গল্প

গল্প- আগন্তুক

আগন্তুক
– ইন্দ্রনীল মজুমদার

হলঘর। লোকের সমাগম। সামনের সারিতে সাংবাদিকদের ও অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিদের ভিড়। অনুষ্ঠানটির আয়োজিত হয়েছে ‛সেরা উদ্ভাবনী পুরস্কার’ প্রদানের জন্যে। সঞ্চালক বলে উঠলেন, “এ বছরের সেরার সেরা উদ্ভাবক যিনি একাধারে অজ গ্রামে জ্বালিয়েছেন শিক্ষার আলো, তিনি আবার ‛তারার আলো’ ফুটিয়েছেন বিভিন্ন গ্রামে এবং এর সাথেও ভিডিওর মারফতে বিভিন্ন বিষয়ের শিক্ষাকে পৌঁছে দিয়েছে সবার দোড়গোড়ায়। এর আগে তিনি রাজ্য সরকারের বিজ্ঞান এবং শিক্ষা দপ্তর থেকে পুরস্কার লাভ করেছেন। তাই, তাঁর আর পরিচয়ের দরকার নেই, প্লিজ ওয়েলকাম, এবারের ‛সেরার সেরা উদ্ভাবক’–মিঃ শুভজিৎ চক্রবর্তী। একটা জোরে হাততালি।”

খুব জোরে হাততালির আওয়াজে স্বাগত জানানো হলো শুভজিৎ-কে। শুভজিৎবাবু পুরস্কার নিলেন। পুরস্কার গ্রহণের পর তিনি সাংবাদিকদের ‛প্রশ্নত্তোর পর্ব’-এর সম্মুখীন হলেন। এক সাংবাদিক জিজ্ঞেস করলেন, “পুরস্কার পেয়ে কেমন লাগলো?” শুভজিৎ হেসে উত্তর দিলেন,–“মনে হলো আমার ‛শিক্ষার আলো’, ‛তারার আলো’ চ্যানেলের সোনার মুকুটে আরেকটি পালক জুড়ল। অন্তর থেকে শান্তি পেলাম এটা জেনে যে আমার সমস্ত শ্রম মানুষের উপকারে লাগাতে পেরে সার্থক হলাম।” স্মিত প্রশান্তির হাসি হাসেন শুভজিৎ।

এবার অন্য একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করলেন, “আপনার এই জার্নিটা কিরকম ছিল? মানে, আজকের এই দিনটির জন্য অনুপ্রেরণা আপনি কোথা থেকে পেয়েছেন? কিছুটা বিলম্বিত করেন শুভজিৎ। যেন আপন মনে তাঁর জার্নিটার কথা ভাবতে থাকেন। সত্যি তো কি শোচনীয় অবস্থা থেকে আজকের এই অবস্থায় আসতে শুভজিৎ-এর জীবনে সে দিনটার প্রভাব যেন ফ্ল্যাশব্যাকে খুঁজে পান তিনি। সেই এক বিশেষ দিন….. যাই হোক একটু স্মিত হেসে শুভজিৎ বলেন, “আমার এই আজকের দিনটায় আসার জন্য একটি বিশেষ দিনের কথা বলতেই হয়। দিন বলার চেয়ে সময় বলাই ভালো। কারণ সে সময়টায় ‛হতাশা, প্রেমে ভাঙ্গন, চাকরি খোয়ানো আরও কত কি! ডিপ্রেশন থাবা বসিয়েছিল গোটা মস্তিষ্কে। যদি পুরোটা বলি তবে আজ মনে হয় সেটা যেন জাস্ট একটা গল্প, যা রূপকথাকেও হার মানাবে। আপনাদের সাথে আজ গোটা ঘটনাটাই শেয়ার করতে চাই। আগে থেকে বলে নিচ্ছি যে ঘটনাটা বেশ বড়ো, ধৈর্য্য ধরে শোনার জন্য আগাম ধন্যবাদ। তাহলে, শুরু করা যাক ‛বন্ধুর পথ থেকে মসৃণ পথের’ এক অবিশ্বাস্য জার্নি‌।”

হলঘরে কেবল একটাই শব্দ গর্জে উঠলো, “নিশ্চয়ই, শুরু করুন।”

এরপর শুভজিৎ তাঁর জীবনের এক গল্প বলা শুরু করলেন। হলঘরে তখন যেন একেবারে ‛পিনড্রপ সাইলেন্স’।

