Site icon আলাপী মন

গল্প- পেয়িং গেস্ট

পেয়িং গেস্ট
-রাখী চক্রবর্তী

খবরের কাগজে পেয়িং গেস্টের বিজ্ঞাপন দেখে অনেকটা নিশ্চিন্ত হল আবীর। ফুলবাগান থেকে অফিস যেতে মাত্র একঘন্টা সময় লাগবে।আবীর আর একটুও সময় নষ্ট না করে রেডি হয়ে নিল রুম দেখতে যাওয়ার জন্য। তার আগে অবশ্য ফোনে কথা বলে নিয়েছে।
রবিবার অনেক কাজ থাকে ওর। তবুও এই কাজটা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। কৃষ্ণনগর থেকে সল্টলেক আবীর আর ভাবতে পারছে না। অফিস থেকে ওর বের হতে যেদিন দেরি হয় সেদিন ওকে যা ভুগতে হয় তা ওই জানে।
কৃষ্ণনগর সিটি লোকাল ট্রেনে চেপে আবীর বিধাননগর স্টেশনে নামলো। ট্যাক্সি নিয়ে ফুলবাগানে পৌছে গেল। তখন সন্ধ্যে হয়ে গেছে। কলিং বেল বাজতেই এক ভদ্রলোক দরজা খুললেন। আবীর নিজের পরিচয় দিতেই উনি বললেন- আসুন আবীর বাবু আপনার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।
আবীর বললো- আপনি পেয়িং গেস্টের বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন?
-হ্যাঁ, আমি বিহারীলাল দত্ত।
-নমস্কার স্যার
বিহারীলাল দত্ত বললেন- চলুল আবীর বাবু রুমটা একবার দেখে নিন।
-হুম সিওর।

বিহারীলাল দত্ত দোতলায় নিয়ে গেলেন আবীরকে।এই রুমটা আপনার জন্য বলে দরজার তালা খুলে আবীরকে ঘরের ভেতরে নিয়ে গেলেন।

আবীর রুমটা দেখে মনে মনে বললো, ওয়াও দক্ষিণে জানলা আবার ব্যালকনিও। জাস্ট দুধ জমে ক্ষীর ওয়াও ক্যায়া বাত আবীর। শান্তি শান্তি। যদি হয় আজ থেকেই এখানে..

-কিছু তো বলুন আবীর বাবু।

বিহারীলাল দত্তের কথা শুনে আবীর থতমত খেয়ে বললো- নাইস স্যার, আমার পছন্দ হয়েছে।
-ব্যাস তাহলে আর কি। আজ থেকেই এই রুম আপনার।

-কে কে থাকেন স্যার এই বাড়িতে?

– আমার ওয়াইফ, ও হো আর আপনি আবীরবাবু

-ওহো.. আবীর একগাল হেসে বললো।

বিহারীলাল দত্ত বললেন- আবীর বাবু এবার কাজের কথায় আসি।

-হ্যাঁ বলুন, কত দিতে হবে থাকা খাওয়া?

– টাকা পয়সা! ও সব পরে হবে। সকাল ও রাতের হেবি খাবার। দু বার চা বা কফি। ছুটির দিন লাঞ্চ পাবেন। সপ্তাহে তিনদিন ভেজ বাকি দিন ননভেজ।ভালো তো।
-যা বলার এখুনি বলুন খোলাখুলি। পরে ঝঞ্ঝাট ভালো লাগবে না। আর এ মাসের পেমেন্ট কবে দিতে হবে? আমি আজ থেকেই থাকবো। কাল অফিস আছে.. বলেই আবীর ঘড়ি দেখলো রাত্রি আটটা বাজে।
– ও সিওর, চা না কফি?
-চা..

