পুরুষালী
– শম্পা সাহা
আমি পুরুষালী
হ্যাঁ আমি পুরুষালী
আমি জিনস্ আর শার্ট পড়ি
আমি পাড়ার ছেলেদের টিটকিরির জবাব দিই
লজ্জায় নুয়ে পড়ে,
হেসে গড়িয়ে পড়ে
বা ভয়ে জড়সড় হয়ে নয়,
মুখে ঘুঁসি মেরে সামনের পাটির
দুটো দাঁত উপড়ে ফেলে।
পাড়ার কেউ বউ পেটালে
আমি তার কলার চেপে ধরি
কেউ কোন অছিলায় আমায় শরীর স্পর্শ করলে
তার শরীরে রেখে আসি আঁচড়ের দাগ
নিদেন পক্ষে সেফটীপিনের ক্ষত।
কোন তুতো দাদা
বা তুতো কাকা জ্যাঠাদের
সহজ শিকার হইনি কোনদিন।
পাড়ার বউ কাকিমারা বলে “ধিঙ্গি”
আর ছেলেরা?
“মদ্দ মেয়েমানুষ।”
আমি ওদের কাছে
শরীরী লাস্যের প্রদর্শনী নই
যা ওদের কামাতুর দৃষ্টি পরিতৃপ্ত করে।
ঠোঁটে কোনদিন রং মাখিনি
বা লম্বা চুলে বেণী
ঐ খোঁপাই যথেষ্ট।
কেন?
কারণ আমার বাবা মারা যাবার পর
এই চারজনের সংসারে
আমিই একমাত্র রোজগেরে।
সেই ছোট থেকেই বাবার চায়ের দোকানের
আমিই বয় আমিই ক্যাশিয়ার
দুই ভাই বোনের পড়াশুনার খরচ
মায়ের হাঁপানির ওষুধ
আমিই যোগান দিই প্রতি মাসে।
আর অসুস্থ মায়ের পথ্য, ভাই বোনের
ইস্কুলের খাবার তৈরি করে
রোজ ঠিক সাতটায় এসে
দোকান খুলি।
হ্যাঁ ভোর পাঁচটায় আমাকে উঠতে হয়
ঘুমন্ত মায়ের কপালে হাত বুলিয়ে
ছোট ভাই বোনের মাথায় দুটো চুমো খেয়ে
ঘুম থেকে তুলে
আমি বাড়ি থেকে বের হই
রোজ সকাল বেলা।
যাবার পথে প্রায় দিন ই ঝামেলা করি
আমার দোকানের সামনে আড্ডা দেওয়া
চ্যাংড়াদের দলের সাথে।
হ্যাঁ আমি পুরুষালী
তাতে যদি কারো আপত্তি থাকে
আমার বয়ে গেছে
জাস্ট বয়ে গেছে।