“দশ বছর আগের কথা। লেখাপড়ায় ভালোই ছিলাম। একটি নামকরা বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে বি.টেক. ভালো রেজাল্ট করে পাশ করি। একটি বেসরকারি আন্তর্জাতিক কোম্পানিতে যোগ দিই। এক বছর বলতে গেলে গাধার মতো খাটাখাটনি করালো। কিন্তু বেশ কিছুদিন পর বুঝতে পারি যে কোম্পানির সো-কল্ড ‛নোংরা রাজনীতি’-র পাঁকে আমিও জড়িয়ে পড়েছি। যে বস আমাকে নিজের সন্তানের মত স্নেহ করতেন সেই বসের কাছে আমি চক্ষুশূল হয়ে উঠলাম। একদিন বস তাঁর ঘরে আমাকে ডেকে পাঠালেন। যথেচ্ছভাবে আমাকে অপমান করা হলো সেখানে। বুঝতে পারলাম অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বসের কানে আমার নামে বিষ ঢেলেছে। আসলে, কাজ আমি ভালোই পারতাম তাই আমার প্রমোশন আটকাতে আমার প্রতিদ্বন্দ্বীরাই এ কাজ করেছে–এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবুও আমি বস-কে বোঝাবার চেষ্টা করি। কিন্তু বস নাছোড়। অবশেষে, তিনি আমাকে ‛রিজাইন লেটার’ ধরালেন। আমার বিনা মেঘে বজ্রপাত ঘটলো। এমন আঘাত কোনোদিনও পাইনি। চোখের জল কোনোরকমে চেপে অফিস থেকে বের হলাম। আসলে বেসরকারি কোম্পানিগুলিতে এধরনের ‛জব রিস্ক’ থেকেই থাকে। একজনের পেছনে দশজনের লাইন থাকে, একটা পদের জন্যে একশো জন অ্যাপ্লাই করে। বাড়িতে যাবার সময় মাঠে বসলাম। ভাবলাম, মোনালিসাকে ফোন করি। আমার মোনালিসা, আমার প্রেমিকা, আমার ‛স্যুইট হার ডার্লিং’। মোনাসিলার কাছে হয়তো সান্ত্বনা পাব। কিন্তু অবাক ব্যাপার, মোনালিসা আমার কথা শুধু শুনেই গেল। প্রত্যুত্তরে কিছুই বললো না। কেবলমাত্র শেষে বললো, “সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে শুভজিৎ। কিছু চিন্তা করো না। ঘুমিয়ে পড়ো ডার্লিং।”

বাড়ি গেলাম। দাদু-দিদার সাথে বিশেষ কথা বললাম না। ও, এখানে বলে রাখি আমার বাবা-মা শিলিগুড়িতে থাকেন। পড়াশোনার জন্য কলকাতায় দাদু-দিদার বাড়িতে থাকি। চাকুরীও এখানেই হয় তাই ওই বাড়িতেই ছিলাম। দিদা ব্যাপারটা হয়তো কিছুটা আঁচ করেছিলেন তাই বারবার জিজ্ঞেস করছিলেন যে শরীর ঠিক আছে কিনা। আমি প্রতিবারই হাসিমুখে এড়িয়ে যাচ্ছিলাম, “কই, কিছুই তো হয়নি। ঠিকই তো আছি!” বলে। রাতে বিশেষ কিছু খেলাম না। আসলে খেতেই ইচ্ছে করছিল না। তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়লাম।

কিন্তু ঘুম কিছুতেই এলো না। কিছুতেই ঘুম আসছে না দেখে মোনালিসাকে টেক্সট করলাম। আশ্চর্যজনকভাবে কোনো রিপ্লাই পেলাম না। বেশ অনেকগুলো টেক্সট করলাম কিন্তু রিপ্লাই-এর ‛আর’-ও পেলাম না। এরকম কত রাত অবধি মেসেজিং চলেছে আমাদের মধ্যে তার হিসেব নেই। কত মনের সুখ-দুঃখের কথা শেয়ার করেছি। হয়তো আজ বেচারি ঘুমিয়ে পড়েছে। কাল সকালে হয়তো রিপ্লাই পাব।এই ভেবে ঘুমিয়ে পড়লাম। পরদিন সকালে উঠে রিপ্লাই না পেয়ে হতাশ হলাম। এরপর বেশ কয়েকবার ফোন করলাম কিন্তু ফোন তুললো না। তারপর ফোন করাতে সে যা বলল তা স্বপ্নেও ভাবিনি। ফোনের ওপার থেকে যা শুনলাম তা এই-

“তুমি একটা অপদার্থ শুভজিৎ। তোমার দ্বারা কোনদিন কি হয়েছে? কি করেছো আমার জন্যে? তার উপর আবার তোমার চাকরি গেল। চাকরি তো যাবেই তুমি তো যা একটা গাধা! প্রভাসকে দেখো সে কত স্মার্ট, হ্যাণ্ডসাম আর তুমি একটা ‘গেঁয়ো ভূত’, ইডিয়েট কোথাকার! আজ থেকে তোমার সাথে আমার ব্রেক আপ। আর কোনোদিন যদি ফোন বা মেসেজ করেছ তো মরেছ।সাবধান!”