-হেমা..হেমা দু’ কাপ চা আর নাস্তা নিয়ে ওপরে আয়।

আবীর বিহারীলাল দত্তের ব্যবহারে মুগ্ধ। চা নাস্তা করে আবীর একটু বাইরে বের হলো। কিছু কেনাকাটা করে রুমে ফিরলো। তখন রাত দশটা
হেমা আবীরের রুমটা ঠিকঠাক করে সাজিয়ে রাখলো। আজ খুব ক্লান্ত আবীর। ডিনার করেই ঘুম দিলো।
সোমবার আবীর সকালে এক ঘন্টার জন্য অফিস গেল। তারপর রুমে ফিরে স্নান খাওয়া সেরে ঘুম, নিশ্চিন্তের ঘুম দিল আবীর।
-দাদাবাবু দরজা খুলুন চা যে ঠাণ্ডা হয়ে যাবে।
দরজায় ধাক্কা মারার শব্দে আবীরের ঘুম ভাঙলো । চায়ের কাপ নিয়ে আবীর ব্যালকনিতে এলো।আকাশে লালচে রঙে মেঘেরা খেলা করছে, একটা মেঘ ছুটে যাচ্ছে আর কতগুলো মেঘ আকাশের লালচে রঙে ডুব দিচ্ছে। পাখিরা সারি বদ্ধ হয়ে ঘরে ফিরছে। ঠিক যেমন অফিস ফেরত আমরা বাড়ি ফিরি। মার জন্য খুব মন খারাপ লাগছে।কিন্তু কিছু করার নেই যে মা। স্টেশন থেকে বাড়ি যেতে দু’ ঘন্টা লেগে যায়। ক্লান্ত হয়ে যায় শরীর।তখন আর কিচ্ছু ভালো লাগে না।
পিউ খুব খুশি হবে আমি কোলকাতায় শিফট্ হয়েছি শুনে। কিন্তু তিন মাস হয়ে গেল সেই যে মামার বাড়ি যাবে বলে পিউ আমার সাথে দেখা করলো। এখনো কি ওর মামার বাড়ির আদর খাওয়া শেষ হয়নি! ফোনেও পাচ্ছি না। নম্বরটা পাল্টে দিলো অথচ আমাকে জানালো না। আমার নম্বর তো ওর কাছে আছে।
মিস ইউ পিউ। আমার মতো এততটা তোমাকে কে ভালবাসবে বলো তো ডার্লিং।
পিউ আবীরের বর্তমান ভবিষ্যত। হ্যাঁ ও বলেছিল তো এই কথাই।
পিউ বলেছিল ফুলবাগানে থাকে। কিন্তু বাড়ির ঠিকানা সেভাবে নেওয়া হয়নি। ভেবেছিলাম এর মধ্যে একদিন যাব ওদের বাড়ি। পিউ বলেছিল ওর বাবা নাকি খুব রাগী। মেয়ে প্রেম করছে জানলে কুপিয়ে মেরে ফেলবে দুজনকেই। না থাকবে বাঁশ না বাজবে বাঁশি ।

নানান কথা ভাবতে ভাবতে বেশ রাত হয়ে গেল।আবীরের ডিনার নিয়ে হেমা এল। ততক্ষণে ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। দপদপ করতে করতে টিউব লাইট বন্ধ হয়ে গেল। মানে লোডশেডিং হয়ে গেল।ইনভাটার দু’দিন হল খারাপ হয়ে গেছে। পরশু দিন লাইট মিস্ত্রি ঠিক করতে আসবে। হেমা মোমবাতি জ্বালাতে জ্বালাতে বললো।
আবীর বললো ঠিক আছে দিদি। কোনো অসুবিধা হবে না।
রুটি তরকা খেয়ে মোমবাতি নিভিয়ে আবীর শুয়ে পড়লো।

