Site icon আলাপী মন

পরিসংখ্যান কতোটা সত্যি বলে?

পরিসংখ্যান কতোটা সত্যি বলে?
-রীণা চ্যাটার্জী

সুধী,
শক্তির আবাহন, সমৃদ্ধির পূজন, আলোর উৎসব সব কিছু মিটে গেল সময়মতো। এবারে মহামারী কালীন পরিস্থিতির জন্য প্রশাসন-আদালত-পুজো-ক্লাব- জনতা- জনমত অনেক চাপান- উতোর ঘুরে ফিরে বারবার এসেছে উৎসব আবহে। কেউ বা সহমত, কেউ বা বিতর্ক প্রতিযোগিতায় নেমেছেন।
ব্যক্তিগত অভিরুচি। হয়তো সেইরকম অভিরুচির বশবর্তী হয়ে অনেকে অনেক রকম সিদ্ধান্ত নিয়েছেন- তার একটি ছোট্ট ঘটনা জানাতে বা শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের সাথে ভাগ করে নিতে খুব ইচ্ছে করছে।

মহামান্য হাইকোর্টের রায়- প্রশাসনের প্রদেয় অনুদানের প্রায় পঁচাত্তর শতাংশ অর্থ মহামারী কালীন সতর্কতা ও সচেতনতার জন্য ক্লাবকর্তাদের স্যানিটাইজার, মাস্ক খাতে ব্যয় হবে। তারপর কিভাবে কোথায় কি হয়েছে তার তথ্য জানাতে হবে। পরবর্তী পদক্ষেপ- কত জল মিশিয়ে আদালতে পেশ হবে সে তো জানা কথা।

তবুও এই প্রসঙ্গে একটি ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী- পূর্ব কলকাতার বিখ্যাত একটি পুজোর প্রধান উদ্যোক্তা। একাধারে তিনি নির্বাচিত বিধায়ক ও মাননীয় মন্ত্রী। তাঁর তহবিল মারফৎ স্যানিটাইজার ও মাস্ক না কি তাঁর বিধানসভার অন্তর্গত সমস্ত পুজো কমিটির মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে জনসাধারণের জন্য। সাধু উদ্যোগ নিঃসন্দেহে।

এইবার পুজো কমিটির কথা- যাঁরা বা যে পুজো কমিটি ওই অনুদান পেয়েছেন, তাঁরা কি করলেন?
সবার কথা জানা নেই, কিন্তু একটি কেন্দ্রীয় সরকারী আবাসনের এ্যসোসিয়েশন বা পুজো কমিটি সিদ্ধান্ত নিলেন যে আবাসিকরা পুজোর চাঁদা দিয়েছেন শুধুমাত্র তাঁরাই ওই স্যানিটাইজার বা মাস্ক পাবেন এবং অবশ্যই সাক্ষরের বিনিময়ে। ঠিক এইখানেই অবাধ্য মন বিরোধী হয়ে উঠলো। একটি ঘটনার পিছনে শত প্রশ্ন..সরকারী আবাসন যখন বলা বাহুল্য নানা জাতি, নানা ধর্মের বসবাস, তাঁদের উৎসবও ভিন্ন। তাই দুর্গা পুজোয় চাঁদা দেওয়া বা না দেওয়া সম্পূর্ণ তাঁদের ব্যক্তিস্বাধীনতা। কিন্তু জনতহবিল থেকে প্রাপ্ত উক্ত জিনিসে অধিকার তো সার্বজনীন জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে। তাহলে এই সিদ্ধান্ত কতোটা অবমাননার ও স্বৈরাচারী ভাবলেই বিতৃষ্ণায় ভরে যাচ্ছে মন, কারণ আমাদের পরিবার থেকে এইবারেও চাঁদা দেওয়া হয়েছে প্রতিবারের মতো অর্থাৎ আমি বা আমরা এই অন্যায় সিদ্ধান্তের অজান্তেই সমর্থনকারী। জানি না ঠিক কতজন আবাসিক এটা নিয়ে ভেবেছেন? অনেকেই সাক্ষরের বিনিময়ে প্রাপ্যটুকু বুঝে নিয়ে দোর বন্ধ করেছেন। যিনি বা যে পরিবার চাঁদা দেন নি, তাঁদের সাক্ষরের সুযোগটাও রাখে নি পুজো কমিটি। ছিঃ, আসলে আমরা কাউকে নিয়ে ভাবতে ভুলে গেছি- কারো অবমাননায় পাশ এড়াতে শিখে গেছি। নিজেদের অপমানটাই বা কতটুকু বুঝতে পারি কে জানে?

এখানেই সংঘাত নিজের সাথে এবং অবশ্যই সেই অর্বাচীনদের সাথে। স্বভাবের কারণেই প্রতিবাদ করেছি- তা অবশ্যই একলা চলো রীতিতে, পাশে পাবার মতো মেরুদন্ড সোজা করে চলার লোক আর পেলাম কবে? কারণ মানুষ প্রতিবাদ জানায় না ভদ্রবেশী ছলনাশ্রয়ী চাঁদার জুলুমবাজদের সামনে, হেসে হাত মিলিয়ে কুশল বিনিময় করে।

চাঁদার দাবিতে অনেক ঘটনা সামনে আসে- বেকার ছেলে, নেশাখোর বিভিন্ন আখ্যা দিই আমরা তাদের। হ্যাঁ, তাদের সামনেও আমরা প্রতিবাদ করি না ভয়ে- তাদের জুলুমবাজির শিকার মৃত্যুর মুখোমুখি হয় অনেক সময়। আর ভদ্রলোকেদের জুলুমবাজিতে মনের মরণ হয়- মনের মৃত্যুর যে হিসাব হয় না। আর তাই মুখোশধারীরা কলার তুলে চলার সাহস পায় সারা জীবন।
স্বৈরাচারী সিদ্ধান্তের এই পরিসংখ্যান তো মহামান্য আদালত তো পাবেন না- না কি রোগ জাতি-ধর্মের ব্যবধানে বদলে গেল? ভাবতে অবাক লাগছে এঁরা সরকারী কর্মচারী। ছিঃ.. এতো হীনমন্যতা!
উৎসবের আবহ এবার বড়ো করুণ ছিল, তার সাথে বিতৃষ্ণা দোসর অর্বাচীনদের মাঝে বাস করার ফল।

হৈমন্তী শুভেচ্ছা সকল প্রিয় ও শ্রদ্ধেয়জনকে। শুভকামনা আলাপী মন-এর পক্ষ থেকে।

Exit mobile version