এই বলে ও আরও নানা অকথ্য ভাষা ব্যবহার করে (যা মোনালিসার মতো মেয়ের কাছ থেকে আশা করিনি) যা তা বলে সে ফোন রেখে দিল। আমার কোনো কথা বলার ভাষা ছিল না। এই প্রথম বিশাল এক ধাক্কা খেলাম সামলানো গেল না। চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে গেল। মোনালিসা জন্য কি কিছুই করিনি? কত টাকা খরচ করেছিলাম ওর জন্য তার হিসেব নেই। কতদিন হয়েছে অফিস থেকে বেরিয়ে ক্লান্ত শরীর নিয়েও কোনো এক নামজাদা হোটেল কিংবা শপিং মলে মোনালিসার সঙ্গে দেখা করেছি। কত খরচ করেছি ওর জন্যে। যা চেয়েছে তাই দিয়েছি। ওর ভাইয়ের পড়ার ও যাবতীয় ফূর্তির খরচও মিটিয়েছি। নিজের দুঃখ কষ্ট ওকে একবারের জন্যও বুঝতে দিইনি। নিজে না খেয়ে টিফিনের খরচ বাঁচিয়ে তা খরচা করেছিলাম মোনালিসার জন্য গিফট্‌ কিনবার জন্য। কিন্তু এর বিনিময়ে কিছুই পাইনি। আসলে মোনালিসার কাছে কোনোদিন কিছু চাইনি শুধু অন্তর দিয়ে ভালোবেসে গিয়েছি। মোনালিসার দাবি কিন্তু সমস্তই মিটেয়েছি। আর প্রভাস! তার সম্পর্কে আর কি বলব? লেখাপড়ায় খারাপ ছিল। অল্প বয়স থেকেই মদ, জুয়া, গাঁজা কোনো নেশাই তার বাদ ছিল না।মেয়েবাজিও প্রচুর করেছে। আমার অফিসের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী সে। সম্প্রতি বসকে তৈলমর্রদন করে তার প্রমোশন হয়। কাজের বেলায় সে আমার কাছে কিছুই নয় বলে আমাকে হিংসা করতো। আমার শত্রু পক্ষের লোক বলা যায়। কিন্তু আমি সৎভাবে কাজ করতে চাইতাম। তৈলমর্দনের পদ্ধতিটি কোনোদিন শিখিনি। তাই অফিসে হাড়-ভাঙ্গা খাঁটুনি খেটেও প্রমোশন জোটেনি।
বড়ো ব্যথা পেলাম। কিন্তু যা গেছে তা গেছে এখন উঠে পড়ে লাগতে হবে চাকরির খোঁজে। কিন্তু দুপুর পর্যন্ত ইন্টারনেট ঘেঁটে কোনো জব ওপেনিংস পেলাম না। টেবিলে মাথায় হাত দিয়ে ভাবছি এমন সময় পাড়ার মস্তান বুড়ো কলিং বেল বাজিয়ে দাদুকে দশ হাজার টাকা দেবার হুমকি দিল। তা না দিলে এখান থেকে উঠিয়ে দেবে বলে রীতিমতো শাসাছে সে।

প্রায় দুই মাস কাটলো এখনো কোন চাকরির ব্যবস্থা হলো না এদিকে আমাদের অবস্থার অবনতি করতে লাগলো বিশেষ করে আর্থিক অবস্থা। কলেজে পড়াকালীন এডুকেশনাল লোন নিয়েছিলাম, সেটা শোধ করতে হচ্ছিল। আগের মাইনেগুলোর থেকে টাকা দিচ্ছিলাম কিন্তু সেই টাকা শেষ হলে টাকা কোথায় পাবো? এই চিন্তায় রাতের ঘুম উড়ে গেছে। টাকার অভাবে বাবা মাকেও টাকা পাঠাতে পারছিলাম না। এমনকি এদিকে বাড়ির ভাড়া দু-তিন মাস দেওয়া হয়নি। প্রমোশন হয়নি তাই টাকার অভাব আরও দেখা দিয়েছে।এদিকে বাড়িওয়ালা রোজ দাদুকে তাগাদা দিচ্ছে ভাড়ার জন্যে। সেদিন হুমকিও দিয়ে গেছে যে, “ভাড়া না দিলে এবার কিন্তু আর শুনবো না। সোজা পাড়ার মস্তান ডেকে বাড়ি ছাড়া করে ছাড়বো।” দাদু প্রতিবারেরই মতো শান্ত গলায় বলেছেন, “দেবো, পরের মাসে সমস্ত ভাড়া মিটিয়ে দেবো।” এদিকে দাদুর শরীরের অবস্থাও ভালো নয়। আমি তখন কি করি ভেবে না পেয়ে চরম মানসিক বিষাদে ভুগতে লাগলাম। এদিকে কোনো মনোবিদকে দেখাবার সামর্থ ছিল না। ডিপ্রেশন ক্রমশ কুরে কুরে খেতে লাগল আমায়। একদিন সকালে পুরো ব্রেকফাস্ট না করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লাম। দিদা জিজ্ঞেস করলেন, “কোথায় যাচ্ছিস বাবা? পুরোটা খেয়ে যা।”

