কবিতা- স্বাধীনতা

স্বাধীনতা
– শচীদুলাল পাল

 

 

কঙ্কালসার ছেলেটি পায় না দুবেলা দুমুঠো ভাত,
পাথর ভেঙে যন্ত্রণা কাতর ক্ষতবিক্ষত হাত।

কাজে না গেলে অচল সংসার অভুক্ত কাটায় পরিবার,
বরখাস্তের ভয়ে ভয়ভীত জোটে মালিকের তিরস্কার।

যে ছেলেটি স্কুলের পথ বদলে বই ফেলে শ্রম দেয় কলে।
যে চাষা চাষ করে পায় না মূল্য উৎপন্ন ফসলে।

অর্ধাহারে কাটে তারা কী বুঝে স্বাধীনতা মানে!
জ্বরজ্বালায় বেতন কাটা যায় ছুটি নেই কেন কে জানে?

স্কুলছুট রুগ্ন বালিকা কাজের মেয়ে পেটের জ্বালায়,
ভাঙলে কাপ প্লেট চড়চাপড় শাস্তি গরম খুন্তির ছ্যাঁকায়।

অভুক্ত বালিকা শ্রমিক, মালিকের ধর্ষণ ব্যভিচার,
দেহদানে চলে সংসার প্রতিবাদে বহিস্কার।

তাদের কীসের স্বাধীনতা! তেরঙ্গা কীসের বারতা?
অহোরাত্র সংসারের ঘানি টেনেও নির্যাতিতা।

চোখের জলে ভিজিয়ে ভাত খেয়ে কীসের স্বাধীনতা?
দিনে রাতে ঘরে বাইরে মেয়েরা অসুরক্ষিতা।

আতুরে নুন, ভ্রূণ হত্যা! কন্যা ধর্ষণ কোন সভ্যতা?
কন্যা সন্তানের জন্মেরও নেই অবাধ স্বাধীনতা।

ব্রিটিশ থেকে ক্ষমতা এক মায়ের তিন ছেলের তিন পতাকা।
শুধু ভারতের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা।
স্বাধীনতা সংগ্রামে সংগ্রামীদের আত্মবলিদান,
কেউ মরে জেলে কেউ ইতিহাস পাতায় অন্তর্ধান।

স্বাধীনতার বাহাত্তর বছর পর এক দেশ এক নিশান।
বিপ্লবীদের এক ছত্রতলে করি স্মরণ জয়গান।
স্বাধীনতা মানে—-
বন থেকে কিশোরীর হারানো বাছুর নিয়ে সাঁঝে ফেরা।
উদাম উদ্ধত বুকে যুবতীর পুকুরে স্নান সারা।

শেষ লোকালে যুবতীর কাজ শেষে রাতের আঁধারে আগমন,
গৃহবধূর এটিএম কার্ড কেনাকেটা সর্বত্র বিচরণ।

ভূতের রাজার বর, যা খুশি তাই খবর।
গোমূত্র মদ সিগারেট মোমবাতি প্রদীপ থালা কাঁসর।

সবজি মাছ মাংস ডিম দুধ গুঁড়ি গুগলি চাই প্রোটিন,
রোগ প্রতিরোধে চাই ঋণ করেও ঘি টিন টিন।

গাদাগাদি ভীড়ে বাদুড় ঝোলা হয়ে লোকাল ট্রেনে বাসে
মন্দিরে মসজিদে পুজোর মন্ডপে জমায়েত পরিজন পাশে।

বন্দীদশা শেষে ডাংগুলি ফুটবল মাঠে ময়দানে।
কিত্কিত্ কোলাকুলি কানামাছি কবে কোনখানে?

চলোযাই বিমানে দেশ থেকে দেশান্তরের শহরে।
দ্রুতগামী ট্রেনে তীর্থে ভ্রমণে পর্বত সাগরে।

কল্পনা বাস্তবে রচনা শেষে কবি বাসরে,
দ্রুতগামী যানবাহনে কবি সম্মেলন আসরে।

Loading

Leave A Comment