Site icon আলাপী মন

গল্প- ফ্রেড এবং উদ্ভিদ

ফ্রেড এবং উদ্ভিদ
– সিটু ঘোষ

 

 

দিনটা ছিল মঙ্গল বার।। বাস স্টপেজ এ বাসের জন্য অপেক্ষা করছে ফ্রেড স্কুল যাবে বলে।। তখনি তার এক ছাত্র রিমন তাকে এক অদ্ভুত কথা বলে যা ফ্রেডোর অতীত মনে করিয়ে দেয়।। রিমন বলে, “স্যার, আমি কয়েকদিন ধরেই দুটো উদ্ভিদ নিয়ে চর্চা করছিলাম, এবং তাদের মধ্যে আজ এক অদ্ভুত পরিবর্তন দেখলাম।। দেখলাম যে একটা উদ্ভিদের পাতা হলুদ হয়ে আসছিল কিন্তু আজ দেখি সেই হলুদ পাতাটা সবুজ হয়ে গেছে।।” রিমন আরো বললো যে স্যার আমি বা আমার পরিবারের কেউই কিন্তু উদ্ভিদ টার কোনো যত্ন করেনি তা সত্যেও এই পরিবর্তন ।। ফ্রেড বললেন আচ্ছা চলো আজ আমিও স্কুল বন্ধ করছি তুমিও করো আর এসো আমার সাথে তোমাকে আমার এক অদ্ভুত আবিষ্কারের নিয়ে বলবো এবং তোমাকে সেই ব্যাপারে কিছু নমুনা দেখাবো।। রিমন ভাবছে স্যার কে আমি এক অদ্ভুত ঘটনার কথা বললাম কিন্তু স্যার কিছুই বললেন না বরং বললেন তার সাথে যেতে।। এসব কথা ভাবতে ভাবতে রিমন স্যার সাথে তার বাড়ির দিকে রওনা দিলেন।। আর এদিকে ফ্রেড ভাবছেন যে এতদিনে আমি আমার মনের মত স্টুডেন্ট পেয়েছি ঠিক আমারই মত।।

রিমন স্কুলের মধ্যে যেমন খুব ভালো ছেলে পড়াশুনো তে, ঠিক তেমনি খুব বদমাশ।। তবে স্যার ফ্রেড এর রিমন কে ভালো লাগতো কারণ সে স্কুলের বেস্ট স্টুডেন্ট হওয়া সত্বেও কোনোদিন প্রথম দশের মধ্যে নিজেকে রাখার চেষ্টা করতো না অবশ্য পরীক্ষার সময় ইচ্ছে করেই কিছু প্রশ্ন এর উত্তর ভুল করে আসতো।। কারণ রিমন সর্বদা নিজেকে এভাবেই প্রস্তুত করত যে আমি প্রথম হওয়ার জন্য স্কুল যাবনা আমি নতুন কিছু শিখতে স্কুলে যাবো।।

এদিকে রিমন ফ্রেড-এর বাড়িতে এসে পৌঁছেছে। ফ্রেড রিমনকে প্রথমেই নিয়ে গেলো তার গবেষণা গারে।। রিমন অবাক হয়ে গেলো এই দেখে যে যাকে স্কুলের সকলে মিলে মজা করে তিনি কিন্তু তেমন নন তার শিক্ষার জ্ঞ্যান অনেক বেশি।এতটাই জ্ঞ্যান বেশি যে আমাদের স্কুলের অন্য ছাত্র কেনো সকল শিক্ষকের থেকে জ্ঞ্যান বেশি। তবুও বেশি অপমান ফ্রেড কেই শুনতে হয়। ফ্রেড ঘটনা বলা শুরু করলো রিপনকে।