-না দিদা, ইচ্ছে করছে না। বরং বন্ধুর বাড়ি থেকে ঘুরে আসি।

আসলে জীবনের যা চরম সিদ্ধান্ত নেবার তা নিয়ে ফেলেছি অর্থাৎ ‘আত্মহত্যা’ করবো। কিন্তু সাহসে কুলোচ্ছিল না। তাই ট্রেন, বাস ইত্যাদি ধরে চলে এলাম ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে কোনো এক গ্রামে। একটা ভাঙ্গা বাড়ি, হয়তো বহুকাল আগে অনেকে থাকত এখন প্রায় ভগ্নপ্রায় এরকম এক বাড়ির ভেতর আশ্রয় নিলাম। বাড়িটি শুনশান, কেউ কোথাও নেই, চারিদিকে গাছপালা। আর তখন বিকেল হয়ে গেছে আর তাছাড়া বেশ ভালো হওয়া দিচ্ছে। এমনিতে ক্লান্ত শরীর তার উপর হঠাৎ কেমন একটা মাথা ঝিমঝিম করতে লাগল, যেন নেশার ঘোরে চলে গেলাম। তাই দু’-হাতের কনুই হাঁটুর উপর রেখে মাথা গুঁজে ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুম ভাঙলো এক অপরিচিত কন্ঠে- “মহাশয়, কি ঘুমিয়ে পড়েছেন?”

ধড়মড় করে উঠলাম। দেখি সাদা পায়জামা, পাঞ্জাবি পরা এক ভদ্রলোক। দেখতে বেশ শৌখিন। আমাকে দেখে সেলাম জানালেন। আমিও প্রতি নমস্কার জানালাম। আমি উঠে বললাম, “হ্যাঁ, এই একটু তন্দ্রা চলে এসেছিল।”

-মশাই বুঝি কলকাতার?

-হ্যাঁ

-আপনার তো চারিদিকের অবস্থা খুবই শোচনীয়। চাকরি নাই, প্রেমিকা চইল্যা গেসে….

আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “আপনি, আপনি কে? আপনি কি করে জানলেন এইসব?”

আগন্তুকটি হাসলেন আর বললেন, “আমি সবই জানি। আপনার ‘আত্মহত্যা’ করার ইচ্ছে হয়েছে। কিন্তু সাহসে কুলোচ্ছিল না তো? তাই এখানে আইলেন কেন্‌?

প্রায় কেঁদে ফেলার মতো বললাম, “ভাগ্যের দৌড়ে। না না ভুল বললাম কারণ ভাগ্যদেবী আমার প্রতি প্রসন্না নন, তো আমার আবার ভাগ্য কিসের?

আগন্তুক হেসে বললেন, “Man is the maker of his own destiny-অর্থাৎ মানুষ নিজের ভাগ্য নিজেই গড়ে। কেউ অস্ত্র তুলে নরহত্যা করে ভগবানের নাম নিয়া আবার কেউ ভগবানের নাম নিয়া মানুষ সেবা করে।”

-হ্যাঁ, তা তো বটেই! কিন্তু……..আমার জীবন যে পুরোপুরি অন্ধকার এখন মৃত্যু ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই। এই সূর্য যা এখন ডুবতে বসেছে তা কাল আবার উঠবে কিন্তু আমার জীবনের সূর্য যে ডুবে গেছে তা আর কোনোদিন উদিত হবে না। এই জীবনটা আমার কাছে একটা বোঝা ছাড়া আর কিছু নয়। তাই এই বোঝা নামাবার জন্য আমি আত্মহত্যা করতে চাই।”

-তা রেললাইন তো সামনে। যাও গে আত্মহত্যা ক্যইরা আসো। তাছাড়া দড়ি আনো নাই কেন? বিষ খাইয়া মরতি পারতে।

এবার কেঁদে কিরে উঠবো আর কি, “কিন্তু সাহসে কুলোচ্ছিল না। হাজার হোক এই জীবনটাকে শেষ করে দিতে মন চাইছিল না। তবে এখন ঠিক করেছি আর নয়….. এবার দেব জীবনটাকে শেষ করে।”

আমি ওখান থেকে বেরিয়ে রেললাইনের দিকে অগ্রসর হওয়ার জন্য পা বাড়িয়েছিলাম এমন সময় আগন্তুকটি ডাকলেন,”দাঁড়াও। অন্ধকারে একা যাইতাছ ক্যান্‌? আত্মহত্যা করবার জন্যে?

করুণ স্বরে বলি, “আর কি!”

-আরে পাগলের মতো করো কি?

-এছাড়া আর কি উপায় আছে?

-আত্মহত্যা করা যে মহাপাপ। এমন কাজ কখনোই করবা না…..

-কেন? তুমি কি আমাকে বাঁচাতে পারবে? পারবে আমার চাকরি ফেরাতে? পারবে মোনালিসাকে, আমার ডার্লিংকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিতে? পারবে? পারবে বাড়িওয়ালার টাকা মেটাতে? পারবে না তো তবে দূর হও, অনেক কথা বলেছি আর ভালো লাগছে না। আ-আমি মরতে চাই। আ-আমাকে মরতে দাও। Let me commit suicide.

