Site icon আলাপী মন

গল্প – শাশুড়ি মা

শাশুড়ি মা
-প্রলয় কুমার নাথ

 

 

চারিদিকে উলু আর শঙ্খ ধ্বনির মাঝে সাদা কাপড়ের ওপর দুধে-আলতা মাখা পা ফেলে নববধূর বেশে ধীরে ধীরে শ্বশুরবাড়ির ভেতর প্রবেশ করছিল মঞ্জরী। পাশে তার নতুন বর পলাশ। পলাশের বাবা নেই, তার মা হিরণ্ময়ী দেবীই হলেন এই বাড়ির কর্ত্রী। অনেক পুরুষ ধরেই পলাশদের বনেদি কাঠের ব্যবসা রমরমিয়ে চলেছে। অর্থ আর প্রতিপত্তিতে ভরপুর হিরণ্ময়ী দেবীর সংসার। তাদের এই সুবৃহৎ তিনতলা বাড়িটাকে এই পাড়ার সকলেই চৌধুরী বাড়ি হিসাবে চেনে। পলাশের বাবা শশধর চৌধুরী কয়েক বছর আগে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ইহলোকের মায়া ত্যাগ করে চলে যান। এদিকে পলাশ ততদিনে ইঞ্জিনিয়ারিং পরে সল্ট লেকের একটি বড় আই.টি কোম্পানিতে উচ্চপদে কর্মরত। তাই স্বামীর মৃত্যুর পর হিরণ্ময়ী দেবীই তাদের পারিবারিক ব্যবসার সমস্ত দায়িত্ব নিজের কাঁধে নেন। মঞ্জরীর মা বিমলা দেবী ছিলেন হিরণ্ময়ীর ছেলেবেলার সই। তার মেয়ে হওয়ার পর হিরণ্ময়ী দেবী ঠিক করেই রেখেছিলেন যে ওই মেয়ের সাথে পলাশের বিয়ে দেবেন। কিন্তু নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে মঞ্জরীর ভাগ্য খারাপ। তার বাবা মা তো অনেক আগেই মারা গিয়েছেন, এবং এতদিন সে যেন ছিল তার দুই দাদার চোখের কাঁটা। তাকে বিয়ে দিয়ে বাড়ি থেকে তাড়াতে পেরে ওর দাদারা যেন হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে। মঞ্জরীর গায়ের রঙটা একটু চাপা হলেও ছোটবেলা থেকেই তার মুখশ্রী একেবারে দেবী প্রতিমার মত। অবশ্য ছেলের বিয়ে দেওয়ার আগে পলাশের মতামতও নেন হিরণ্ময়ী দেবী, তারও মঞ্জরীকে পছন্দ হয়েছিল। তাই বলতে গেলে এক কাপড়েই মঞ্জরীকে এই বাড়ির বউ করে এনেছেন হিরণ্ময়ী দেবী। নিজের সই-এর মেয়েকে যেন নিজের মেয়ের মতই ভালোবাসেন তিনি।