তখন বয়েস ছিল 27 বছর। উদ্ভিদ নিয়ে গবেষণা করছিলাম প্রেসিডেন্সি কলেজে। শরীর টা হঠাৎ খারাপ হওয়াতে বাড়ি আসি এক মাসের ছুটি নিয়ে। কিন্তু ওই একমাস আমায় এমন এক শিক্ষা দেয় যার জন্য আমি গবেষণা ছেড়ে শিক্ষক হয়ে উঠি। তবে রিমন এই ঘটনা কেবল তোমার আর আমার মধ্যেই থাকবে কাউকে বলো না।তোমার ঐ অদ্ভুত ঘটনার উত্তর আমার কাছে আছে কিন্তু সেটা কেবল তুমি জানবে আর কেউ না। প্রথম দুদিন খুব শরীর টা দূর্বল ছিল তারপর ধীরে ধীরে সুস্থ হতে থাকি। একদিন কি মনে হলো ভাবলাম উদ্ভিদের তো প্রাণ আছে আমাদের মতোই তাহলে কি ওরাও আমাদের মত কথা বলতে পারে!! তাহলে কি ওদের ও শরীর খারাপ হয়!! তাহলে কি ওরাও আমাদের মত গল্পগুজব করে!! যেমন ভাবা তেমন কাজ লেগে পড়লাম বাড়িতেই গবেষণা করতে। কিছু ইনস্ট্রুমেন্ট বাড়িতে ছিল কিছু কিনে নিয়ে আনতে হলো। খরচ টা খুব বেশি পড়েছিল অবশ্য। প্রথমে দুটো উদ্ভিদ নিয়ে গবেষণা শুরু করলাম । দিনের বেলা নমুনা সংগ্রহ করতাম এবং রাতে গবেষণা করতাম। রিমন কে বললেন দেখো আমার বাগানে ওই দুটো আম আর নিম গাছ আছে দেখছো ওই দুটো দিয়েই নমুনা নিয়ে গবেষণা শুরু করেছিলাম। দুটো গাছের মধ্যে প্রথমে নিউট্রিশন ঘটালাম এবং একসপ্তাহ অপেক্ষা করলাম।দেখলাম কারোর সালোকসংশ্লেষ এর ঘাটতি হলে বা ক্লোরোফিল উৎপাদনে ঘাটতি হলে একে অপরকে সাহায্য করে আবার দেখলাম যে কার্বন ডাই অক্সাইড এর অভাব পড়লে একে অপরকে সাহায্য করে। এবার তোমার প্রশ্ন হবে কিভাবে?দেখো যেমন আমাদের ক্ষেত্রে রান্নাতে ধরো নুন কিংবা চিনি কিংবা হলুদ এর অভাব পড়লো তখন আমরা কি করি? যদি দোকান বন্ধ থাকে পাশের বাড়ি থেকে নিয়ে আসি। আমাদের হাত পা আছে তাই আমরা হেঁটে চলে যেতে পারি। কিন্তু ওদের তো হাত পা নেই যে হেঁটে চলে যাবে এবং গিয়ে নিয়ে আসবে। তাহলে ওরা কিভাবে নেয়? এর উত্তর খুঁজতে গিয়ে আমি হতবম্ব হয়ে গেলাম।দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে পর্যবেক্ষণ করে দেখলাম সেখানে কিছু ছত্রাক, কিট এবং কিছু মিথ জীবির বসবাস আরো কিছু জীব ছিল যেগুলো শনাক্ত করতে পারলাম না। দেখলাম ওগুলোর মাধ্যমেই এক গাছ অন্য গাছ কে সাহায্য করে। এবার তোমার প্রশ্ন হতে পারে ছত্রাক কিংবা কিট যেগুলো আছে ওরা কেনো সাহায্য করবে? ধরো আম গাছে খাদ্যের অভাব পড়লো। তখন নিম গাছ তার 10 ভাগের 2 ভাগ খাদ্য ওই ছোট আণুবীক্ষণিক জীবের মাধ্যমে আম গাছে প্রেরণ করে। এবার আণুবীক্ষণিক জীবগুলো ওই 2 ভাগের 0.009 ভাগ খাদ্য সংগ্রহ করে নিজেদের মধ্যে রেখে দেই আর বাকিটা আম গাছকে প্রেরণ করে।

কিন্তু স্যার ওরা কথা বলে না? বা কথা বললে কিভাবে বোঝা যায়?

ভালো প্রশ্ন করেছ। আমারও ঠিক এই ভাবনায় এসেছিল ওরা কথা বলে কিভাবে? আমি ওই গাছগুলোর নমুনা নিয়ে সনোগ্রাফি যন্ত্রের মাধ্যমে কথা শোনার চেষ্টা করলাম। বেশ বেগ পেতে হয়েছিল এর জন্য। অনেকবার শোনার পরো কিছু না বুঝতে পেরে অবশেষে আমি শব্দ গুলো খাতায় লিখতে থাকি। অবশেষে তার মানে বের করতে গিয়ে তো আমার চক্ষু চড়কগাছ। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে নমুনা নিচ্ছিলাম এর ফলে ওরা নাকি খুব বিরক্ত হয়েছে। আম গাছ আর নিম গাছের মধ্যে কথা হচ্ছে, “আমাদের মনে হয় আর বাঁচতে দেবে না ওই মানব, প্রতিদিন একটু একটু করে অংশ কেটে নিয়ে যায়, মনে হচ্ছে যেনো আমাদের মৃত্যুর আগেই ওই মানব আমাদের মেরে ফেলবে।ওই মানবকে হাওয়া প্রদান করি আমরা এমনকি বেঁচে থাকার সবথেকে মূল্যবান অক্সিজেন আমরা সরবরাহ করি। তারপরও……”

এসব কথা আর শুনতে ভালো লাগলো না চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়লো। আমি ভাবলাম তখনি তাহলে আমার গবেষণা এখানেই স্থগিত করি।কেননা এই কথা শোনার পর উদ্ভিদের নিয়ে যেই গবেষণাই করি এই কথাগুলো কানে ভেসে আসবে। অবশেষে আমি প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে চিরতরে বেরিয়ে যায় এবং তোমাদের স্কুলে এখন শিক্ষকতা করছি।

Exit mobile version