মা আসছে …
-সুমিত মোদক
আকাশে বাতাসে পূজার গন্ধ
পূজার সুর জাগে;
হৃদয়ে হৃদয়ে পূজার আনন্দ
খুশির দোল লাগে;
মা আসছে যে …
প্রথম সকালেই মেয়েটা বেরিয়ে পড়েছে
তার ঠাকুমার সঙ্গে ষষ্টি-ফল তুলতে;
খাল পাড়ে ফুটে থাকা ষষ্টি-ফল;
সে ফল সিঁদুরে, চন্দনে, নীলে…ডুবিয়ে
বাড়ির দরজার উপর
দেওয়া হবে ষষ্টি-ফোঁটা;
সে ফোঁটা গুলো মাটির দেওয়ালের গায়ে ফুটে উঠবে
ফুলের মতো, আকাশের তারার মতো;
অন্ধকার ভেদ করে ঝলমল করে উঠবে
সারাটা বাড়ি;
বাড়ির লোকজন;
মা আসছে যে …
সুতিখালে ভরে গেছে শালুক ফুল;
লাল শালুক, সাদা শালুক…
শালুক মালা দিয়ে সাজিয়ে দেবো প্রবেশদ্বার;
ওখান দিয়ে যে মা আসবে
আমার ঘরে, আমাদের ঘরে;
মানুষটা সেই থেকে ঘরে বসে ছিল;
কারখানা বন্ধ যে;
এখনও যে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর গল্প;
এখনও যে কেবল ভয়;
মৃত্যুর ভয়, মহামারির ভয়, পেটের ভয়…
এতো সব ভয়গুলোকে জয় করা
সম্ভব হয়ে উঠতো না
যদি না মা আসতো;
মা যে আমার সার্বজনীন, সর্বজনীন, দশভুজা …
সকলের কথা ভেবে, সকলের জন্য মেলে দেয়
দশ দশটা হাত;
পোটো থেকে ফুল ব্যাপারী,
ফুল ব্যাপারী থেকে দশকর্মা, প্যান্ডেল, মাইক,
সকল দোকানদার খুশি;
খুশি, যারা বেলুন বিক্রি করে,
যারা ফুচকা বিক্রি করে, খেলনা বিক্রি করে,
তেলেভাজা-পাঁপড় ভাজা বিক্রি করে, ঘুগনি বিক্রি করে…
সকলে খুশি;
আমিও…
সকলের ঘরে মা ঢুকবে যে লক্ষ্মীকে সঙ্গে করে;
সেই সঙ্গে সরস্বতী, গণেশ, কার্তিক;
মা আসছে যে…
কদিন হল মানুষটা একটা কাজ পেয়েছে,
প্যাণ্ডেলের কাজ;
এ বছর তেমন কোনও বড় প্যাণ্ডেল হয়নি ঠিকই;
হয়নি বড় প্রতিমা;
কিন্তু, পূজা হবে নিষ্ঠার সঙ্গে, শ্রদ্ধার সঙ্গে,
নিয়ম মেনে;
মা যে আমার শ্রদ্ধা রূপেন সংস্থিতা..
বড় রাস্তার মোড়ে বড় পূজাটার লোকজন
সেদিন এসেছিল বাড়িতে;
চাঁদা নিতে নয়,
চাল, ডাল, সবজি দিতে;
এর আগেও ক’বার দিয়ে গেছে;
এবারে বলে গেছে, ষষ্ঠীর দিন বাড়ির সকলকেই
পূজার পোশাক দেবে;
এবারে পূজা, মানব-পূজা;
সেই শুনে মেয়ের সেকি আনন্দ;
আনন্দ আর আনন্দ…
আনন্দ ওর ঠাকুমার চোখেও;
মা আসছে যে …
আকাশে বাতাসে পূজার গন্ধ
পূজার সুর জাগে;
হৃদয়ে হৃদয়ে পূজার আনন্দ
খুশির দোল লাগে;
মা আসছে …
তাই তো ওঠে ঢাকের বোল …