আমি সমুদ্রের কাছে প্রার্থনা করছি, আগামী জন্মে আমি যেন মেয়ে হয়ে জন্মাই।
মৌ, অবাক হয়ে নীলের গভীর প্রত্যয়ী চোখের ওপর চোখ রেখে জিজ্ঞেস করলো, – কেন?
নীল পরম আদরে মৌ-এর নিপুণ কটিতটে হাত রেখে, তাকে ঘরে এনে শুইয়ে দিলো নরম বিছানায়। তার পাশে শুয়ে মদিরা ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁইয়ে ফিসফিস করে বললো, আমি জানতে চাই তোমার রহস্য। তোমার প্রেম। তোমার কামনা। তোমার সঙ্গম উপলব্ধি। যৌনতৃপ্তি। তোমার ভালবাসা। সব, সব বুঝতে চাই আমি, নারী হয়ে। পৌরুষবোধ কিছুতেই নারীত্ব স্পর্শ করতে পারে না। কিছুতেই না। আমি নারীত্ব চাই মৌ, আমি নারীত্ব চাই।

এইমুহূর্তে, দুটি নরনারী এমন ভাবে শরীরে, মনে, প্রাণে শঙ্খজোরে মিশে আছে, যেন ধরণীর সমস্ত প্রেম আজ সেখানেই নবজন্ম নেওয়ার আকাঙ্খায় আকুল। প্রেমের স্বপ্ন উড়ানে মাতোয়ারা দুটি প্রেম সিক্ত প্রাণ।
সমুদ্রে ভোরের জোয়ার এসেছে। তটভূমি আবার নতুন করে ভাসবে ।

Loading

Leave A Comment