আগন্তুক এবার ম্লান বিবর্ণ হাসলেন। আমার বিরক্তি আরও বেড়ে গেল। তারপর পাল্টা জিজ্ঞেস করলেন, “আর কিছু উপায় ভাইব্যাছিলে এতদিন?”

এবার মাথা গরম করে বললাম, “ভেবেছিলাম তো। ভেবেছিলাম সরকারি চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য ভর্তি হবো কিন্তু বিভিন্ন ইনস্টিটিউটে ফোন করে তাদের কোর্স-ফি শুনে পিছিয়ে আসি। অত টাকা আমার কোথায় আর তাছাড়া ওখানে পরেই যে চাকরি পাব তার নিশ্চয়তাই বা কি?”

এরপর প্রায় কেঁদেই বললাম, “নাঃ আর এ জীবন নয়। এবার আমাকে যে কোনো উপায়ে একে শেষ করতে হবে।”

এবার আগন্তুক যা বললেন তা এই, “কি বোকা গো তুমি! এত ভালো লেখাপড়া করেছ। বাবা-মায়ের কত্ত স্বপ্ন তোমাকে নিয়া। তাঁরা লোন নিয়া, নিজেদেরকে কষ্ট দিয়া তোমাগো লেখাপড়া করিয়াছেন। আর তুমি একটা কুড়ি হাজার টেকার চাকরির জন্য নিজে মহামূল্যবান জীবন শেষ করে দিবা? কি বোকা তুমি! আর ওই কার একটা নাম কইল্যা…ও হ্যাঁ মোনালিসা……হেঃ একটা মাইয়ার পেছনে জীবনটাই শেষ করতে যাচ্ছ! ও তো তুমার টেকার লোভে তুমার সাথে সঙ্গলাভ ক্যইরা ছিল। এখন তোমার চাকরি নাই তাই টঙ্কা নাই তাই সে এখন তোমার শত্রু প্রভাসের পকেট সাফাই করসে।

-মানে?

-মানেটা হইলো গিয়া তুমি আলেয়ার আলো দেইখ্যা তার পিছনে ছুটছিলা…..আরে তোমার বাবা-মায়ের কথা ভাবো….. বৃদ্ধ দাদু-দিদার কথা ভাইব্যা দেখো….অন্তত একবার নিজের জীবনের কথা তো ভাবো। মরীচিকার পেছনে ছুইট্যা কোনো লাভ নাই।

এত কিছু শোনার পর আমার মন একটু গললো। একটু শান্তি পাচ্ছি যেন। তবু কাঁদো কাঁদো ভাব নিয়ে বললাম, “তাহলে এখন উপায়?”

-চাঁদের জোৎস্নার আলো দেইখ্যা চাঁদের প্রেমে কত কবি না পড়েছিলেন। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বুদ্ধিমান তাঁরা টেলিস্কোপ বানায়্যা চাঁদকে পর্যবেক্ষণ ক্যইরা দেইখ্যাছিলেন চাঁদের কলঙ্ক এবং তার আলো নিজের নয় তা আসলে সূর্যের। তুমি চাঁদকে ধ্যইরা বসে আছ ক্যান? যখন তুমি নিজেই একজন সূর্য। তোমার নিজেরই যখন এত আলো আর শক্তি আছে তখন তুমি খামোখা অন্যের আলো ও তেজের জন্যে প্যইরা থাকবে ক্যান্‌?

-মানে? (বেশ শান্ত গলায় বললাম)

-মানে ভেরি সিম্পেল। তুমি নিজের কথা ভুইল্যা গিয়া অন্যের কথা শুইন্যা এক আন্তর্জাতিক কোম্পানিতে ঢুকলা রোজগারের নিমিত্তে। দিনরাত পাগলের মতো খাইট্যা, মাথার ঘাম পায়ে ফেইল্যা কি তৈরি হইলা? না একজন বিদেশিদের চাকর! যে কিনা নিজের দ্যাশের জন্য কাজ না ক্যইরা করতাছে পর দ্যাশের জন্যে। হায় আল্লাহ্‌, কি বুদ্ধি তোমার?

-এখন তাহলে আমার কি করণীয়?

-ওই যে কইলাম নিজে আলো দিতে পারবা জেনেও আলেয়ার আলোর পিছনে ছুটছিলা। আচ্ছা কও তো দেখি তুমি কিসে পারদর্শী? একটু ভাইব্যা কও কেমন।

আমি অনেকক্ষণ ভাবলাম তারপর আকস্মিক বললাম, “কলেজে থাকাকালীন পাওয়ারপয়েন্ট প্রেসেন্টেশনে নানান প্রজেক্টের স্লাইড বানাতাম। সেখান থেকে বিভিন্ন বিষয়ের স্লাইড বানাবার একটা নেশা ধরে যায়। আর তাছাড়া, আরেকটা শখ আছে বৈকি।

– তা কিসের কও দেখি? (আগন্তুক হেসে হেসে বলে)

