প্রতিশোধ
– অঞ্জনা গোড়িয়া
“এই ছাড়ো বলছি” ইস,খুব লজ্জা করছে। লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠল করবী। অমিতও ছাড়বার পাত্র নয়, “আমাকে লজ্জা? তোমার সকল লজ্জা এখন আমার। চিৎকার করে বলবো সবাইকে। তোমায় ভালোবাসি, ভালোবাসি ভালোবাসি। করবীর মুখ রক্তকরবী হয়ে উঠলো। মুখে হাসির রেশ রেখে দাঁতে দাঁত চেপে বললো, “তাই বুঝি? খুব ভালোবাসো? আমার মত কাউকে ভালোবেসেছ কোনো দিন? বলো না? আমিই প্রথম তোমার প্রেম? নাকি আর কেউ ছিল জীবনে?”
চমকে উঠল অমিত। কার কথা জানতে চাইছে? করবী কি সব জানে? আলতো ছোঁয়ায় করবীর ঠোঁটে হাত রেখে বললো, “আমার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখো ।এখানে কার ছবি আঁকা?”
করবীও হাসতে হাসতে বললো, “ভয় পেলে নাকি? আরে বাবা একটু মজা করলাম গো। আজই তো ফুলশয্যা আমাদের।”
যত্ন করে অমিতকে গরম দুধ খাওয়াতে এলো কাছে। অমিত কেমন চমকে উঠল। করবী হা হা করে হেসে বলল, “কি গো ভাবছ যদি মাথায় ঢালি। আমার শিব ঠাকুরের । তুমি তো আমার শিব ঠাকুর গো । দুধ গঙ্গায় স্নান করিয়ে তবে তো মধু পান করাবো। অমিতের মুখটা চিন্তায় গম্ভীর হয়ে উঠলো। কি গো এত অন্যমনস্ক কেন? আমায় বিশ্বাস করো তো”?
অমিত বললো, “না না তা কেন? তোমায় পেয়ে জীবন আমার ধন্য করবী।” করবীর ওষুধ মেশানো দুধটা হাসি মুখে পান করলো অমিত। অমিত দু’হাত বাড়িয়ে করবীকে ছুঁতে চেষ্টা করলো। কিছুতেই পারলো না। কিছুক্ষণের মধ্যেই চোখে ঘুম এসে গিয়েছিল। এই সুযোগ করবীর। জানতেই হবে সুকন্যার নিখোঁজ হওয়ার কাহিনী। সুকন্যা অমিতের প্রথম প্রেমিকা। প্রথম বউ। লাস্ট ম্যাসেজে তেমনই জানিয়েছিল সুকন্যা। একই হোস্টেলে থাকত দুজনে। করবী আর সুকন্যা । কিভাবে যে অমিতের সঙ্গে ভাব তারপর প্রেম তারপর বিয়ে হয়ে গেল। বুঝতেই পারে নি করবী। হঠাৎ হোস্টেল থেকে না বলে চলে আসে সুকন্যা। করবীকেও কথাটা চেপে যায়। বিয়ের কথা শোনে ম্যাসেজের মাধ্যমে। সেদিনই একটা ছবি পাঠিয়ে ছিল অমিতের। আর ঠিকানা। তারপর থেকে কোন যোগাযোগ করা যায় নি। ফোনের সুইচ অফ। কেউ ছিল না সুকন্যার। বিশাল কোটিপতির একমাত্র নাতনী। সমস্ত সম্পত্তির মালিকানা ছিল তারই। এমন করে বিয়ে করায় দাদু আর খোঁজ করে নি।
কিন্তু করবী ভুলতে পারে নি তার প্রিয় বান্ধবীকে। যে মেয়ে জীবনের সব কথা গল্প করে । আজ কেন হঠাৎ নিরুদ্দেশ হলো?
