Site icon আলাপী মন

গল্প- লটারি

লটারি

-রাখী চক্রবর্তী

বাবু অনিল চন্দ্র সেই বারো বছর বয়স থেকে লটারি জেতার স্বপ্ন দেখত ।এক টাকা হাতে পেলেই লটারির দোকানে ছুটত ।বড়লোক হতেই হবে ওকে।
লটারির টিকিট কেটে অনেক টাকা পাবে অনেক বড়লোক হবে এই তালেগোলে ঠিক করে লেখা পড়াটাও হল না ওর ।
টেনেটুনে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ল।
সংসার বলতে মা বাবা । বাড়ি ভাড়া নেওয়ার সময় বাড়িওয়ালাকে অনিল চন্দ্র বলেছিল, সংসার বলতে মা বাবা আছে।পনেরো বছরের ছেলের কথা শুনে দয়াশঙ্কর বাবু হেসেই খুন হলেন।শেষে ভাড়াটিয়া হিসাবে রেখে দিলেন ওদের ।অনিল চন্দ্রর বাবার ছোট্ট একটা মুদির দোকান ।সেই দোকানের আয় দিয়ে কোনমতে বাড়ি ভাড়া মিটিয়ে পেট চলত তিনজনের ।এর থেকে দু এক টাকা বাঁচিয়ে লটারি টিকিট কিনত অনিল চন্দ্র ।পাঁচ বছরে ও একটা টাকা জিততে পারল না লটারির টিকিট কেটে ।শেষমেশ মিস্ত্রির কাজে যোগ দিল অনিল চন্দ্র ।যোগারি হিসাবে যুক্ত হল কাজে কিছুদিনের মধ্যে রাজমিস্ত্রি হয়ে গেল ।তারপর
চাঁদ মিস্ত্রি নামকরণ হল ওর। এক ডাকে সবাই চেনে।
হিসাবেও পাক্কা কাজেও দক্ষতা আছে চাঁদ মিস্ত্রির।পঁচিশ বছর বয়স হতে না হতেই অনিল চন্দ্র টোপর পড়ে ছাদনাতলায় গিয়ে বসল। ওদের সংসারের হাল ফিরেছে এখন অনেকটাই।
অনিল চন্দ্র বিয়ের পর লটারির টিকিট কেনার ফাঁদে আর পড়েনি।চাঁদ মিস্ত্রি মন দিয়ে কাজ করছে ।
একদিন চাঁদ মিস্ত্রি বাড়ি ওয়ালাকে বলল,জেঠু তোমার বাড়ির গেটের সামনের দেওয়ালে একটুস খানি লিখে দেবে “চাঁদ মিস্ত্রি এখানে থাকে ” চক দিয়ে লিখলেই হবে।
বাড়িওয়ালা জেঠু বলল,সে তো বৃষ্টি হলেই নষ্ট হয়ে যাবে ।
–সে হোক ।এখন শীতকাল বৃষ্টি হবে না।আর বৃষ্টি হলেও আমি আবার চক দিয়ে লিখে দেব।
বাড়িওয়ালা জেঠু চাঁদ মিস্ত্রির মাথায় হাত ভুলিয়ে বলল, ঠিক আছে ।

একবছর হল চাঁদ মিস্ত্রির বিবাহিত জীবন।চাঁদ মিস্ত্রির শ্বশুরমশাই জামাইষষ্ঠীর নিমন্ত্রণ করতে এসেছে জামাইয়ের বাড়িতে।চাঁদ মিস্ত্রি শ্বশুরমশাইয়ের আপ্যায়নে কোন ত্রুটি করেনি।দুপুরে ভোজন দারুণ হল।সন্ধ্যা বেলায় উনি চলে যাচ্ছেন , যেতে যেতে জামাইকে বললেন বাবাজীবন এলআইসি করেছো তো ?
চাঁদ মিস্ত্রি মাথা নাড়িয়ে বলল ,না বাবা আমার এলআইসি ভালো লাগে না আমার তো ভালো লাগে, ,

–কি ভালো লাগে বলো?