“চাঁদ ছুপা বাদলমে..শরমাকে মেরি জানাআ..”
আবীরের ঘুম ভেঙে গেল গান শুনে। সুরেলা কণ্ঠ স্বর। জাদু আছে কণ্ঠে। পিউর গানের গলা ঠিক এই রকম। আবীরের প্রিয় গান বলে পিউর সাথে দেখা হলেই এই গানটাই গাইতো পিউ। আবীর কিছুটা অন্যমনস্ক হয়ে গেল। গানটাও থেমে গেল।মোবাইলে দেখল রাত আড়াইটে বাজে। বাথরুমে গেল আবীর। বাথরুম থেকে বেরিয়ে জানলার কাছে আসতেই ব্যালকনিতে একজনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আবীর চিত্কার করে উঠলো, ‘কে ওখানে.. কে?’
বলতেই নিমেষে উধাও হয়ে গেল। পুরুষ না মহিলা বুঝতে পারলো না আবীর। চাদরে ঢাকা পুরো শরীর। তারপর সিগারেটে টান দিয়ে আবীর শুয়ে পড়লো।
সকালে ঘুম থেকে উঠে দোতলাটা ভালো করে ছানবিন করছে আবীর। কটা ঘর আছে। পাশের ঘরে কে থাকে এইসব জানার চেষ্টা করছে।একতলায় বিহারীলাল দত্ত ও তার ওয়াইফ থাকে সেটা ও জানে। কিন্তু দোতলায় ওই ঘরটাতে কে থাকে সেটা জানার খুব ইচ্ছে আবীরের। কারণ গতকাল রাতে যাকে দেখেছিল আবীর নিশ্চয়ই সে ওই ঘরে থাকে। তা না হলে ঐ ঘরের সামনে ব্যালকনিতে সে দাঁড়াতো না অত রাতে।
তিনতলায় যাবার সিঁড়ি খুব নোংরা। বোঝাই যাচ্ছে কেউ পা রাখে না এখানে।
এবার আবীর ওই ঘরের সামনে এসে দেখলো দরজার পর্দাটা হাওয়াতে দুলছে। তাতেই ও দেখতে পেল বিশাল বড় তালা ঝুলছে দরজাতে।
আচ্ছা তার মানে সকাল সকাল বেরিয়ে যান রাতে বাড়ি ফেরেন। কারণ কাল বিকেলে-রাতে ওনাকে তো দেখা যায় নি। আবীর অনেক কিছু তথ্য নিজেই সংগ্রহ করে নিজের রুমে চলে গেল।
চা টোস্ট হেমা দিয়ে বললো, ‘দাদাবাবু স্নান করে নিন ভাত দিয়ে যাব।’
আবীর বললো, ‘দিদি একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো।’
-হ্যাঁ, বলুন..
-আমার পাশের ঘরটিতে কে থাকে?
-যাই মা। ওই মা ডাকছে আমাকে বলেই হেমা দে ছুট।
আবীর চা খেয়ে স্নান করে ভাত খেয়ে অফিস চলে গেল।
রুমে ফিরলো আবীর রাত নটার সময়। হাত মুখ ধুয়ে কফি খাচ্ছে ব্যালকনিতে বসে। সুন্দর হাওয়া দিচ্ছে।
আবার পিউর স্বপ্নতে মগ্ন আবীর। হবে নাই বা কেন সাত মাস প্রেমের বয়স ওদের। তারপর তিন মাস হলো কোনো খবর নেই পিউর। চিন্তার শেষ নেই আবিরের।
রাত বারোটা বাজে আবীর মোবাইলে গেম খেলছে। হঠাৎ কান্নার শব্দ শুনতে পেয়ে মোবাইলের সাউন্ডটা কম করে কান পেতে রইলো আবীর যদি আবার শুনতে পায় কান্নার শব্দ। না, কোথায় কোনো শব্দ নেই তো। আবীর এবার শুয়ে পড়লো। রাত বাড়ছে যত আবীরের ছটফটানি তত বাড়ছে।কিসের অপেক্ষাতে আছে যেন ও। তবে কি কাল রাতের গানের..