বিয়ের পরে মঞ্জরীর জীবনের কয়েকটা বছর যেন স্বপ্নের মত কেটেছিল। তার ছোটবেলাটা অভাব অনটন এবং দুই দাদা বৌদির চক্ষুশূল হয়েই কেটেছে, তাই বিয়ের পর এই নতুন বাড়িতে এত প্রাচুর্যের মধ্যে এসে, এত ভালো স্বামী এবং শাশুড়ি পেয়ে সে যেন নিজের ভাগ্যকেই বিশ্বাস করতে পারছিল না। এই বাড়িতে তার সব থেকে আপন হল তার শাশুড়ি মা হিরণ্ময়ী দেবী। ছোটবেলাতে মাকে হারানো মেয়েটা যেন নতুন করে ফিরে পেয়েছে তার মাকে। সবই ঠিকঠাক চলছিল, কিন্তু তারপরই মঞ্জরীর ভাগ্যে দেখা দিল ভয়ানক বিপর্যয়। তার স্বামী পলাশ যেন কেমন বদলে যেতে লাগল। প্রথম প্রথম মঞ্জরীকে সময় কম দিতে লাগল সে। অফিস থেকে দেরি করে বাড়ি ফিরতে লাগল। প্রায়দিনই বাইরে থেকে খেয়ে আসত সে। তারপর রাতে কিছুক্ষন অফিসের ল্যাপটপে মুখ গুজে বসে কি সব করে হারিয়ে যেত ঘুমের দেশে। নিজেকে বড্ড একা লাগত মঞ্জরীর, স্বামীর আদর পাওয়ার জন্য আকুল হয়ে থাকত সে, কিন্তু পলাশ যেন তার দিকে ফিরেও তাকাতো না। এরপর পলাশের মঞ্জরীর প্রতি উদাসীনতা যেন ধীরে ধীরে রূঢ়তার রূপ নিতে থাকল। এখন ছোটখাটো বিষয়েই তার সাথে ঝগড়া করে পলাশ। মাঝে মাঝেই বেডরুমে রাখা সোফাতেই শুয়ে রাত কাটাতে হয় মঞ্জরীকে। এমনই সময় নিজের শরীরের মধ্যে অপর একটি প্রাণের উপস্থিতি উপলব্ধি করতে পারে মঞ্জরী। এখনো অবধি স্বামীর সাথে এই দূরত্বের কথা হিরণ্ময়ী দেবীকে জানায়নি মঞ্জরী, কিন্তু এর পর যা হল তাতে সে বাধ্য হল তা জানাতে।

গোপনে পলাশের মোবাইলের চ্যাট দেখে মঞ্জরী বুঝতে পারল যে তার স্বামীর পরকীয়া চলছে তার অফিসের এক মহিলা কলিগের সঙ্গে। সেই মহিলার নাম হল তৃনা। এই কথা জানাজানি হতেই পলাশের সাথে মন কষাকষি আরো বাড়ল মঞ্জরীর। পলাশ শুরু করল কথায় কথায় মঞ্জরী গায়ে হাত তোলা। মঞ্জরীর গর্ভে সন্তান আছে জেনে জোর করে পলাশ তার একজন চেনা ডাক্তার বন্ধুকে দিয়ে মঞ্জরীর গর্ভের সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণ করাল। জানা গেল যে মঞ্জরী একজন কন্যা সন্তানকে জন্ম দিতে চলেছে। তারপর থেকেই তার ওপর পলাশের শারীরিক এবং মানসিক অত্যাচার করো বেড়ে চলল। পলাশ মঞ্জরীকে চাপ দিতে লাগল বাচ্চাটিকে এবোর্ট করতে, কিন্তু মঞ্জরী তাতে একেবারে রাজি হল না। এরপর থেকেই মদ্যপ অবস্থায় বাড়ি ফিরে এসে মঞ্জরীর ওপর পাশবিক অত্যাচার করতে লাগল পলাশ। তার জমায় লিপস্টিকের দাগ, মহিলা পারফিউমের গন্ধ ইত্যাদি আরো বেশি করে জানান দিত তার পরকীয়ায় লিপ্ত থাকার কথা। স্বাভাবিক ভাবেই মঞ্জরীর ওপর তার স্বামীর এই নির্যাতন চোখে পড়ল হিরণ্ময়ী দেবীর। তিনি কিন্তু অন্যান্য শাশুড়ির মত ছেলের দিকে হয়েই বৌমার প্রতি আরো অত্যাচার করতে শুরু করলেন না, বরং শক্ত হাতে পলাশের এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে থাকলেন। পলাশের হাত থেকে অন্তঃসত্ত্বা মঞ্জরীকে আপ্রাণ বাঁচাতে চেষ্টা করতে লাগলেন।

