কবিতা- বিদ্রোহী মন

বিদ্রোহী মন
– সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়

 

 

আবার ভেঙেছে এ ঘুম আমার
আমি বিদ্রোহী মন,
জানিনা গভীর নিদ্রা আমায়
ঘিরেছিল কতোক্ষণ।
হাজার যুদ্ধ লড়ার পরেও
হইনি তো আমি ক্ষান্ত,
যদিও আমার ঘামে ভেজা দেহ
হৃদয় হয়েছে ক্লান্ত।
শত রাইফেল গুলির শব্দ
কত বারুদের গন্ধ,
তবুও ছিল না সংশয় কিছু
মনেতে ছিল না দ্বন্দ্ব।
রাশিয়ার থেকে শুরু হয়ে পথ
ভিয়েতনামেতে মেশে,
স্পেন রুমানিয়া ভারতবর্ষ
মিলল সে পথে এসে।
সবখানে আমি থেকেছি অটল
নির্ভীক সংকল্প,
সে লড়াই ছিল মনের মানের
ছিল তা নির্বিকল্প।
হারিয়েছি কত আপনার জন
রক্ত ঝরেছে কত,
ভেঙে পড়া মনে দৃঢ়তা এনেছি
আবার আগের মত।
সে লড়াই ছিল ন্যায়ের যুদ্ধ
ফিরে পেতে অধিকার,
এ লড়াই তাই যুগ যুগ ধরে
লড়েছি যে বারবার।
ওরা লুঠে নিত ক্ষমতার জোরে
নিরীহের মাপা অন্ন।
নিজেদের ওরা বলেছে সভ্য
আসলে ছিল যে বন্য।
কাটিয়েছি কত অনিদ্র রাত
অনাহারে কত দিন,
তুষার বৃষ্টি মরু ঝঞ্ঝায়
শরীর হয়েছে ক্ষীণ।
শত্রুর গুলি দেহ ফুঁড়ে গেছে
পেয়েছি শোণিত ঘ্রাণ,
তবুও তুলেছি কালাশনিকভ
ট্রিগারে দিয়েছি টান।
দেখেছি আমার প্রিয়তমাকে
আতঙ্ক চোখে মুখে,
নগ্ন শরীর দু’ চোখে অশ্রু
গ্যাস চেম্বারে গেল ঢুকে।
বার্লিনে আমি হেঁটেছি কখনো
শবের মিছিল মাঝে,
কখনো শুনেছি নাৎসী ক্যাম্পে
মৃত্যু ঘন্টা বাজে।
শমনের সাথে মিলিয়েছি হাত
ভয়হীন অন্তর,
মুঠো করা হাত আকাশে ছুঁড়েছি
ভেঙে কত সবিবর।
গেভারার সাথে কিউবা গিয়েছি
তুর্কী ইরাক ইরান,
ইন্দোনেশিয়া, সার্বিয়া গেছি
গেছি দেশ আফগান।
যেখানে দেখেছি দানবের কাছে
মানবের পরাজয়,
লড়েছি জীবন বাজি রেখে আমি
দুর করে যত ভয়।
এ লড়াই ছিল নরখাদকের
কফিনে পেরেক পোঁতা,
এ লড়াই শেষ হলো শ্বাপদের
নোখ দাঁত করে ভোঁতা।
তারপর দেখি ওই এলো বুঝি
সেই শান্তির পল,
দু’চোখে আমার নেমে এসেছিল
ক্লান্ত ঘুমের ঢল।
সে ঘুম আমার ভেঙে গেল যেন
হঠাৎ বিষ্ফোরণে,
ভাবি মনে মনে তবে কি আবার
জেগেছি রনাঙ্গনে?
চারিদিকে শুনি গুলির শব্দ
গন্ধ বারুদ পোড়া,
হাতে পিস্তল পথে পথে ওই
ছুটে চলে কারা ওরা?
জিজ্ঞাসা করি ডেকে জনে জনে
কিসের যুদ্ধ ভাই?
আর কিছু নয় এ না কি চলছে
গদির মোহে লড়াই।
গদির লড়াই ক্ষমতা দখল
মন্ত্রীর টুপি কার,
শত কৌশল ছলে আর বলে
দেশটা লুঠে খাবার।
বলে ওরা কাল মেরেছে বলে
আমরা মারছি আজ,
ক্ষমতার বলে লুঠে খাব সব
তাইতো এ রণসাজ।
তবে জনগন, গনতন্ত্র
মানুষের অধিকার,
এসব কি শুধু কথার কথা
থাকবে না কিছু আর?
শাসনের নামে করবি শোষণ
নেই আর কিছু আজ,
প্রাণ দিয়ে যারা স্বাধীনতা দিলো
করলো কি ভুল কাজ?
মনে হয় দেখে এওতো একই
রুমানিয়া জার্মানি,
এখানেও সেই একই সন্ত্রাস
রক্তের হানাহানি।
তোরা ভুলে গেলি? চেসেস্কু গেছে
গদ্দাফি সাদ্দাম,
যারা মানুষের অধিকার কেড়ে
চুষলো শোণিত ঘাম।
সেদিন সেখানে ছিলাম আমি
আজও আছি আমি বেঁচে,
ভাবিস না তোরা পার পেয়ে যাবি
এই তান্ডব নেচে।
আছি আমি আজও জন অন্তরে
সুপ্ত আগুন হয়ে,
যদি উড়ি হয়ে ঝড়ের পাখি
সেই ঝড়ে যাবি বয়ে।
আজ এই হাতে কলম ধরেছি
কবিতা লিখেছি কত,
জেনে রাখ আজও তুলে নিতে পারি
রাইফেল উদ্যত।
এই রাইফেল সারা পৃথিবীতে
তুলেছে বুলেট ঝড়,
সেই ঝড় আজও ভেঙে দিতে পারে
অত্যাচারীর ঘর।
তবু আমি আজ শান্ত হৃদয়
পৃথিবীর পথে পথে,
জ্বেলে দিয়ে যাই শান্তির দীপ
গভীর আঁধার রাতে।
খুনের বদলা খুন যদি হয়
জেনে রাখ তুমি তবে,
একদিন এই গোটা পৃথিবীটা
মানুষ শূন্য হবে।
সেদিন কি হবে গদির লড়াই
সেদিন কে খাবে লুঠে?
দেখবে কে বলো পথের পাশে
কত ফুল আছে ফুটে?
হত্যা করেছি কত প্রাণ আমি
মরেছি যে কতবার,
তবু কি পেরেছি সাজাতে পৃথিবী
সুন্দর করে আর?
তাই আমি আজ নব বিপ্লবী
হৃদয়টা খানখান,
জেগে আছি নিয়ে শান্তি প্রদীপ
আমি বিদ্রোহী প্রাণ।

Loading

Leave A Comment