আজ আর ও ঘুমাবে না রাতে ঐ ঘরে কে আসে দেখতে হবে ।চারদিক নিঝুম নিস্তব্ধ। ঘুমিয়ে পড়েছে গোটা পাড়ার মানুষ। জুতোর ঠকঠক শব্দ। মনে হচ্ছে সিঁড়ি দিয়ে কেউ ওপরে উঠছে। আবীর নিঃশ্বাস বন্ধ করে দরজার ফাঁক দিয়ে দেখার চেষ্টা করছে কে আসছে ওপরে।
ক্যাচ ক্যাচ শব্দ হলো দরজাটা যখন খুললো।আবীর মুখ বাড়িয়ে দেখলো, কালো স্কার্ট পড়া একটি মেয়ে হিল তলা জুতো পড়ে আছে। পা দু’টো ফর্সা কালো রঙ দারুণ খেলছে পায়ের ওপর।
আবীর আস্তে আস্তে ঐ ঘরের সামনে গেল।
-ভেতরে এসো আবী।
পিউ কোথা থেকে এলো! একমাত্র পিউ ওকে আবী বলে ডাকতো!
-কে..কে? আবীর থতমত খেয়ে বললো।

-আমি, ভুলে গেলে?মেয়েটি চাদরটা মাথা থেকে সরিয়ে দিতেই আবীর বললো, ‘পিউ তোমার বাড়ি এটা। ও মাই গড।’
-ভেতরে এসো।

এতদিন পর পিউকে পেয়ে আবীর পিউকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে কিছুতেই ছাড়ছে না। আজ আর কোনো কথা না। তোমাকে আর ছাড়ছি না। কালই বিয়ে করবো আমরা ।

সকাল বেলায় আবীরের ঘুম ভাঙলো তখন দশটা। হেমা নাকি অনেক ডেকেছে চা নেওয়ার জন্য।
আবীর বললো, ‘দিদি আজ অফিস ছুটি তাই একটু দেরি করে ঘুম থেকে উঠলাম।’
আবীর কাল রাতের ঘটনা মনে করার চেষ্টা করছে। পিউ জল খেতে দিলো ওকে তারপর কিছু মনে নেই ওর।
হেমা চা টোস্ট আবীরকে দিয়ে চলে গেল।।আবীর চায়ের কাপ নিয়ে দরজার সামনে আসতেই দেখলো হেমা পিউর ঘরের দরজা খুলছে।
আবীর ভাবলো, পিউ তাহলে সকালেই বেরিয়ে গেছে। আবীর আর দেরি না করে পিউর ঘরে ঢুকলো। ঘর ভর্তি পিউর নানান পোজে সব ছবি ল্যামিনেশন করা। ঘরটার চারদিক দেখছে আবীর।গতকাল রাতে তো ভালো করে কিছুই দেখতে পারেনি। এর মধ্যে হেমা ফিসফিস করে বললো, ‘এই ঘরে কখ্খনো আসবেন না। দাদাবাবু জানতে পারলে গর্দান নেবেন।’