-তা হলো অ্যাস্ট্রোনমির। আসলে, ছোটবেলা থেকেই জ্যোতির্বিদ্যার প্রতি বিশেষ ঝোঁক ছিল জানেন। দেশ-বিদেশের যেমন স্টুয়ার্ট ক্লার্ক, কার্ল সাগান, স্টিফেন হকিং এমনকি কেপলার, নিউটন,গ্যালিলিও আর রাধাগোবিন্দ চন্দ, মণি ভৌমিক, অমলেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় ইত্যাদি নানান লেখকের আর্টিকেল ও বই পড়েছি। ছোটবেলার খেলনার বাইনাকুলার দিয়ে কতবার আকাশ পর্যবেক্ষণ করেছি তার হিসেব নেই। সব তারামণ্ডলের নাম ও স্থান ছিল নখদর্পণে। এই বিষয়ের নানান বই, ভিডিও, দেশ-বিদেশের নামী পত্রিকার প্রবন্ধ বাড়িতে আছে। অ্যাস্ট্রোনমির বহু জার্নালও পড়েছি।এই বিষয়ের বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও অ্যাপ ঘাটলেই তো বহু তথ্য পাওয়া যায়।

আগন্তুক এবার হেসে বললেন, “তাহলে বুঝলা, তুমি এক কাজ করো। নানান এডুকেশনাল স্লাইড বানাও তোমার জানা বিষয়গুলির উপর। এছাড়া এই কাজে আগ্রহী এরকম বন্ধুদের জোগাড় করো। তাদের লইয়্যা এক এডুকেশনাল ইনস্টিটিউট বানাও। তোমাদের এই সময়ে অনলাইন এডুকেশনও খুব প্রয়োজনীয়। তাছাড়া জানোই তো আমাদের দুই বাংলার গ্রামগুলিতে শিক্ষার আলো বিশেষ পৌঁছায় না। নানা জায়গায় স্কুল আছে, কলেজ আছে কিন্তু আদর্শবান শিক্ষকের অভাব। নানা জায়গায় দু’একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কোনোরকমে টিকিয়া আছে। তুমি তাই শিক্ষার আলো সবার ঘরে ঘরে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করো। তোমাদের এই ইন্টারনেট ও অ্যাপের যুগে এই কাজটা অনেকটাই সহজ।”

আমি আস্তে আস্তে আশার আলো দেখতে পাচ্ছিলাম। বললাম, “ঠিকই বলেছ আর হ্যাঁ শখে একটা প্রোজেক্টর কিনেছিলাম বহু বছর আগে। বাড়িতে সেটা পড়েই আছে। চাকরির চাপে সেটার কথা একেবারে ভুলেই গিয়েছিলাম।ধন্যবাদ, সেটার কথা মনে করিয়ে দেবার জন্যে।”

-আর হ্যাঁ একটা কি বলছিলা- জ্যোতির্বিদ্যা। হ্যাঁ, তুমি এক কাজ করো বিজ্ঞানের এই বিষয়টির উপর নানান আকর্ষণীয় স্লাইড তৈরি করো। আর একটা টেলিস্কোপ কেনো। প্রত্যেক শনি ও রবিবার গ্রামে গ্রামে কিংবা শহরে, নানান শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে, বিভিন্ন পাড়ায় জ্যোতির্বিজ্ঞানের কথা শোনাও স্লাইডের মাধ্যমে। আকাশে মহাজাগতিক কিছু দেখা দিলে সেটাকে নিয়া ক্যাম্প করো, টেলিস্কোপ দিয়া সেটাকে লোকজনকে দেখাও। তাদের জ্যোতির্বিজ্ঞানের নতুন আবিষ্কার সম্পর্কে জানাও। অতএব, জ্যোতির্বিজ্ঞানের প্রচারে নাইম্যা যাও।

-মানে, একদিকে টিউশনি অন্যদিকে বিজ্ঞান প্রচারক।

-এক্সাক্টলি! একদম ঠিক! মনে রাখবা সর্বদাই যে, তুমি কিভাবে দ্যাশ ও দশের সেবা করতে পারবা? অন্যের মঙ্গল করে যে যাওয়া মানে নিজেরও মঙ্গলসাধন করা আর জানোই তো স্বামী বিবেকানন্দের অমর বাণী- “বহুরূপে বহুসম্মুখে কোথা খুঁজিছ ঈশ্বর
জীবে প্রেম করে যেইজন,
সেইজন সেবিছে ঈশ্বর।”
আর মনে রাখবা যে সর্বদা বাধা আসবেই তবে তাকে অতিক্রম করা তোমারই দায়িত্ব। অতএব,
‘Always do what you love and love what you do.’ OK, All the best.

