দিদি
– সৃজিতা ধর
ছোটবেলার কথা খুব একটা মনে নেই। সবটাই গল্পে শোনা। ছবিতে বরাবর দেখেছি একটা হাত আমায় আগলে রেখেছে, স্নান করাচ্ছে। না, আমি মায়ের কথা বলছি না। সে আমার দিদি, বিনি দিদি। মাকে নিয়ে তো অজস্র গল্প শুনি আমরা। আজ না হয় দিদি নামক এই সম্পর্কটার একটা রূপকথা হোক।
একটা ঘটনা বেশ মনে আছে। দিদিকে নিয়ে একটা ভয়ের স্বপ্ন দেখে খুব কেঁদে উঠেছিলাম। আসলে আমরা কিন্তু স্বপ্ন দেখেছি বলে ভয় পাই না, সেটার বাস্তবায়ন নিয়ে ভয় পাই। আমিও সেদিন কেঁদেছিলাম, তবে সেটা ওকে হারিয়ে ফেলার ভয়ে। আজ আবার খুব কান্না পাচ্ছে। আবার যেন কাছছাড়া হয়ে যাচ্ছে দিদি। আজ দিদির বিয়ের সানাইয়ের আওয়াজে আমার কান্নাটা কেমন চাপা পড়ে যাচ্ছে। আজ থেকে আমার একলা ঘরে শোওয়ার পালা। এতগুলো বছর ওর সাথেই একটা ঘরে শুয়েছি। হয়তো কাল সকালে আবার ভুল করে বিনিদি ডেকে উঠবো, মা হয়তো ভুল করে দিদির থালায় ভাত বেড়ে রাখবে। অনেকটা কবিতা করে ঠিক এরকম বলাই যায়-
অন্য বাড়ির শ্রী ফেরাতে
বাড়ির লক্ষ্মী পর হয়েছে,
পঁচিশ বছরের অভ্যাসে মা
মেয়ের নামে ভাত বেড়েছে।
তবে বিনিদি আর আমার মধ্যে একটা ছোট্ট ব্যবধান আছে। ব্যবধানটা একটা শূন্য-র। বিনিদি বানানের ‘ব’-এর নীচে একটা ছোট্ট শূন্য এঁকে দিলেই আমার নাম, রিনি। এই বিনি-রিনির মধ্যের ব্যবধানটা যেন সবসময় শূন্য-ই থাকে। যদি কেউ বলে “দুই বোনে মিল আছে তো?” তখন এটাই বলব যে মিল আছে কিনা জানি না তবে ‘ব্যবধানটা শূন্য’।