আবীর মনে মনে বললো, জানি জানি পিউর বাবা পছন্দ করে না তার মেয়ের সাথে কোনো ছেলের সম্পর্ক থাকুক।
আবীর বললো, ‘দিদি পিউ কোথায় যায় রোজ সকালে আর অনেক রাতে বাড়ি ফেরে।’
হেমার হিচকি শুরু হয়ে গেল। ‘কি যাতা বলছেন দাদাবাবু..’
-হ্যাঁ দিদি, কাল রাতেও তো অনেক রাত করে ঘরে ঢুকলো। তার আগের দিনও।
-দাদাবাবু আপনি পিউ দিদিমনিকে চিনলেন কি করে?
-চিনবো না আমি যে ওকে খুব..কিন্তু দিদি আপনি ওভাবে তাকাচ্ছেন কেন?
-কি খুব?
-না কিছু না..
হেমা দরজা বন্ধ করে তিনতলায় চলে গেল। আবীর ভাবল হেমা দিদি একতলায় গেছে।
হেমা দিদি হেমা দিদি আবীর চিৎকার করে ডাকতে ডাকতে একতলায় নেমে এলো।
-কে তুমি বাবা? এখানে কি করে এলে?
-আপনি কি পিউর মা? দু’দিন হলো আমি এসেছি আপনাকে দেখিনি তো?
-পিউকে তুমি চেনো বাবা?
-হ্যাঁ, আমি পিউকে খুব চিনি। কিন্তু তিন মাস পিউকে কতো খুঁজেছি। এখানে এসে পিউকে পেলাম।
-মানে!
-কাল রাতে পিউর সাথে আমার দেখা কথা সব হয়েছে। কিন্তু আন্টি আপনাকে পরশু থেকে একবারও দেখিনি। কোথায় ছিলেন আপনি?
-তুমি আমাকে দেখোনি! কিছুই তো বুঝতে পারছি না।
-পিউর বাবা খবরের কাগজে পেয়িং গেস্টের বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন। আমি সেই বিজ্ঞাপন দেখে রবিবার সন্ধ্যা বেলায় এখানে আসি। তখন অবশ্য জানতাম না এটাই পিউর বাড়ি। তারপর থেকে বিহারীলাল দত্ত স্যারের সাথে দেখাও হয়নি আর আপনার সাথেও না। যাক ভালোই হল আন্টি।আমাকে আপনার ছেলে ভাবতে পারেন। কোনো সমস্যা হলে অবশ্যই বলবেন।
-হ্যাঁ, হ্যাঁ, ঠিক আছে। ।খবরের কাগজের বিজ্ঞাপনটা দেখাতে পারবে?
-হ্যাঁ। এক মিনিট আন্টি।
হেমা দিদি, হেমা দিদি বলতে বলতে আবীর দোতলায় চলে গেল।

কি বলছে ছেলেটা! হেমা, পিউর বাবা, পিউ?
সুস্থ আছে তো ছেলেটা! পেয়িং গেস্ট! কি বলছে? আমি দুদিন বাড়ি ছিলাম না। শনিবার রাতে বাড়িতে তালা দিয়ে বোনের বাড়ি গেলাম আজ বুধবার বাড়ি ফিরলাম। তাহলে ছেলেটাকে বাড়িতে ঢুকতে দিল কে?