আমি এই প্রথম এতদিন পর একটু হাসলাম। অজান্তেই শ্রদ্ধার সঙ্গে হাত-জোড় করে বললাম, “ধন্যবাদ আপনাকে। আপনি আমার পরম উপকার করলেন। সত্যিই আপনাকে চিরকাল মনে রাখব। তবে যা এতক্ষণ জিজ্ঞেস করিনি, আসলে খেয়ালই ছিল না তা হলো, আপনি কে? আপনার পরিচয়টা তো ঠিক জানলাম না তো।

-ওঃ, আমার নাম হইলো গিয়া আয়মান হুসেন। আমি ওপার বাংলার মানুষ। পেশায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক ছিলাম?

-তবে এপারে এলেন কিভাবে?

আগন্তুক হেসে বললেন, “আমাদের এপার-ওপার দুই বাংলাতেই অবাধ যাতায়াত। কোনো মানুষ বিপদে পড়লে তারে সাহায্য করতে ঠিক আসিয়া থাকি। কৃত্রিম কোনো কাঁটাতার কাজে আহে না।”

আমি হতভম্ব হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,”মানে আপনি কি জন্যে এখানে আসেন?”

-ভাই, আমি ছিলাম একজন মুক্তিযোদ্ধা। নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু আমার জীবনের আদর্শ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলতে গেলে আমার রাজনৈতিক গুরু। ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধর/ বাংলাদেশ স্বাধীন করো। জাগো জাগো/ বাঙালি জাগো। জয় বাংলা’। এই স্লোগান তুলে অত্যাচারী, বর্বর পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলেছিলাম। ৭ই মার্চ,১৯৭১-এ বঙ্গবন্ধুর রমনা মাঠের ঐতিহাসিক ভাষণ শুনে গ্রামে ফিরছিলাম। তখন পাকিস্তানি সেনারা তাদের মাটি সরে যাচ্ছে দেখে আরও অত্যাচার বাড়ায়া দেয়। তো ফিরবার সময় খবর পেলাম যে, পাকিস্তানি সেনারা স্থানীয় একটি মন্দিরে অনেক সোনাদানা লুঠ করেছে। এর সঙ্গে ওই মন্দিরের পুরোহিত ও তার পরিবারকেও খুন করেছে। শুনে মাথায় রক্ত চ্যইরা উঠলো। প্ল্যানমাফিক ঝোঁপের ভিতর গিয়া লুকাইলাম। যখন সেনার গাড়ি ওই পথ দিয়া যাইতেছিল তখন কৌশলে গাড়ি আটকায়া আমি ও আমার সহযোদ্ধারা বন্দুকের গুলি চালাইয়া সেনাদের খতম করলাম। এরপর ওই মোহর নিয়া সেইদিন রাতে নৌকা ক্যইরা ইন্ডিয়াতে আইস্যা এক গুপ্ত জায়গায় লুকাইয়া রাখলাম। পরে ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি সেনারা যে বর্বর ‘সার্চলাইট অপারেশন’ চালায় তাতে আমার মৃত্যু হয়, শত চেষ্টাতেও পাকিস্তানি সেনাদের খতম ক্যইরাও শেষ রক্ষা হয় নাই। আসলে, সেদিন ওরা অনেকে ছিল তার তুলনায় আমরা অনেক কম ছিলাম। তবে, আমি গর্বিত একজন বিপ্লবীর মতো মৃত্যুকে বরণ কইরাছি বলে। তবে, বিপ্লবীর মৃত্যু হলেও, বিপ্লবের মৃত্যু হয় না। তাই, তোমার মতো কেউ যদি বিপদে পড়ে তবে হাত বাড়ায়া দিইই। তাহলে, আজ আইলাম। ভালো থাকবা….”

আমার মাথা গুলিয়ে গিয়েছিল। হঠাৎ কি একটা বলতে যাব এমন সময় ঘুমটা ভেঙে গেল। তড়াক করে উঠে দেখলাম কোথাও কেউ নেই। চারিদিক নিস্তব্ধ। ঝিঁ ঝিঁ পোকা ডাকছে। সবকিছু কেমন যেন গুলিয়ে গেল। আপন মনে পায়চারি করতে লাগলাম। এমন সময় পায়ের নীচ একটা পুটলিতে ঠেকলো, সেটা কৌতুহল বসে তুলে খুললাম। খুলে চমকে উঠলাম- আরে এ যে মোহর! মনে হয় সেই মন্দিরের। চোখে জল এলো। আয়মানকে মনে মনে ধন্যবাদ জানালাম।

