রম্য- যুগের হাওয়া

যুগের হাওয়া
– সুজিত চট্টোপাধ্যায়

 

 

অমন খেঁকিয়ে উঠছো কেন বাপু। তোমায় তো কিছু বলিনি। তোমার গায়ে ফোস্কা পড়ছে কেন?
আকচার বুলি। কলতলার সকাল সাঁঝের মুখঝামটা ডায়লগ।
আচ্ছা , গন্ডারের গায়েও কী ফোস্কা পড়ে?
মুখপোড়া হনুমানের মুখ পোড়ে?
দুর মশাই , প্রবাদবাক্য গুলো সব গুলে খেয়ে হজম করে ফেল্লেন?
কানে দিয়েছি তুলো , পিঠে বেঁধেছি কুলো। মনে নেই ? সুতরাং কায়দা করে যতই গন্ডার , হনুমান বলে গালমন্দ করো , কিসসু হবে না।
পাঁঠার কি’বা পায়েস , কি’বা খিচুড়ি । সবসমান।
নদীর , সমুদ্রের জোয়ার ভাঁটা আছে।
পানা পুকুরের সেসব থাকে কী ? পল্লীর বউ মেয়েরা দুবেলা সেই পুকুরের পাড়ে বসে বাসন মাজে। পি এন পি সি করে। সেই গরবেই সে ডগমগ। আমি ছাড়া গতি নেই। ভাব খানা এমনই।

ভাবছেন কাদের কথা বলছি ? শুনুন,,,
পাড়ার নেতা । গবা দা। আগে অন্য একটা দলের জার্সি গায়ে মাতব্বরি করতো। তাদের সূর্য বর্তমানে অস্ত গেছে । তাই উদিত সূর্যের কিরণ মেখে , নতুন দলের পাড়াপতি। পানাপুকুর ।
জার্সির রঙ বদলেছে। কিন্তু স্বভাব ?
আবারও সেই প্রবাদবাক্য । স্বভাব যায় না মলে।
আচ্ছা , এইসব প্রবাদবাক্যের জন্মদাতা কে বা কারা বলুন তো ? যেই বা যারাই হোক , তাদের পায়ে , শতকোটি প্রণাম ।
আজকাল নেতাদের বিশেষ পোশাক থাকে।
এক এক দলের এক এক রঙের পোশাক। মুখে , প্যাকেটের পান জর্দার গন্ধ । কপালে রক্ত তিলক।
হাঁটাচলা জিরাফের মতো । চোখে মুখে হামবড়িয়া ভাব। সবজান্তা কয়লা ওয়ালা।

রাজনীতি বোঝবার দরকার নেই। দল বুঝলেই হলো। যখন যেমন তখন তেমন , ব্যস, এই একটিই নীতি। হাওয়া বুঝে দিক নির্ণয় করো। হাওয়া নিশান হও। মোরগের ঘুরপাক। গিরগিটির রঙ বদল।
লজ্জা , ঘেন্না , ভয়, তিন থাকতে নয়।
আবারও সেই প্রবাদবাক্য। কেয়াবাৎ,, কেয়াবাৎ।

বুদ্ধি আর কূটবুদ্ধি কী একই কথা ? চালাক, চতুর, বুদ্ধিমান , এই কথা গুলোর কী একই মানে ? না কি প্রতিটি শব্দ আলাদা আলাদা অর্থ বহনকারী?
বীরভোগ্যা বসুন্ধরা। এ যুগে বীর শব্দের অর্থই পাল্টে গেছে। জোর যার মুলুক তার। বুক ঠুকে জোরসে বলো , হাম হ্যায় রাজা। ব্যস, প্রজারা নতজানু। কিছু ঠুনকো মিথ্যে প্রতিশ্রুতি আর মাতব্বরির সঙ্গে একটু ধর্মের সুড়সুড়ি। ভীড়ে ভীড়াক্কার। ধ্বজাধারী গড্ডালিকা প্রবাহ।
চলেছে….চলেছে…. চলেছে…

বিনা পুঁজির কারবার। দলের মাতবর দের গায়ে গা ঘষো। হ্যাঁ য়ে হ্যাঁ , আর না য়ে না মেশাও। লবিতে ভিড়ে যাও। গোষ্ঠীতন্ত্রের ঢালাও কারবার।
এলাকা দখল করে দেদার জবরদস্তি অপারেশন চালাও।
শ্রদ্ধা ভক্তি নয়। ভয় করুক অমায়িক ভদ্র প্রকৃতির নিরীহ জনগণ। যেখানে ভয়, সেখানে জয়।
বোমা পিস্তলের যুগ। প্রতিবাদ করলেই লাশ ফেলে দাও। আইন রক্ষক নেতার চামচা। নেতা ই আসল বস। চেইন সিস্টেম। সর্বত্র রখরার নিপুণ বন্দোবস্ত।
রায় বেরুতে আড়াই যুগ। সাক্ষীসাবুদ লোপাট। মরে হেজে ভূত। হাজার হাজার পাতায় তদন্ত রিপোর্ট। চার্জশিট উই পোকার প্রিয় খাদ্য। শেষমেশ বেকসুর খালাস।
মার দিয়া কেল্লা। বোতল খোল। ধরা পড়লে তবেই চোর, নইলে সব ব্যাটাই সাধু। জয় হো ওওও।

Loading

Leave A Comment