কিন্তু একদিন প্রমাদ গুনতে হল হিরণ্ময়ী দেবীকে। সেদিন মদ্যপ পলাশ মায়ের বাধাও উপেক্ষা করে মঞ্জরীর গায়ে হাত তুলতে লাগল। চিৎকার করে বলতে লাগল,
— “আমি তোর সাথে থাকতে চাইনা বুঝলি মাগী…আমি তৃনাকে এই বাড়ির বউ করে আনতে চাই…তুই বেরো, দূর হ এই বাড়ি থেকে!”
এই বলে মায়ের সকল নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সে মঞ্জরীকে চুলের মুঠি ধরে তাকে দেওয়ালের দিকে ঠেলে দিল। মঞ্জরী আছড়ে পড়ল দেওয়ালের গায়ে, তার পেটে খুব জোরে আঘাত লাগল। তখনই তার যোনিপথ দিয়ে রক্ত ক্ষরণ হওয়া শুরু হল, যন্তনায় চিৎকার করতে করতে মেঝেতে পড়ে ছটফট করতে থাকল মঞ্জরী। নিজেকে আর সামলাতে না পেরে ছেলের গালে সটান এক থাপ্পড় কষান হিরণ্ময়ী দেবী। তখনই এম্বুলেন্স ডেকে মঞ্জরীকে হাসপাতালে পাঠান তিনি। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। মঞ্জরী প্রাণে বেঁচে গেলেও জন্মাবার আগেই চির বিদায় নিল তার গর্ভের কন্যাসন্তান। মঞ্জরীকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে এসে পলাশের উদ্দেশ্যে চিৎকার করে ওঠেন হিরণ্ময়ী দেবী,
— “তুই তাহলে তৃনার সাথেই নিজের ঘর বাঁধতে চাস, তাই তো? বেশ, তবে মনে রাখিস সেটা যেন এই বাড়ির চৌহদ্দির বাইরে হয়! ভুলে যাস না এই বাড়ি, এই ব্যবসা সবই তোর বাবা আমার নামে করে গিয়েছেন…আজ এই সকল বিষয় সম্পত্তি থেকে তোকে আমি বঞ্চিত করলাম…তোকে ত্যাজ্য পুত্র করলাম আমি! যা বেরিয়ে যা এই বাড়ি থেকে, আজ থেকে জানব আমার কোন ছেলে নেই, শুধু একটিই সন্তান আছে আমার…আর সে হল মঞ্জরী। আমার সব বিষয় সম্পত্তি আমি তাকেই দিয়ে যাবো!”

সদ্য সন্তান হারা মঞ্জরীও মেয়ের শোক ভুলে তার শাশুড়ি মায়ের এই ইস্পাত কঠিন রূপ দেখে অবাক হয়ে গেল। তার শাশুড়ি মা তাকে এতটাই স্নেহ করেন, যে তার প্রতি হওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদ করার জন্য নিজের পেটের ছেলেকেও এত বড় শাস্তি দিতে পারেন! এমন কাজ করার সাহস আর কজন শাশুড়ি মা দেখাতে পারেন! নাহ, সত্যিই নিজের সিদ্ধান্ত থেকে অটুট থেকেছেন হিরণ্ময়ী দেবী। এই বাড়িতে থাকতে গেলে পলাশকে তৃনাকে ত্যাগ করতেই হবে। তবুও মঞ্জরীর সাথে থাকতে চাইল না পলাশ। শেষে আর কোন উপায় না দেখে এই বাড়ি, এই সমস্ত বিষয় আশয় থেকে বেরিয়ে গিয়ে তৃনার সাথে অন্যত্র সংসার পাতল সে। এই বাড়িতে শুধু রয়ে গেল এক ‘মা’ এবং তার ‘মেয়ে’। এমন ভাবেই কাটতে লাগল সপ্তাহ, মাস এবং বছর। বয়স্ক হিরণ্ময়ী দেবীর সকল দেখাশোনার ভার নিয়েছে মঞ্জরী। স্বামীকে হারিয়ে কিছুদিন চোখের জল ফেলেছিল সে, কিন্তু পরে বুঝতে শিখেছে যে যার কাছে তার নিজের কোন দাম নেই, তাকে দাম দিয়ে তার জন্য চোখের জল ফেলারও কোন দরকার নেই। এখন মঞ্জরীর সমস্ত সংসার জুড়েই আছেন হিরণ্ময়ী দেবী, মায়ের থেকেও সে যেন আরো বেশি আপন মঞ্জরীর কাছে।

