অণুগল্প- সুজন

সুজন
– শচীদুলাল পাল

 

 

রুমি ভট্টাচার্য আর সুজন দাস একই স্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়ে। দুজনে ছোটো থেকে খুব বন্ধুত্ব। খুব কাছাকাছি না হলেও খুব দূরও নয় দুজনের বাড়ি। দুজনে ছোটোবেলা থেকে একসাথে খেলা করে, স্কুল যায়, বেড়াতে যায়।
দুজনের পরিবারেও এক সহজ সরল সদ্ভাব আছে তিন পুরুষ ধরে।
সেদিন সুজনের বাড়িতে একসাথে পড়ছিল। নোট নিচ্ছিল দুজনে। বাইরে সাইক্লোন। ঝড় জল বৃষ্টি।একটু থামলে যাব এই ভেবে ভেবে দেরি হয়ে গেল। এদিকে মায়ের ফোন “রুমি! রাত আটটা বাজে কখন ফিরবি?”
রুমি বললো “এক্ষুনি আসছি মা”।
সুজনের মা বললো “রুমি তোমার একা যাওয়া ঠিক হবে না। সুজন তোমাকে পৌঁছে দিয়ে আসবে।”
দুজনের হাতে দু’টো ছাতা দিয়ে সুজনকে বললো, “একেবারে ঘরে পোঁছে দিয়ে আসবি।”
দুজনে রোমাঞ্চকর বর্ষার রাতে পথ চলছিল। বড় রাস্তা থেকে রুমিদের পাড়ায় ঢোকার রাস্তাটা যেখানে বাঁক নিয়েছে বড্ড নিরিবিলি। সেখানে আসতেই আকস্মিক চারজন পাড়ার চেনা ছেলে ঝাঁপিয়ে পড়লো রুমির উপর। সুজন একজনকে ধরে দু’চার ঘুষি দিতেই আরও দু’জন এসে তাকে আক্রমণ করলো। তাদের হাতে চাকু ছিল। সুজন বাধা দিলেও সবার সাথে পেরে উঠতে পারছিলো না। চাকুর আঘাতে রক্তাক্ত অবসন্ন হয়ে পড়ে গেলো। চোখের সামনে রুমির উপর একে একে আক্রমণে দিশাহারা।

একসময় তারা ছেড়ে চলে গেলে সুজন রুমিকে কাঁধে তুলে নিয়ে তিন কিমি দূরে থানায় পৌঁছে এফ আই আর লেখালো। আর তার মোবাইল ফোনটি জমা দিয়ে জ্ঞান হারালো। জ্ঞান আর ফিরলো না।
মোবাইলে ছিল সব ঘটনার ভিডিও। পরদিন একে একে চার ধর্ষক ও সুজনের হত্যাকারী গ্রেপ্তার হলো।
মোবাইল ভিডিও ও ডাক্তারের রিপোর্ট অনুসারে দীর্ঘদিন বিচার প্রক্রিয়া শেষে চারজনই মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত হলো।

Loading

Leave A Comment