প্রতিবেদন

প্রতিবেদন- নবীন রূপে সাহিত্য

নবীন রূপে সাহিত্য
– বিশ্বদীপ মুখার্জী

পরিবর্তন সৃষ্টির নিয়ম। প্রায় প্রতিদিনই আমরা দেখতে পাচ্ছি কিছু না কিছু পরিবর্তন ঘটে যেতে। সময়ের সাথে মানিয়ে চলতে গেলে আমাদের এই পরিবর্তনকে স্বীকার করে নিতে হয়। চারিদিকে যেন পরিবর্তনের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। এই বন্যা থেকে ছাড় পায়নি সাহিত্য জগতও। বইয়ের পাতায় ছাপা অক্ষর থেকে এন্ড্রয়েড ফোনের স্ক্রিনের লম্বা যাত্রা দেখেছে সাহিত্য। যদি এটা বলা হয় যে সাহিত্য নিজের সীমা বিস্তার করেছে, তাহলে কি খুব ভুল বলা হবে? শুধুমাত্র বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ থাকেনি সাহিত্য। আজ ফেসবুক এবং হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে সাহিত্য এখন প্রায় ঘরে ঘরে অবস্থান করছে। নিজেকে পৌঁছে দিতে পেরেছে নিজের প্রিয়জনেদের কাছে, সাহিত্য প্রেমীদের কাছে। এই সীমাহীন সাহিত্যই তো আমরা চাই, যেখানে থাকবে না কোনও বাধা। এখনকার দিনে হাতে মোবাইল থাকলেই নিজের ইচ্ছের মত ডুবে যেতে পারা যায় সাহিত্যের বিশাল সাগরে। অনলাইন সাহিত্য এখন নিজের আকার বৃদ্ধি করছে। মুদ্রণের পাশাপাশি সাহিত্যকে এগিয়ে নিয়ে যেতে অনলাইনের ভূমিকাকেও অস্বীকার করা যায় না। সত্যি বলতে গেলে আজকের দিনে অনেক উঠতি কবি ও লেখকের স্বপ্নপূরণ করেছে অনলাইন সাহিত্য। কী করে? সেটারই বিস্তারিত চর্চা আমরা এবার করবো।
সাহিত্যের বহু পুরনো রূপ হল মুদ্রণ আকার। কোনো পাঠকের দৃষ্টিকোণে হাতে বই নিয়ে পড়ার মজাই আলাদা। শোকেশে সাজানো থাকবে বড় বড় লেখকের বই। এই বই গুলো শুধু পড়ার কাজে আসে না, বরং বাড়ির সৌন্দর্যবৃদ্ধির ক্ষেত্রেও এগুলোর অবদান অনেক। অনেককেই বলতে শুনেছি – ‘বই সবসময় প্রিন্টেড হবে। মোবাইলে বই আবার কোনো বই নাকি।’ বইয়ের মূল্য এখনও কমেনি। তাই তো প্রতি বছর বইমেলায় লাখ লাখ টাকার বই বিক্রি হয়। যেকোনো লেখকের স্বপ্ন থাকে নিজের লেখাকে মুদ্রণ আকারে দেখার। সেই স্বপ্নপূরণের জন্য তারা অনেক কিছুই করতে রাজি। অনেক প্রকাশনী লেখকের মনের এই ইচ্ছেকে নিজের পকেট গরম করার সুগম পথ বানিয়ে নিয়েছে। এমন অনেক প্রকাশনীও আছে যারা লেখকের কথা চিন্তা করে, কিন্তু তাদের সংখ্যা খুবই কম বলা যেতে পারে। ‘আমার লেখা গল্প কিম্বা কবিতা অমুক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।’ এই কথাটা নিজের প্রিয়জনেদের বলার জন্য বহু লেখককে নিজের পকেট থেকে হয়তো দুশো বা তিনশো টাকাও খরচ করতে হয়। এটা বলা যেতে পারে, এ সবের মাঝে লেখকদের অনেকটাই স্বস্তি দিয়েছে অবলাইন সাহিত্য। অনলাইনই হলেও, তবুও কোনো পত্রিকাতে লেখকের লেখা তো প্রকাশিত হয়, যেটা লেখক গর্ব করে নিজের প্রিয়জনেদের দেখাতে পারে। দ্রুত গতিতে নিজের শাখা প্রশাখা বিস্তার করা অনলাইন সাহিত্য এখন লেখক ও পাঠকের মাঝে চর্চার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু উঠতি লেখক বললে ভুল বলা হবে, অনেক নামকরা লেখকও আছেন যারা নিয়মিত ভাবে অনলাইন সাহিত্যে নিজের লেখা দিয়ে অনলাইন সাহিত্যকে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছেন।
আজ ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপের সুবাদে আমরা অনেক অজানা লেখক ও কবিদের খুঁজে পাই। তাদের লেখা পড়তেও ভালো লাগে। তাদেরকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনলাইন সাহিত্যের অবদানকে কোনো দিনই অস্বীকার করা যায় না। এটা ঠিকই যে, সাহিত্যের পুরাতন এবং আসল রূপ হল মুদ্রণ আকার। অনলাইন সাহিত্য যতই নিজের সীমা বৃদ্ধি করুক না কেন, এক লেখকের মন থেকে মুদ্রণ আকারে নিজের লেখা দেখার স্বপ্নকে কোনো দিনই মুছে দিতে পারবে না। কিন্তু এক নবীন লেখকের সাহিত্য জগতে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে অনলাইনের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ।

Loading

One Comment

  • Sanjit Kumar Mandal

    ফেসবুকের দৌলতে বিশেষ করে বাংলা সাহিত্য যে সুদূর প্রসারী যাত্রায় ডানা মেলেছে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহই নেই। বর্তমান পরিস্থিতিতে লেখকের বিশ্লেষণ প্রণিধান যোগ্য।

Leave A Comment

You cannot copy content of this page