Site icon আলাপী মন

কবিতা- দাতা

দাতা
– সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়

 

 

বৈশাখী পূর্ণিমা মঙ্গলবারে,
বহু জন সমাগম আজি রাজদ্বারে।
দুই’হাতে রাজা করি অকৃপণ দান,
প্রতি সনে তীর্থ দর্শনে যান।
ভোর হতে তাই আজি মহা কোলাহলে,
প্রজাগণ রাজবাড়ী চলে দলে দলে।
মন্ত্রী মশাই মহা ব্যস্ততা ভরে,
দানের সামগ্রী সব তদারক করে।
সিপাই সান্ত্রী, রাজ কর্মী যত,
সামলাতে ভীড় তারা ব্যস্ত কত।
যথাকালে মহারাজ দেন দরশন,
আভরণ বিনা দেহে পট্টবসন।
চলে দান, রাজনের মুগ্ধ নয়ন,
ফিরে যায় একে একে খুশি প্রজাগণ।
দান শেষে চলে রাজা প্রাসাদ পানে,
হঠাৎ পথিক এক দৃষ্টি টানে।
জটাজুট সাধু এক চলে যান ধীরে,
দানের সামগ্রী পানে তাকান না ফিরে।
কুতুহলী মহারাজা কন সান্ত্রীরে,
সবিনয়ে আন ডেকে ওই সাধুজিরে।
সান্ত্রীর ডাকে সাধু আসিয়া দাঁড়ায়,
সকলেই মাথা নত করে তাঁর পায়।
করিয়া আশির্বাদ সাধু হেসে কন,
আমারে ডাকিলে কেন, কি তার কারণ?
রাজা কন আমি রাজা, পূর্ণিমা তিথি,
দান করি প্রজাগণে এই মোর রীতি।
বলুন বাসনা তব দ্বিধা নাহি ক’রে,
রাখিয়াছি আয়োজন দানিবার তরে।
সাধু কন আমি সাধু ত্যাগী মোর মন,
মহার্ঘ দানে মোর নাহি প্রয়োজন।
বস্ত্র সামান্য মোর সীমিত আহার,
মিটে যায় যতটুকু প্রয়োজন আর।
চাহি না তো দান নিয়ে আর ঋণী হতে,
যে পথ পেয়েছি খুঁজে চলি সেই পথে।
তবু রাজা বারেবার জোরাজুরি ক’রে,
দিতে চান দান তাঁর সাধুর তরে।
সাধু কন কি দানিবে কি তোমার আছে?
রাজা বলে যাহা কিছু চান মোর কাছে।
স্বর্ণ রৌপ্য বা অর্থের থলি,
আছে কত দানিবার আরো কত বলি।
হাসিয়া কহেন সাধু শুন হে রাজন,
মুঠিতে বাতাস সম সম্পদ ধন।
দানের সামগ্রী পরে কোন অধিকারে,
করো দান দাতা সেজে গর্ব ভরে?
ছিল না এসব কিছু জন্মের ক্ষণে,
ছেড়ে সব যাবে তুমি একা হুতাশনে।
যাহা নয় আপনার তাই দান করে,
কেন হও গর্বিত নিজ অন্তরে?
একান্ত তোমার কিছু দানের তরে,
থাকে যদি দাও, নেবো দু’হাত ভরে।
নত শির রাজা ফেরে প্রাসাদ পানে,
সাধু যায় আপনার পথের টানে।
পরদিন রাজা যাবে তীর্থ পথে,
সামগ্রী সাজায় সবে সুবিশাল রথে।
হঠাৎ সকলে দেখে প্রাসাদ দ্বারে,
রাজা এসে দাঁড়ায়েছে দীন বেশ পড়ে।
ডেকে কন মন্ত্রীরে রাজা সবিনয়ে,
চলিলাম সব কিছু প্রজাদের দিয়ে।
খুঁজে দেখি কোথা আছে সেই সে রতন,
যারে পেলে দীন হয় গর্বিত মন।
আমার আমি রে যবে দেবো দান ক’রে,
সেইদিন হবো দাতা নিজ অন্তরে।

Exit mobile version