অণু গল্প

অণুগল্প- ফেরা

“ফেরা”
– উজ্জ্বল সামন্ত

অভিক অল্প বয়সে পিতৃহারা। বিধবা মা ও বড় বোনকে নিয়ে মধ্যবিত্ত সংসার। দারিদ্রতা সঙ্গে লড়াই করতে করতে একসময় বড় হয়ে ওঠে অভীক। আত্মীয়-স্বজন নাম মাত্রেই আছে। অভিক বুঝতে শেখে তার বাবা নেই, জীবনে সংগ্রাম করে দাঁড়াতে হবে। কলেজ পাশ করে জীবন সংগ্রামের পথে নামে। স্পষ্টবাদী হওয়ায় বড় কোম্পানিতে চাকরি করলেও হেনস্থার শিকার হতে হয়। অদম্য জেদ ও লড়াইয়ে ব্যর্থ হতে হতে একসময় সরকারি চাকরিও জুটে যায়। অভিকের দিদি রেনুর বিবাহের পনেরো বছর অতিক্রান্ত। একমাত্র ভাগ্নে তেরো বছরে ওপেন হার্ট সার্জারির পর হঠাৎ হৃদরোগে মারা যায়। বছর তিন‌ পরে একটি কন্যা সন্তান দত্তক নেয়। অভীক বিবাহের জন্য অনলাইন ম্যাট্রিমনিতে আবেদন করে। দু-এক মাসের মধ্যে সুন্দরী শিক্ষিতা মধ্যবিত্ত পরিবারে বিবাহ হয়। অভিক মনে মনে খুব খুশি। কিন্তু তাঁর সুখ স্থায়ী হয়নি, বিবাহের এক দুই মাসের মধ্যে সংসারের চরম অশান্তিতে তাসের ঘরের মতো স্বপ্নগুলো ভেঙে যায়। অকারণে শ্বশুরবাড়ির লোকজন চূড়ান্ত অপমান ও লাঞ্ছনা গঞ্জনায় মান সম্মানে আঘাত আনে কয়েকবার অভীকের পরিবারে। অভীক ও তার মায়ের কিন্তু এতে কোন দোষ ছিলনা। তারা বহুবার বুঝিয়ে বিফল হয়েছিল। অভীক তার স্ত্রীর সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশেছিল। সাধ্যমত তার আবদার ইচ্ছা পূরণ করার চেষ্টা করতো। স্ত্রীর আচার-আচরণ খুব একটা স্বাভাবিক ছিল না। মানসিক অসুস্থতা ছিল নন্দিতার। সন্দেহবাতিক, বদমেজাজী, স্বার্থপর, লোভী, কোন বিশেষণই যথেষ্ট ছিল না নন্দিতার জন্য। একসময় সম্পর্কের কঙ্কালসার চেহারা প্রকাশ পায় নন্দিতার কটূ কথায়। অভিকের সম্মানহানি ও তাকে বিপদে ফেলতে শ্বশুর বাড়ির লোক সব রকম চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এক সময় সম্পর্ক কাঠগড়ায় ওঠে। অভীক এখন ব্লাড প্রেসারের পেশেন্ট। এই মিথ্যা সম্পর্কের ইতি টানতে ডিভোর্সের আবেদন করে। অভিক মন থেকে নন্দিতাকে ভালবেসে ছিল, নন্দিতা ছিল তার স্ত্রীর থেকেও বেশি কিছু। এই সমাজে নারীদের উপর শ্বশুরবাড়ির অত্যাচারের ঘটনা অনেক শোনা যায়, কিন্তু এমন অনেক ঘটনা ঘটে যেখানে নিরীহ শ্বশুরবাড়ির লোকদের ওপর স্ত্রী অত্যাচার করে স্বামীকে বাধ্য করে সম্পর্কের ইতি টানতে। খোরপোষ নিয়ে হয়তো কিছু অর্থ আদায় হয় ঠিকই কিন্তু সম্পর্ক? সম্পর্কে কি আর ফিরে আসা যায়?
কখন যেন অচেনা হয় আইনের চোখে…

Leave A Comment

You cannot copy content of this page