ভোজন রসিক
– জয়তী মিত্র
পাড়ার মোড়ের কাছে কালুদাকে দেখেই সঞ্জীব বললো, ‘আরে ও কালুদা ভালই হলো তোমার সাথে দেখা হয়ে, সামনের সপ্তাহে আমার ভাইপোর মুখে ভাত, তোমার আর বৌদির নিমন্ত্রন রইলো। কার্ডটা তুমি নাও, বৌদিকে আমি সময় করে বলে আসব। কালুদা বললো,’তোমাকে আর আসতে হবে না, আমি তোমার বৌদিকে বলে দেব।’ নিমন্ত্রণ পেয়ে কালুদা বেজায় খুশী।
পাড়ার সবাই তাকে কালুদাই ডাকে। সুমিত নামটা সবাই ভুলে গেছে। গায়ের রং এমন কালো যে অন্ধকারে তাকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। একবার তো পাড়ার হারু অন্ধকারে কালুদাকে দেখে ভূত বলে চিৎকার করে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল। পুরো আবলুস কাঠের মতো গায়ের রং।
নিমন্ত্রণ বাড়ি পেলে কালুদার মনটা আনন্দে ভরে যায়। রকমারী খাবারের পদগুলো তার চোখের সামনে ভেসে ওঠে। যখন বয়স কম ছিল তখন তো রীতিমতো খাবারের প্রতিযোগিতায় নামত কালুদা। তার ফার্স্ট প্রাইজ পাওয়া কেউ আটকাতে পারতো না।
কালুদার ছোটো বেলা কেটেছে গ্রামের বাড়িতে। কালু দা তখন কলেজে পড়ে। বন্ধুর এক দিদির বিয়েতে এক বালতি রসগোল্লা, কেজি দুই মাংস খেয়েছিল। সেই থেকে গ্রামের কোনো অনুষ্ঠান হলে শুধু কালুদর পেটরোগা বাবার নিমন্ত্রণ থাকত।
এখন কালুদার বয়স ষাট। এই বয়সে এসেও নোলা যায়নি। কোনো অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রন পেলেই কালুদা বৌদিকে সাথে নিতেন না। নিজে বেশিরভাগ জায়গাতে একাই যাবার চেষ্টা করতেন। কারণ তাকে পাগলের মত খেতে দেখলে বৌদি যেভাবে চোখ পাকাতেন, তাতে তার কাপড়ে চোপড়ে হবার উপক্রম হতো। কালুদার বৌ ছিল খুব জাঁদরেল মহিলা। কালুদাকে সবসময় ধমকিয়ে, চমকিয়ে রাখতো। বৌকে খুব ভয় পেত কালুদা।
এদিকে কালুদা বৌকে না জানিয়েই নিমন্ত্রণ বাড়ি হাজির। বৌদি সেদিন বাপের বাড়ি গিয়েছিল। বৌদি যখন বাড়ি থেকে ফিরলো, তখন দেখলো পাড়ার দু’টো ছেলে কালুদাকে রিকশায় চাপিয়ে বাড়ি নিয়ে আসছে। কালুদা নিমন্ত্রণ বাড়িতে এত খেয়েছে যে তার আর চলার ক্ষমতা নেই। বয়স যে অনেক বেড়ে গেছে সেদিকে কোনো খেয়াল নেই।
সব শুনে বৌদি বললো ‘কাল থেকে শুধু সেদ্ধ ভাত আর চারা মাছের ঝোল খাবে।’ বৌদির মুখে এইকথা শুনে কালুদার তখন চোখে জল।
বেশ কদিন বৌয়ের তত্ত্বাবধানে ডায়েট মেনে কালুদার তো অবস্থা খারাপ। হাড়, জিরজিরে চেহারা হয়েছে। নিজেই নিজের দিকে তাকাতে পারছে না। ওদিকে বৌদি মাছ, মাংসের পদ রোজ খেয়ে যাচ্ছেন ইচ্ছা মত। সেদিন খাসির মাংসটা চেখে দেখতে চেয়েছিলেন কালুদা। বৌ এমন ধমকানি দিল ওনার খাবার ইচ্ছাটাই চলে গেলো।
পরদিন কালুদার বৌ গিয়েছিল বোনের বাড়ি। ফ্রিজে ছিল আগের দিনের মাংস। কালুদাকে আর পায় কে? মাংসের বাটিটা বের করে কিছুক্ষণ ধরে আয়েশ করে মাংসটা সবটাই খেয়ে নিল কালুদা। বৌদি এসে মাংসের বাটি না পেয়ে কালুদাকে শুধু মারতে বাকি রেখেছিল।