কেনই বা বিয়ের কথা জানালো না! সব প্রশ্নের উত্তর জানতে অমিতের সঙ্গে প্রেম তারপর মিথ্যে রেজিস্ট্রার বিয়ে করলো। সবই করবীর প্লান ছিল।
সেই মতো আজই মিথ্যা ফুলশয্যার রাত।
এমনই রাতেই সুকন্যা নিখোঁজ। শেষ ম্যাসেজে লিখেছিল, “আমি খুব ভুল করেছি করবী। নিজের ভালোবাসাকে চিনতে পারি নি। আমাকে বাঁচা। দাদুকে কিছু বলতে পারলাম না। পারিস তো দাদুকে বলিস যেন আমাকে ক্ষমা করে।” আর নীচে ছোট্ট ঠিকানা অমিতের বাড়ির আর একটা ছবি।
অমিত অচৈতন্য হতেই সুকন্যার পোশাক পড়ে ওর সামনে হাজির হলো। পায়ের নুপুরের আওয়াজে ঘুমের ঘোর কাটতে লাগলো।
সুকন্যাকে দেখেই চমকে উঠলো অমিত।
-তুমি? কে তুমি? ফিরে এসেছ? প্রশ্নগুলি ছুঁড়ে দিল সুকন্যার রূপধারী করবীর দিকে। করবী আলোআঁধারী আলোয় সুকন্যার গলার সুরে বললো, “আমাকে মেরে কি পেলে অমিত? আমি তো ভালোবেসেছিলাম। আবার আমার বান্ধবীকে বিয়ে করলে? এত কামনা বাসনা লোভ তোমার?
তোমার মুক্তি নেই..বলো কোথায় রেখেছো আমার দেহ?”
অর্ধ তন্দ্রায় বিভোর অমিত ভয়ে ঠকঠক করে কাঁপতে লাগলো। আস্তে আস্তে বললো, “মারতে চাই নি তোমায়। ভয় দেখিয়ে দাদুর কাছ থেকে সব সম্পত্তি লিখে নিতে চেয়েছিলাম। তাই তো বিয়ের কথা বলতে বারণ করেছিলাম। ভালোবাসিনি কোনোদিনই। বুঝতে পারি নি তোমার শ্বাস কষ্ট ছিল। ভয় দেখাতে গিয়ে দম বন্ধ হয়ে মারা গেলে। গলা চেপে ধরতেই অল্প সময়েই জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়লে। বাড়ির পিছনের বাগানটায় মাটিতে পুঁতে রেখেছি। ক্ষমা করো আমায়। বারবার তোমায় বলেছিলাম দাদুকে ফোন করে বলো, উইলটা রেডি করতে। ফোনটা করলে না?আমার মাথায় রক্ত উঠে গেল। আর সব শেষ।” করবী এবার বললো, “তারপরও আবার বিয়ে করলে? আমাকে মেরে ফেলে। লজ্জা করলো না?”
-“একা থাকতে ভীষণ ভয় করছিলো। এত বড় বাড়িতে মা একা আর আমি। করবী নিজে থেকে ভাব জমিয়ে আমায় বিয়ে করলো। আর আজ আবার সেই ফুলশয্যা। তোমার কথায় মনে পড়ছিল। বিশ্বাস করো।”
হা হা হা হেসে উঠলো করবী। ফুল শয্যা! এটা নয়, এ যে স্বীকার উক্তির শয্যা। এই ফোনটায় সব রেকর্ড করে রাখলাম। সুকন্যার মৃত্যু রহস্যের জবানবন্দী। ওর মৃত্যু রহস্য জানতেই আমার এই বিয়ের নাটক অমিত। বন্ধুর চেয়ে বড় আর কেউ হতে পারে না আমার কাছে।” অমিতের জ্ঞান ফিরলো। চেয়ে দেখে বাড়িতে পুলিশ গাড়ি।
সূর্য তখন পূব আকাশে রক্তবর্ণের মত রাঙা। সুকন্যার মিষ্টি মুখখানি ভেসে উঠলো সেই আলোতে।
যেন বলছে..আমি ভালোবেসেছিলাম অমিত। সত্যিই ভালোবেসেছিলাম।