এরপর।

সেই মোহর বিক্রি করে যা টাকা পেলাম তার থেকে কিছু অংশ বাড়ির ভাড়া মেটালাম। এরপর শুরু হলো আসল খাটুনি। অঙ্ক ও বিজ্ঞানের নানা স্লাইড বানালাম। অন্যান্য যারা অফিস থেকে কাজ হারিয়েছে তাদেরও ডাকলাম। দেশে বেকারের অভাব নেই। তাই সবাইকে এক করে তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী অন্যান্য বিষয়ের স্লাইড বানাতে বললাম। সিলেবাস দেখে, নানান বইপত্র ঘেঁটে, নেট ঘেঁটে আমরা সবাই মিলে দিনরাত এক করে স্লাইড বানাতে লাগলাম। গ্রামে ও শহরে নানান টিউশন পয়েন্ট খুললাম এবং সেখানে স্লাইড ও প্রোজেক্টর মারফৎ পাঠ্য বিষয়ের প্রেশেন্টেশন দেখানো হতো। পড়ুয়ারা সবাই খুব মজা পেল, তারা শিখলও অনেক। এতে আমাদের খুব আনন্দ লাগল। এরপর শিক্ষা যেন সবার ঘরে পৌঁছে যায় সেজন্য খুললাম ‘শিক্ষার আলো’ বলে একটি ইউটিউব চ্যানেল। এখানে নানা বিষয়ের নানা ক্লাসের ভিডিও দেখার সুযোগ পাওয়া যাবে। শিক্ষক-ছাত্র এমনকি সাধারণ মানুষও এতে বিশেষ উপকৃত হলো। সকলের প্রশংসা পেলাম।

এরপর শুরু হলো ‘তারার আলো’। বিভিন্ন জায়গায় বিশেষ করে গ্রামের প্রতি শনি ও রবিবার জ্যোতির্বিজ্ঞানের নানা স্লাইড বানিয়ে সেগুলো দেখাতাম। গ্রামের আকাশে ভালো দেখা যায়। তাই টেলিস্কোপ কিনে গ্রামের মানুষদের গ্রহ, তারা পর্যবেক্ষণ করাতাম। নানান উল্কা, বিভিন্ন গ্রহ, উপগ্রহ, বুধ ও শুক্রের সরণ, সূর্যগ্রহণ, চন্দ্রগ্রহণ, চাঁদের কলা ও চাঁদের পৃষ্ঠদেশ ইত্যাদি অনেক কিছুই দেখালাম জ্যোতির্বিজ্ঞানের ক্যাম্প করে।

এখন মোনালিসাকে নিয়ে ভাবি না সে বলতে গেলে খরচের খাতায় চলে গেছে। এখন প্রচুর অর্থ এমনিই রোজগার করি টিউশনি, জ্যোতির্বিজ্ঞানের শো এবং চ্যানেল চালিয়ে তাই আর চাকরির কথা ভাবি না। সবচেয়ে বড়ো কথা আজ আমার কাজ, আমাদের গোটা টিমের কাজে আমাদের ছাত্রছাত্রীরা খুশি, দর্শকরা খুশি, আপনারা খুশি। এটাই আমাদের পরম সৌভাগ্য। আর একজনকে পেয়েছি জীবনে। সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার তার মতো কাউকে পাওয়া সে হলো আমার জীবনসঙ্গিনী- আত্রেয়ী। বিভিন্ন স্লাইড তৈরি করতে ওর অবদান ভোলার নয়। ওর উৎসাহই আমাকে আরও উৎসাহিত করে।

আর সেদিন আত্মহত্যার চিন্তা যখন আমাকে গ্রাস করছিল তখন সেই মুক্তিযোদ্ধা আমাকে ডিপ্রেশন থেকে, আত্মহত্যার চিন্তা থেকে মুক্তি দেবার জন্যে এসেছিলেন। হয়তো ভগবানই তাঁকে পাঠিয়েছিলেন যাতে আর কেউ যেন আত্মহত্যার মতো চরম বোকামি না করে বসে। আমার আজকের দিনটি জীবনে পাবার জন্য ওঁর অবদান অনস্বীকার্য।”

চোখে জল আসে শুভজিতের, আপন মনে তিনি বলে ওঠেন, “ধন্য ‘আগন্তুক’, ধন্য মুক্তিযোদ্ধা আয়মান, ওপারের বাঙালি হয়েও এপারের এই বাঙালিকে মনের ব্যাধি থেকে মুক্তি দিয়ে আজকের এখানে এই সুন্দর পরিবেশে নিয়ে এসেছ। ধন্যবাদ। যেখানেই থেকো,ভালো থেকো।”

হলঘরের সবাই সিট থেকে উঠে হাততালি দেয়। শুভজিৎ স্টেজ থেকে নীচে নামছেন এমন সময় দেখলেন দূরে একজন দাঁড়িয়ে হাততালি দিচ্ছেন। আরে! ইনি তো সেই আইয়মান। মনে হয় তিনিও মুচকি মুচকি হাসছেন। আজ শুভজিতের জন্য তিনি নিজেও খুব গর্বিত। তাঁর হয়তো একটা শ্রম সার্থক হয়েছে। মানুষের ভিড় ঠেলে যখন শুভজিৎ সেই সিটের কাছে গেলেন তখন দেখেন সেখানে কেউ নেই, কেবল এক টুকরো কাগজ পড়ে আছে যাতে লেখা রয়েছেঃ-

“Never, ever give up. অবস্থা যেমনই হোক, হাল ছেড়ো না বন্ধু। ভালো থেকো, আরও এগিয়ে যাও। আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন রইলো।”

Loading

Leave A Comment

You cannot copy content of this page