উপহার
– সুদীপা ধর
আজ আমার সমস্ত কথাগুলো বুক চাপা কান্নায় পরিণত হয়েছে। যে কান্নার কোনো আওয়াজ নেই। যে কান্না শুকিয়ে গেছে বুকের মধ্যে। আমার সঙ্গে ওই বীভৎস ঘটনাটা ঘটার পর দেবাদিত্য তুমি আমাকে একটু একটু করে আবার কথা শিখিয়েছিলে। আমি তো এক প্রকার নীরব হয়ে গেছিলাম। নীরব শব্দগুলো আমার এদিক ওদিক ডানা মেলতো। আর আজকে তুমি পারলে এই ঘটনা ঘটাতে।
বছর পাঁচেক আগে যখন চার পাঁচ জন গণ-ধর্ষণ করে, ছিঁড়ে খেয়ে খালের ধারে ফেলে রেখে চলে গিয়েছিলো তখন তুমি এসে আমায় উদ্ধার করলে, পরম আদরে পরম যত্নের সাথে নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে আমাকে আশ্রয় দিলে, এতো আদর, এতো ভালোবাসা আমি হয়তো কখনো পাইনি। তুমি আমার নতুন নাম রাখলে রাধিকা। একটা মা যেমন একটা শিশুর যত্ন করে, দেবাদিত্য তেমনি তুমি আমার যন্ত্রণার জায়গায় ভালোবাসার প্রলেপ লাগিয়ে দিয়েছিলে। স্বপ্নমাখা পৃথিবীটা আবার যেন ভালো লাগতে শুরু করল। তোমাকে আমি আমার মণিকোঠায় রাজপুত্র কল্পনা করে আমার যন্ত্রণার প্রলেপগুলো ভুলে যেতে বসেছিলাম। তোমাকে নিয়ে আমি নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলাম। তুমি যখন আমার ঘরের দিকে আসতে তখন তোমার সেই পায়ের শব্দে আমি ভ্রমরের গুঞ্জন পাখির কলরব শুনতে পেতাম। পাঁচটি বছর এই ভাবেই কেটে যেতে লাগলো সুখের গালিচায়।
কিন্তু বছর পাঁচেক পর একটা দিনে তুমি আমাকে একটি ছোট্ট উপহার দিলে। আমি খুব বোকা ছিলাম, তোমার মনের এইসব কথা, ইচ্ছা আমি বুঝতেই পারিনি। সেই ধর্ষকগুলো আমাকে শারীরিক যন্ত্রণা দিয়েছিল, তুমি যে যন্ত্রণাটা দিলে সেটা মানসিক। এক কঠিন কুঠারাঘাত করলে আমার মনের আত্মাতে। সেদিন জানলার ধারে বসে ভাবছিলাম আমি, আমাদের সম্পর্কের কথা, হঠাৎ তুমি রাধিকা বলে ডাকলে আর একজনের সাথে আলাপ করালে। যখন জিজ্ঞেস করলাম উক্ত ব্যক্তির পরিচয় কী, তুমি বললে আজ থেকে নাকি এর বাড়িতেই আমার নতুন ঠিকানা, যে কথাটা বললে তার আগে আমার মরণ কেন হল না, তুমি বললে এনার কাছে নাকি আমাকে বিক্রি করে দিয়েছো, কিছু বলতে পারলাম না, শুধু বললাম, এতদিনে একটুও ভালোবাসো নি? তুমি বললে, ভালোবাসায় তোমার নাকী ঘেন্না। তুমি যে নারীকে ভালোবেসে ছিলে সে নাকি তোমায় ছেড়ে চলে গেছে বিরাট এক ধনবানের কাছে। তোমার কাছে নাকি সব নারীই সমান। কিছু আর বলতে পারলাম না, শুধু বললাম তোমাকে আমি মনে রাখব সারা জীবন, দগ্ধ হব প্রতি রাত তোমার দেওয়া এই উপহারের কাছে। যতদিন বাঁচবো তোমার দেওয়া এই উপহারটিকে যত্নে সাজিয়ে রাখবো বুকের মাঝে।