পুর্নমিলন
– জয়তী মিত্র
চাকরি নিয়ে বিদেশে যাবার কিছুদিনের মধ্যে সৌরভ এলিনার প্রেমে পড়লো। দুজনে একই অফিসে চাকরি করে। এলিনা যেমন সুন্দরী তেমনি খুব শান্ত প্রকৃতির মেয়ে। তার মিষ্টি স্বভাব আকৃষ্ট করেছিল সৌরভকে। এত সুন্দরী, কিন্তু কোনও অহঙ্কার নেই। শিশুর মতো সরল। অন্য দিকে সৌরভও টল ডার্ক, হ্যান্ডসাম। এলিনাও প্রথম দেখাতেই প্রেমে পড়েছিল সৌরভের। এক অফিসে চাকরির সুবাদে রোজ দেখা হতো দুজনের। ফলে খুব তাড়াতাড়ি দুজন দুজনের কাছাকাছি এসে গিয়েছিল। বছর পার হতেই তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়।
এদিকে বাড়িতে বিয়ের কথা জানাতেই সৌরভের বাবা বেজায় চটে গেলেন। তিনি ছেলেকে সাফ জানালেন, এই বিয়ে তিনি মানেন না। তাই ছেলের সাথে আর সম্পর্ক রাখতে চান না। ছেলে বিদেশিনীকে বিয়ে করেছে শুনে সৌরভের মা তো কদিন খুব কান্নাকাটি করেন। একদিন ছেলেকে ফোন করে বলেন, “কেন না জানিয়ে বিয়ে করলি বাবা? আমার কত শখ ছিল ধূমধাম করে তোর বিয়ে দেব, তুই আমার একমাত্র সন্তান, আমার কোনও ইচ্ছা আর পূরণ হল না।’
ছেলে মা-কে বলে, “মা এলিনা খুব ভালো, তোমার ওকে খুব পছন্দ হবে তুমি দেখো। আমি দুই তিন বছরের মধ্যে দেশে ফিরবো। তোমাদের কাছে থাকবো। ওখানেই কিছু একটা চাকরি খুঁজে নেব।
তারপর থেকে ছেলের সাথে মায়ের মাঝে মধ্যে ফোনে কথা হতো। সৌরভের বাবা জানতেন না, যে মা ছেলের যোগাযোগ আছে। জানলে হয়তো তিনি খুব অশান্তি করতেন।
তারপর একদিন সৌরভ এলিনাকে নিয়ে দেশে ফিরে নিজের বাড়িতে যায়। শাড়ি পড়ে একমাথা ঘোমটা দিয়ে শাশুড়ি মা-কে প্রণাম করে বলে, ‘আমি ছোটবেলায় বাবা, মাকে হারিয়েছি, মামার বাড়িতে মানুষ। মামা-মামীর সন্তান ছিল না, তারা আমাকে অনেক আদরে মানুষ করেছে। আজ থেকে তুমি আমার মা।’ এই কয় বছরে এলিনা সৌরভের কাছে ভালোই বাংলা ভাষা শিখেছে। তবে একটু বিদেশী টান আছে। সে তো থাকবেই। বিদেশিনী বলে কথা। বৌমার মুখে মা ডাক শুনে সৌরভের মা আনন্দে আপ্লুত হয়ে গেলেন। বৌমাকে বরণ করে ঘরে তুললেন।
সেই সময় সৌরভের বাবা একটু কাজে বাইরে গেছিলেন। ফিরে এসে তিনি ছেলে বৌমাকে দেখে খুব রেগে গিয়ে ছেলেকে বললেন, “কেন এই বাড়িতে এসেছো? বেরিয়ে যাও, কোনোদিন আসবে না এইখানে।” সৌরভের মা বললেন, “আমি মেনে নিয়েছি তুমিও মেনে নাও, বৌমাকে আশীর্বাদ করো।” তখন আরো রেগে উনি বললেন, “তাহলে আজ থেকে ছেলে বৌমার সাথে থাকো গে যাও। এই বাড়িতে তোমাদের কোনো জায়গা নেই।”
এলিনা তৎক্ষণাৎ শ্বশুর মশাইয়ের পায়ে প্রণাম করে বললো, “আমাকে তাড়িয়ে দিলেন বাবা, আমার বাবাকে ছোটবেলায় হারিয়েছি, আবার নতুন বাবা পেয়ে মন ভরে গিয়েছিল। ঠিক আছে বাবা, আমরা চলে যাচ্ছি। আর আসবো না। চলো সৌরভ বাবা আমাদের চলে যেতে বলেছেন।’ মায়ের চোখে জল, স্বামীর বিরুদ্ধে তিনি কিছু বলতেও পারছেন না। এমন সময় সৌরভের বাবা বললেন, “কোথায় যাবি এই বুড়ি আর বুড়োকে ফেলে? আয় মা কাছে আয়। সৌরভও বাবাকে প্রণাম করে বললো,”আমি কোনও ভুল করিনি বাবা, এলিনা তোমাদের সত্যিকারের যোগ্য বৌমা হবে, দেখে নিও, ওর উপর সেই বিশ্বাস আমার আছে।” বাবা ছেলেকে বুকে জড়িয়ে বললেন, “আর আমাদের ছেড়ে কোথাও যাবি না কথা দে।” সৌরভ বললো,”আজ থেকে এই বাড়িতেই থাকবো, তোমাদের ছেড়ে কোথাও যাবো না।”
ছেলে আর বাবার এই পুনর্মিলন দেখে এলিনা আর তার শাশুড়ি মায়ের মুখে তখন চওড়া হাসি।
সৌরভের বাবা বললেন,”সামনের মাসে একটা শুভ দিন দেখে আমি একটা অনুষ্ঠান করবো গিন্নি। তুমি কাকে, কাকে নিমন্ত্রন করবে লিস্ট করতে থাকো।
অনবদ্য লেখনী