ছুটির ঘন্টা
– অঞ্জনা গোড়িয়া
ঢং ঢং! মা ওইতো শুনতে পাচ্ছি স্কুলের ঘন্টা। স্কুলে যাবো মা। ওমা! বড্ড দেরি হয়ে গেছে। নিয়ে চলো মা স্কুলে। স্কুলের ঘন্টা বাজছে মা। আমি বেশ দেখছি পাচ্ছি, সবাই স্কুলে আসছে। কত দিন স্কুলে যাই নি। আমায় ছেড়ে দাও। একবার যেতে দাও স্কুলে।
বিছানায় শুয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে না আর। আবার বাজলো ঘন্টা। স্কুলে যাবো মা।
লক্ষ্মী মেয়ে আমার। একটু শান্ত হোও সোনা। তুই যে অসুস্থ। জ্বরটা একটু কমলেই আবার স্কুলে যাবি।
ওগো শুনছো, কোথায় গেলে? জ্বরটা যে বড্ড বেড়েছে। মেয়ে আমার ভুল বকছে জ্বরের ঘোরে। একবার যাও না গো, রতন ডাক্তারকে ডেকে আনো।
এত জল পটি দিচ্ছি। মাথায় জল দিচ্ছি। তবু কমছে না। সোনা যে বড্ড কষ্ট পাচ্ছে।
বল না মা, কোথায় কষ্ট হচ্ছে? মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দিই। ঘুমিয়ে পড় সোনা।
কি গো, শুনছো। মেয়ের যে খুব জ্বর। কত কি ভুল বলছে। যাও না গো তাড়াতাড়ি। একবার ডেকে আনো ডাক্তার বাবুকে।
সোনা মেয়ে — জানো মা, কত দিন দেখিনি রহিম, সুমনা বাবলুকে। মাঠে ছুটিনি। প্রার্থনা করিনি। যেদিন শেষ স্কুলে গেলাম। সুমনা একটা নতুন পুতুল আনবে বলে ছিল। মাটির পুতুল। ওর মা বানিয়েছে। আমার জন্য। আমরা রোজ টিফিনে পুতুল খেলতাম। স্কুলের পিছনে একটা বড় বট গাছ। তার তলায় বসে পুতুল পুতুল খেলি। টিফিনে মিড ডে মিল খেয়ে পুতুল খেলি।
সেই যে স্কুলটা বন্ধ হলো। আর খোলে নি।
আর কি স্কুলে যাবো না? আমায় একটু তুলে ধরো মা। এত কষ্ট হচ্ছে কেন? আমার কি আর স্কুল যাওয়া হবে না?
মা—
একটু দিন ভালো হলেই আবার স্কুল যাবে সোনা। তুই যে আমার সোনা মেয়ে।
নতুন ব্যাগ কাঁধে ছুটতে ছুটতে যাবি। একবার সেরে ওঠ সোনা। আর বকবো না। যা ইচ্ছে তাই করিস। বাবা ডাক্তার আনতে গিয়েছে। এখুনি এসে পড়বে। ভালো ভালো ওষুধ খেলেই সেরে যাবি মা।
আমার কাছে এসো না মা। আমি আর ভালো হবো না। ডাক্তার কাকু আসবে না। কেউ আসবে না। আমি জানি।
ওই যে আবার টিফিনের ঘন্টা বাজলো। মিড ডে মিল দিচ্ছে রাঁধুনিদি।
ঘন্টা দিতে খুব ইচ্ছে করছে। একবার নিয়ে চলো মা। স্কুলের ঘন্টার ঢং ঢং শব্দ শুনতে বেশ লাগে মা। নিয়ে চলো মা। খুব ঘুম পাচ্ছে। একটু ঘুমাই।
কি হলো সোনা? সাড়া দিচ্ছিস না কেন? নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছিস কেন?
ওগো তাড়াতাড়ি এসো। আমার খুকি আর সাড়া দেয় না।
চেঁচিয়ে ওঠে মা।
-চোখ খুলে তাকা মা? স্কুলে যাবি না? স্কুলের ঘন্টা বাজছে।
একবার সাড়া দে সোনা।
ঢংঢং ঘন্টা বাজছে সোনা। ছুটির ঘন্টা।
বাজলো ছুটির ঘন্টা।