-আন্টি আন্টি এই নিন খবরের কাগজ।বিজ্ঞাপনটা দেখে নিন।
আবীর পিউর মা’র ঘরে ঢুকে বিহারীলাল দত্তের ছবিতে মালা দেখে চমকে উঠলো। বিহারীলাল দত্ত স্যারের গলায় রজনীগন্ধার মালা কেন? পিউ কোথায় যায় রোজ? হেমা দিদিকে কত করে ডাকছি সারা দিচ্ছে না।
পিউর মা বললো, ‘তুমি এখানে বসো, কোথায় পেয়িং গেস্টের বিজ্ঞাপন?’
-এই পেজই তো আছে।
আবীর খবরের কাগজ তন্ন তন্ন করে খুঁজলো। কোথাও পেল না ফুলবাগানের পেয়িং গেস্টের বিজ্ঞাপন। আবীরের গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে। হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে গেল। আবীর মোবাইলে কল লিস্ট চেক করতে গিয়ে দেখলো সব ডিলিট হয়ে গেছে। ফোনে কোনো নম্বর নেই। ক্লিন ফোন।আবীরের মাথাটা ঝিমঝিম করছে।
পিউর মা বলতে লাগলো, ‘তিন মাস আগের ঘটনা
পিউর বাবা পিউর বিয়ে ঠিক করেছে। পিউ জানতে পেরেই ওর বাবাকে বলে দিয়েছে ও অন্য কাউকে ভালবাসে। ওর বাবা রেগে বললো, তোমাকে এই ছেলের সাথে বিয়ে দেবো। আমি শর্মাকে কথা দিয়েছি।’
-না বাবা আমি যাকে ভালবাসি তাকেই বিয়ে করবো।
হেমা চিৎকার করে ডাকলো আমায়, ‘বৌদিমনি শিগগির আসুন দাদাবাবুর সাথে দিদিমনির কথা কাটাকাটি হচ্ছে।’ আমি তড়িঘড়ি করে ওপরের ঘরে ঢুকে দেখি সব লণ্ডভণ্ড পিউর ঘরে।
ওর বাবা চাবুক দিয়ে পিউকে মারছে। আমার কথা শুনলো না ওর বাবা। পিউর নজর গেল টেবিলে রাখা কাঁচির দিকে। নিমেষে কাঁচি নিয়ে নিজের হাত পেটে কোপাতে লাগল পিউ। কিছুক্ষণ পর ওর রক্তাক্ত শরীর মেঝেতে লুটিয়ে পড়লো। ডাক্তার আসতে আসতে সব শেষ। এই ঘটনার পাঁচ দিনের মধ্যে পিউর বাবা গায়ে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করলো। হেমা ওর দাদাবাবুকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেও পুড়লো। হসপিটালে দুজনকেই ভর্তি করলাম। তিনদিন পর দুজনেই মারা গেল। সেই থেকে আমি একা থাকি এই বাড়িতে। তবে শনিবার বিকেল থেকে সোমবার পর্যন্ত আমি এ বাড়িতে থাকি না। রবিবার পিউর মৃত্যু হয়েছিল। সোমবার হেমা আর পিউর বাবার মৃত্যু হয়ে ছিল। অভিশপ্ত এই দুটো দিন আমার কাছে।’
আবীর অবাক হয়ে রইলো। পিউকে কাছে পাওয়া ওর গায়ের সুবাস এখনও ওর নাকে লেগে আছে।সব কি পিউর আত্মার। আমাকে এখনও পিউ ভালবাসে। আমি ওর জন্য চিন্তা করি ওকে বিয়ে করবো। আমার অফিস থেকে বাড়ি ফিরতে খুব কষ্ট হয়। পিউ একদিন বলেছিল, কলকাতায় পেয়িং গেস্ট থাকো। তারপর আমরা বিয়ে করে আমার বাবার বাড়িতেই থাকবো। অনেক বড় বাড়ি আমার। কত ভয়ে ছিল পিউ। ওর বাবা যদি জানতে পারে আমাদের সম্পর্কের কথা তাহলে মেরে ফেলবে আমাদের। ঠিক পিউকে মরতে হলো। কিন্তু উনি আমাকে পিউর আত্মার শান্তির জন্য নিয়ে এলেন এখানে। মানুষ বেঁচে থাকতে যদি ভুলগুলো শুধরে নেয় তাহলে অকালে কাউকে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হয় না।
আবীর বললো, ‘আন্টি পিউকে আমি এখনও ভালবাসি। আমি পেয়িং গেস্ট হয়ে থাকবো।আপনি এই বাড়ি ছেড়ে আর কোথাও যাবেন না।
পিউ রাতে সারা বাড়ি ঘুরে বেড়ায় গান গায়।
‘চাঁদ ছুপা বাদলমে..শরমাকে মেরি জানাআআ..’
আবীর পিউর ঘরটা খুব সুন্দর করে সাজিয়ে রাখে। প্রতি রাতে পিউ আবীরের ঘরে আসে।ঘরকন্নার সাধ পূর্ণ করে ভোর বেলায় মেঘের আড়ালে চলে যায়। রাত হলে আবার ফিরে আসে পিউ নিজের সংসার সামলাতে। আবীর আর পিউর মতো সুখী পৃথিবীতে বোধহয় আর কেউ নেই।

Exit mobile version