তবে একটা অভাব মাঝে মাঝেই উপলব্ধি করে মঞ্জরী। এবং তা হল তার হারানো শিশুকন্যাটির অভাব। হিরণ্ময়ী দেবীও বুঝতে পারেন মঞ্জরীর মনের কথা, তাই তো এই বাড়িতেই একটা ছোটখাটো নাচের স্কুল খুলে দিয়েছেন তিনি। সেখানে নাচ শেখায় মঞ্জরী। ছোটবেলায় অভাবে অনটনে পড়াশোনা তেমন না শিখলেও, বাবা মা বেঁচে থাকতে নাচ শিখেছিল সে।
কত ছোট ছোট মেয়েরা এই স্কুলে নাচ শিখতে আসে। তাদের সকলকে পেয়ে যেন নিজের গর্ভের সন্তানটির শোক ধীরে ধরে ভুলতে শুরু করেছে মঞ্জরী। এমন সময় এই নাচের স্কুলে ভর্তি হয় টুম্পা নামের আট বছরের একটি ছোট্ট মেয়ে। তার বাবা অরুণকান্তি মজুমদার হলেন এই শহরের নাম করা ডাক্তার। দামী গাড়ি করে ওদের ড্রাইভার ওকে এই স্কুলে দিয়ে যায়, আবার সময়মত নিতে আসে। টুম্পাকে খুব সুন্দর দেখতে, যেন ছোট খাটো একটা পরী। মেয়েটাকে খুব স্নেহ করে মঞ্জরী। ওকে দেখে বারবার নিজের গর্ভের কন্যাসন্তানটার কথা মনে পড়ে তার। টুম্পা নাচে ভালোই পারদর্শী, কিন্তু মেয়েটা কেমন যেন একটু চুপচাপ। এই বয়সের অন্যান্য মেয়েদের মত এমন হাসিখুশি নয়। তার মনের খুব কাছে আসতে শুরু করে মঞ্জরী। টুম্পাও খুব ভালোবাসতে শুরু করে মঞ্জরীকে। একদিন নাচের ক্লাস হয়ে গেলে, টুম্পা কেন এত চুপচাপ এই কথা জিজ্ঞাস করাতে সে মঞ্জরীকে বলল,
— “জানো তো আন্টি, আজ এক বছর হল আমার মাম্মান নেই। কি যেন একটা রোগ হয়েছিল মাম্মানের তাই বাপি বলে মাম্মান ওই আকাশের তারা হয়ে গিয়েছে। আমার সকল বান্ধবীদের মাম্মান আছে, দেখো সবাইকে তাদের মাম্মানরা নিতে আসে, সকলে কি সুন্দর মাম্মানদের হাত ধরে বাড়ি ফেরে, কিন্তু আমি পারিনা! মাম্মানের কথা বড্ড মনে পড়ে জানো আন্টি…আমাকে খুব ভালোবাসত মাম্মান, ঠিক তোমার মত…তুমি কি আমার মাম্মান হবে আন্টি?”

