গল্প

গল্প- ভানুমতীর পিত্রালয়ে গমন

ভানুমতীর পিত্রালয়ে গমন
-তূর্য বাইন

 


ভানুমতী নতুন শ্বশুরবাড়ি এসেছে।
আগামী কাল তার বাপের বাড়ি যাওয়ার কথা। ওর বাবা নিজে ওকে নিতে আসবেন।

ভানুমতী খুশিতে ডগমগ।
সকালে উঠে সবে গোছগাছ শুরু করেছে, এমন সময় শাশুড়ি ডেকে বললেন, বৌমা, তুমি তো জান, বাতের ব্যাথায় আমি হাত নাড়তে পারিনে। ওদিকে তুমি তো দেখেছ, তোমার শ্বশুর আবার বাটা মশলা ছাড়া রান্না খেতে পারে না। তুমি এক কাজ করো, অন্তত সপ্তাখানেকের মতো ধনে, জিরে, শুকনো লংকা, আদা, রসুন, আর গরম মশলা শিলে বেটে আলাদা আলাদা করে কৌটোয় ভরে ডিপ ফ্রিজে গুছিয়ে রাখো। ওতেই আমি এই সপ্তাটা কষ্টেসৃষ্টে চালিয়ে নেবখন। দিন সাতেকের মধ্যে তুমি নিশ্চয় ফিরে আসবে!

অগত্যা ভানুমতী বসে গেল শিল-নোড়ায় এক সপ্তার মশলা বাটতে।
শেষ করে যখন উঠল, ততক্ষণে ওর হাতে গোটা ছয়েক ফোস্কা পড়ে তার গোটা দুয়েক গলেও গেছে।

ভানুমতী হাতের যন্ত্রনায় যখন ছটফট করছে, ঠিক তখনি শ্বশুর মশাই ওকে ডেকে পাঠালেন।
বললেন, বৌমা, তুমি তো বাপের বাড়ি চললে, এদিকে আমার দুটো আন্ডার প্যান্টই ছিঁড়ে ফর্দাফাই । নতুন আন্ডার প্যান্ট যে কিনতে যাব, তার কি উপায় আছে? চাদ্দিকে করোনা থিক থিক করছে। তোমার শাশুড়ি তো আবার চোখে কম দেখেন। তুমি বরং ওগুলো একটু সেলাই করে রেখে যেও, না হলে আবার, হে হে হে হে!

সেলাই সেরে ভানুমতী দুপুরে চান করতে যাবে, এমন সময় ননদ বলল, বৌদি, তুমি বাপের বাড়ি চলে গেলে আমার ভুরু প্লাক, পেডিকিওর, ম্যানিকিওর, এগুলোর কী হবে? আমি কি এখন এই করোনার মধ্যে বিউটি পার্লারে যাব?
অগত্যা ভানুমতী ননদের হস্ত-পদসেবায় লেগে গেল।

দুপুরে সে সবে ভাত খেয়ে উঠেছে, এমন সময় দিদিশাশুড়ি ডেকে বললেন, ও লা ভানু, শুনলুম তুই নাকি কাল বাপের বাড়ি যাচ্ছিস? বেশ, বেশ, খুব ভালো। কিন্তু আমার পান ছেঁচার কী হবে? তুই বরং আচ্ছা করে দোক্তা দিয়ে হামান দিস্তেয় সপ্তাখানেকের পান ছেঁচে ফ্রিজে রেখে দে। দেখিস বাপু, ছোট ছোট পুটুলি করে আলাদা আলাদা জরি কাগজে মুড়ে রাখিস, নইলে সব নষ্ট হয়ে যাবে! পেত্যেক দিন ছটা করে পুটুলি, মনে থাকে য্যানো!
রাতে ভানুমতীর বর বলল, কাল তো তুমি চলেই যাচ্ছো, অতএব –,হ্যা,হ্যা,হ্যা,হ্যা!

পরদিন সকালে হোয়াটসঅ্যাপে বাবার মেসেজ পেয়ে ভানুমতী যেন শুকনো ডাঙায় আছাড় খেল।

ভানুমতীর বাবা কানুবাবুর জানিয়েছেন, তাঁর বড়ো সাহেবের স্ত্রীর ঐদিন সন্তোষীমা’র ব্রত। সব যোগাড়যন্ত্র করার ভার পড়েছে কানুবাবুর ওপর। অতএব –
তিনি ফের লিখেছেন, পরের রবিবার উনি নিশ্চয় আসবেন ওকে নিতে।

পরের শনিবার সকালে শাশুড়ি ডেকে বললেন, বৌমা——!
শ্বশুরমশাই ডেকে বললেন, বৌমা—!
ননদ বলল, বৌদি,—–!
দিদিশাশুড়ি বললেন, ও লা ভানু,—!
রাতে স্বামী বলল, তুমি তো—-!

পরের রবিবার সকালে কানুবাবু ভানুমতীকে হোয়াটসঅ্যাপে জানালেন, ঐদিন তাঁর মেজ সাহেবের কুকুরকে ইঞ্জেকশন দিতে নিয়ে যেতে হবে, অতএব —

নিচে দুঃখ প্রকাশ করে লিখেছেন, তুই নিশ্চিন্ত থাক, আগামী রবিবার তোকে নিশ্চয় নিতে আসব।

দুর্ভাগ্যক্রমে পরের রবিবারেও কানুবাবু আসতে পারলেন না। ঐদিন তাঁর ছোটসাহেবের ছেলের ছুন্নত আছে, যোগাড়যন্ত্র যা কিছু সব কানুবাবুকে করতে হবে, অতএব –,
তবে তিনি কথা দিয়েছেন, পরের রবিবার নিশ্চয় আসবেন।

ক্লান্ত বিধ্বস্ত ভানুমতী এই মেসেজ পেয়ে বাবাকে লিখল, বাবা, তুমি আমাকে নেওয়ার জন্যে কোনোদিন আসতে পারো বা না-ই পারো, তাতে আমার কষ্ট হবে না। শুধু বার বার দিন বদল করে আমাকে এভাবে দগ্ধে দগ্ধে মেরে ফেলার তাল কোরো না, দোহাই তোমার!

বি দ্রঃ সাম্প্রতিক কোনো ঘটনার সাথে এই গল্পের মিল খুঁজতে যাবেন না, দোহাই আপনাদের!
স্বত্ত্বঃ তূর্য বাইন।

Loading

Leave A Comment

You cannot copy content of this page