কমলকলি বলল বাবা তোমার জামাই শুধু লটারিকেই ভালবাসে।আগে প্রচুর লটারির টিকিট কেটেছিল একটা টাকাও ওর ভাগ্যে জোটেনি,তবে এখন আর লটারির টিকিট কেনার নেশা নেই তোমার জামাইয়ের ।

–ঠিক আছে মা।আমিই এলআইসি করিয়ে দেব।

চাঁদ মিস্ত্রি বৌকে নিয়ে জামাইষষ্ঠীর নিমন্ত্রণ রক্ষা করে শ্বশুর বাড়ি থেকে নিজের বাড়ি ফিরল ।বাড়ি ফিরে রাগে গজগজ করতে লাগল চাঁদ মিস্ত্রি ।
মা বাবা রাগের কারণ জানতে চাইলে বলল,এলআইসি করিয়ে দিল কমলকলির বাবা।
–ওও এই ব্যাপার, তা ভালোই তো
–তোমাদের কাছে তো সবই ভালো বলে ঘরে চলে গেল চাঁদ মিস্ত্রি ।

কমলকলি বিছানায় শুয়ে বলল,জানো তো পনেরো বছর পর অনেক গুলো টাকা হাতে পাবো।তখন কিন্তু হিরের কানের দুল চাই আমার ।
চাঁদ বলল,এর মধ্যে আমি মরে গেলেও কিন্তু হাতে অনেক গুলো টাকা পাবে ।
কমলকলি মুখ ফুলিয়ে পেছন ফিরে শুয়ে পড়ল।
দিন যায় এক এক করে চাঁদ মিস্ত্রি আজ ছাদ ঢালাইয়ের কাজে গেল ।অনেক বড় কাজ।ফ্ল্যাটের ঢালাই হবে ।খাওয়া দাওয়া হবে ।চাঁদ মিস্ত্রি ভেবে রেখেছে যে দেড় কাঁটা জমি কিনেছে ফটকা বাজিতে না
তিল তিল করে টাকা জমিয়ে সেই জমিতে বাড়ি বানাবে ছাদ ঢালাই দিয়ে ,কত স্বপ্ন চাঁদ মিস্ত্রির চোখে ।ওই সিমেন্টের গোলা দে, চটপট ,ঝপাঝপ মশলা মাখা কড়াই আসছে, শেষ হচ্ছে নিমেষে,,,

চাঁদ মিস্ত্রি বাড়ি ফিরল সন্ধ্যা বেলায় ।
কমলকলি সাজুগুজু করে অপেক্ষা করছিল সেই বিকেল থেকে ।কি একটা সুখবর দেবে চাঁদ কে।
–ও বৌমা আমাকে তোমার শ্বশুর মশাইকে একটু বলো না কি সুখবর।
নাতি নাতনির মুখ দেখব নাকি বলো না মা !
কমলকলি মুখ টিপে হেসে ঘরে চলে গেল ।
চাঁদ বাড়ি ফিরে
চানটান সেরে ঘরে ঢুকল কমলকলিকে দেখে চোখ আর ফেরাতে পারছে না সে।কি পরিপাটি করে খোঁপা করেছে ,কপালে সিঁদুরের টিপ জ্বল জ্বল করছে ।কমলকলি চাঁদকে দেখা মাত্রই
আলমারি থেকে একটা ছোট্ট কাগজ বার করে চাঁদকে দিয়ে বলল,বাড়ি বানিয়ো এই টাকা দিয়ে ।হিরের কানের দুল এখন লাগবে না।
চাঁদ কাগজটা খুলে দেখল লটারির টিকিট লাকি ড্র 11 1 2020 মানে আজ।কি এটা কমলকলি ?
কমলকলি চাঁদের গলা জড়িয়ে ধরে বলল বাবাকে একটা লটারির টিকিট কাটতে বলেছিলাম আমার নাম করে ।বাবা কেটেছিল দুদিন আগে ।আজ সকালে বাবা লটারির দোকানে গিয়ে মিলিয়ে দেখেছে এক কোটি টাকার লটারি জিতেছি আমরা ।বাবা সুখবর দিতে এসেছিল এখানে ।বাবা মাকে এখনও বলিনি ।চলো, আমরা যাই বাবা মাকে বলে লটারির দোকানে ।তোমার বাড়ির স্বপ্ন এবার পূর্ণ হবে ।চাঁদ কমলকলিকে জড়িয়ে ধরে বলল,আমি এত বছর ধরে যা করতে পারিনি তুমি অনায়াসে করে ফেললে।কমলকলি হেসে বলল সময় বুঝলে সময়ই সব ঠিক করে কে কখন কিভাবে জিতবে ।আমরা তো শুধু অপেক্ষা করি সময়ের ,ভালো সময়ের।

Exit mobile version