বলতে বলতে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল টুম্পা। মঞ্জরী টুম্পার শেষের কথাগুলো শুনে একটু চমকে উঠল ঠিকই, কিন্তু পরমুহূর্তেই তাকে বুকে টেনে নিল। ঠিক সেই সময়ই নাচের ক্লাসরুমের দরজার কাছে চোখ গেল মঞ্জরীর। সেখানে দাঁড়িয়ে আছেন স্বয়ং অরুনকান্তি বাবু। আজ ড্রাইভারকে ছুটি দিয়ে নিজেই মেয়েকে নাচের ক্লাস থেকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে এসেছিলেন তিনি। টুম্পা এতক্ষন মঞ্জরীকে যা বলছিল তা সমস্তই শুনেছেন তিনি। তার কাছ থেকেই মঞ্জরী জানতে পারল যে অগ্নাশয়ে ক্যানসার হয়েছিল অরুণ বাবুর স্ত্রী সৌদামিনীর। যখন ধরা পড়েছিল তখন শেষ স্টেজ। তাই নিজে ডাক্তার হয়ে শত চেষ্টা করেও তিনি বাঁচাতে পারেননি নিজের স্ত্রীকে। ধীরে ধীরে অরুণ বাবুর সাথে মঞ্জরীর পরিচিতি বাড়তে থাকে। নিজের সম্বন্ধেও সমস্ত কথা সে বলে অরুণ বাবুকে। একদিন অরুণ বাবু টুম্পার মত মঞ্জরীকে বলেন,
— “টুম্পার কাছে মায়ের অভাব যেমন আছে, আপনারও তেমন জীবনে অভাব রয়েছে নিজের সন্তানের। আজ যদি আপনি আমার স্ত্রী হয়ে আমার বাড়িতে এসে টুম্পাকে নিজের সন্তানের জায়গায় বসাতে পারেন, তাহলে দুজনের অভাবই আর থাকে না। বলুন আপনি কি রাজি হবেন?”
মঞ্জরী অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে সুদর্শন অরুণ বাবুর দিকে। অতঃপর মাথা নত করে বলে ওঠে,
— “এত আমার পরম সৌভাগ্যের কথা অরুণ বাবু, যে আপনি আমাকে নিজের স্ত্রী মর্যাদা দিতে চাইছেন। আমিও টুম্পাকে নিজের মেয়ের মতই ভালোবাসি, আর সেও আমাকে মা হিসাবে পেতে চায়। কিন্তু এই বাড়ি ছেড়ে যে আমি যেতে পারব না অরুণ বাবু। আমার শাশুড়ি মা শুধু আমার শাশুড়ি নন, তিনি এখন আমার মা। তার সব দায়িত্ব এখন আমার। যে মানুষটা আমার মুখের দিকে চেয়ে নিজের ছেলেকে অবধি ত্যাগ করেছেন, আমি এই বাড়ি ছেড়ে চলে গেলে তাকে কে দেখবে বলুন?”
— “আমার ভাগ্যটা ছোটবেলা থেকেই খারাপ জানেন”, বলেছিলেন অরুণ বাবু, “বিয়ের কয়েক বছরের মধ্যে যেমন স্ত্রীকে হারালাম, মা বাবাকেও তেমনই হারিয়েছিলাম ছোটবেলাতেই। তাই স্ত্রীর সাথে মায়ের অভাবও যে কী, তা আমি বুঝি…তাই ভাবুন না যে টুম্পার জন্য নতুন মায়ের সাথে নিজের জন্যও নতুন এক মাকে বাড়ি নিয়ে যেতে চলেছি। আজ থেকে তার সকল দায়িত্ব শুধু আপনার নয়, আমারও…অবশ্য তাতে যদি আপনাদের সকলের মত থাকে তবেই!”

মঞ্জরী দেখল যে ততক্ষনে সেখানে এসে হাজির হয়েছে হিরণ্ময়ী দেবী। অরুণ বাবুর সব কথাই শুনেছেন তিনি। তার মুখে সম্মতি সূচক প্রশান্ত হাসি। অরুণ বাবু আর মঞ্জরী দুজনে মিলেই হিরণ্ময়ী দেবীর পায়ে হাত স্পর্শ করে প্রণাম করল। তাদের বুকে টেনে নিলেন হিরণ্ময়ী দেবী। মঞ্জরীকে বুক ভরা আশীর্বাদ দিয়ে তিনি বলে উঠলেন,
— “খুব সুখে থাক মা, নতুন করে স্বামী সন্তান নিয়ে সুখে ঘর কর। এটাই তো আমি এতদিন ধরে চাইতাম, যাতে স্বামী সন্তানের সুখ থেকে বঞ্চিত হয়ে তোর জীবনটা নষ্ট না হয়!”
অরুণ বাবু হিরণ্ময়ী দেবীকে বলে উঠলেন,
— “এই বয়সে আপনাকেও কিন্তু আমরা ছাড়ছি না মা। আজ থেকে আপনি আমাকে নিজের ছেলে বলেই মনে করবেন, আর আমাদের সাথেই থাকবেন। আজ থেকে আপনার সকল দায়িত্ব আমার আর মঞ্জরীর!”
তারপর একদিন শুভ দিন দেখে মঞ্জরীর সাথে অরুণ বাবুর বিবাহ হয়ে গেল। টুম্পা ফিরে পেল তার ‘মাকে’, মঞ্জরীও যেন ফিরে পেল তার ‘সন্তানকে’। আর সর্বোপরি, নিজের কন্যাসম পুত্রবধূকে নিজের গর্ভের সন্তানের অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচাতে তাকে ত্যাজ্য পুত্র করে যে একটুও ভুল সিদ্ধান্ত নেননি হিরণ্ময়ী দেবী, তা তিনি বুঝতে পারলেন। তার সেই ‘মেয়েই’ যে তাকে ফিরিয়ে দিল তার ‘ছেলে’, ‘নাতনী’ সহ গোটা পরিবারটিকে।

Exit mobile version