Site icon আলাপী মন

অণু গল্প- শিক্ষার আলো

শিক্ষার আলো
– জয়তী মিত্র

 

 

শোন লক্ষ্মী কাল থেকে বিল্টুকে কাজ করতে পাঠাবি, বুঝলি। অনেক হইছে তুর বেটার লিখাপড়া। ও সব লিখাপড়া বড়লোক বাবুদের জন্য বুঝলি, ও সব আমাদের মত দিন আনা, দিন খাওয়া লোকের জন্য লয় রে। কাল সকালে মোর সাথে বিল্টু যেন বাবুদের বাড়ি কাজে যায়। আট কেলাস অবধি পড়াশুনা করেছে,আর দরকার নাই রে। পেটের জ্বালা ওই বই-খাতা গুলান নিভাইতে পারবে নি রে।
পরানের মুখের কথা শুনে লক্ষ্মীর মটকা গেল গরম হয়ে। লক্ষ্মী বললো,”মুই কত কষ্ট করে লোকের বাড়ি কাম করে, চেয়ে চিন্তে বিল্টুকে লিখাপড়া শিখাচ্ছি, আর তুই বাধা দিচ্ছিস। ওইসব অলক্ষুণে কথা একদম বলবিক লাই। আমাদের বিল্টু লিখাপড়া শিখে ওই বাবুদের মত চাকরি করবে, আর তুই বলছিস লিখাপড়া ছারান দিতে। মুই বেঁচে থাকতে এইসব হতে দিব লাই। আমার বল্টু অনেক কেলাস অবধি পড়াশুনা করবে। ওর জন্য আমি ঠিকা কাজ করার সাথে রান্নার কাজও লিয়েছি বাবুদের বাড়িতে। ওই মিত্র বাড়ির বউদিমনি আমাকে বুলেছে- লক্ষ্মী তোর ছেলের পড়াশুনার জন্য টাকা দেব, তুই ছেলেকে পড়া। বৌদি মনির কথাতে মুই অনেকটা ভরসা পেলাম রে।”
বল্টু বলেছে রাতের বেলা আমাকে পড়াইবেক। মুইও লিখাপড়াটা শিখবো।
পরান বলে, “তোর পোলা তোরে লিখাপড়া শিখাবে? ওই জন্য তোর আজকাল মুখে বুলি ফুটেছে। শোন লক্ষ্মী- এইসব লিখাপড়ার ভূতটা মাথা থেকে লাবিয়ে দে আর সংসারে মন দে।আজকাল কাজে কর্মে তোর মন নাই, সেদিন আধ পোড়া তরকারি দিলি, মুই কিছু বলিনি বটে, আর যদি এমন করিস পিটিয়ে তোর লিখাপড়ার ভূত তাড়াবো মনে রাখিস।”
তারপর আস্তে, আস্তে বিল্টু মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, কলেজ পাশ করলো। ভোরবেলা উঠে পরান যখন কাজে বের হতো, লক্ষ্মী তখন ছেলের কাছে বসতো লিখাপড়া শিখতে।
লক্ষ্মী এখন লিখতে,পড়তে সব পারে। বস্তির বাচ্চাগুলোকে বিকেলবেলায় লক্ষ্মী পড়ায়। স্বামী পরাণকেও লক্ষ্মী টিপ ছাপ দেবার বদলে সই করতে শিখিয়েছে। পরান এখন আর টিপ ছাপ দেয় না। বস্তির লোকেদের সামনে নিজের নামটা সই করতে পেরে নিজে গর্ববোধ করে লক্ষ্মীকে আদর করে বলে,”লক্ষ্মী লিখাপড়া শিখার যে আনন্দটা আছে আজ বুঝতে পেরেছি রে। তুই সত্যি আমার ঘরের লক্ষ্মী।” বস্তির বাচ্চাগুলোকে অক্ষর শিখিয়ে লক্ষ্মী আজ গর্বিত। এই বয়সে এসে লক্ষ্মী মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেছে। ভবিষ্যতে আরো পড়াশোনা করে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাবার স্বপ্ন দেখছে লক্ষ্মী। লক্ষ্মীর ছেলে আজ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক। লক্ষ্মীর অনুপ্রেরণাতেই আজ বস্তির ছেলে মেয়েগুলো শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়ে নিজেদের লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে।

Exit mobile version