রং মাখা মানুষ
-শিলাবৃষ্টি
অফিস থেকে ফিরতে আজ একটু দেরি হয়ে গেছে অমলের । মেয়েটা সারাদিন বাবার পথ চেয়ে বসে থাকে । এলেই ব্যাগ হাতড়ায় – তার জন্য কি এনেছে পাপা।
আজ কিন্তু পরিবেশটা একদম অন্যরকম। বৌ এর মুখটা বাংলার পাঁচ । মেয়েকে দাবড়ানি দিয়ে বসিয়ে রেখেছে পড়াতে । সেও ভয়ে ভয়ে রয়েছে । অমল একটু জোরেই ডাকে — আমার বিনি কৈ ? আজ কি এনেছে পাপা দেখো । নিয়ে যাও। কিন্তু বিনি আসেনা । একটু পরে আসে সুধা ।
– কি হয়েছে ? অমল প্রশ্ন করে । সুধা কোনো উত্তর না দিয়ে একটা মুখ খোলা খাম এগিয়ে দেয় । ক্যুরিয়ারে এসেছে ।
কি এটা ?
– নিজেই দেখে নাও । জীবনে আর কি কি করেছ বলোতো তুমি ? এখন তো দেখছি কোনো হিসেব নেই তোমার মহান কীর্তির । আমাকে এবার মুক্তি দাও।
ভয়ে ভয়েই চিঠিটা খোলে অমল । আজই এসেছে ।
মেঘ ,
অবাক হচ্ছো ? নাগো ,এখনো তোমাকে ভুলতে পারিনি ,ভুলতে পারিনি আমার দেওয়া সেই প্রিয় নামটা — মেঘ। তুমি ভাবছো তোমার ঠিকানা আমি কি করে পেলাম ! পাওয়া যায় । ইচ্ছে থাকলেই উপায় একটা পাওয়া যায় ।অনেক ভেবেছি ,তবু পারলামনা । লিখলাম মনে ছটফট করতে থাকা কিছু কথা । তোমার সংসারে অশান্তি এনে দিলাম হয়তো আবার ! কিন্তু আমি কোথায় শান্তি পেলাম বলো ? প্রথম থেকেই তুমি আমার সাথে মিথ্যাচার করেছিলে । অভিনয় এত নিখুঁত কি ভাবে করতে মেঘ ? আমাকে মিথ্যে স্বপ্ন দেখাতে তুমি ! যত ভাবি অবাক হই । বিয়ে হয়ে গেছে ,সন্তান আছে তোমার সমস্তটাই চেপে গিয়েছিলে । যখন জানলাম – তখন অনেকটাই দেরি হয়ে গিয়েছিল ! তুমিও উপায় না পেয়ে সব স্বীকার করলে ঠিকই , কিন্তু নিজেকে যেমন করে হোক সরিয়ে নিতে থাকলে । ফেসবুকে ব্লক করে দিলে ।কতবার ফোন করলেও ধরতে না । ব্যস্ততার অযুহাত দিতে দিতে একদিন চরম অপমান করে সমস্ত সম্পর্কটাতে ইতি টানলে ।
জানো মেঘ – কত রাত আমি বিনিদ্র থেকেছি । জেদ চেপে গেল । আর একটা নাম দিয়ে একাউন্ট খুললাম শুধু তোমার জন্য । যা ভেবেছিলাম তাই হল । আবার আমার দ্বিতীয় আমির সঙ্গে তোমার প্রেমের খেলা শুরু করলে । বুঝতেও পারলেনা । আরো খোঁজ খবর নিতে শুরু করলাম – তোমার এফ বি ফ্রেণ্ড খুঁজে খুঁজে । জানলাম তোমার চরিত্রটাই এরকম । এত মেয়েকে কিভাবে সামলাও মেঘ ! মুখোশ ? না না সার্কাশের রং মাখা মানুষগুলো দেখেছ? আজ তোমাকে আমার তাই মনে হয় ! রং মাখা মানুষ ! আর কেউ না চিনলেও আমি কিন্তু তোমাকে চিনে ফেলেছি । এই বড় খামের ভেতরে একটা ছোটো খাম আছে । খুলে দেখো — তোমার একটা ছবিকে আমি সাতটা রং দিয়ে সাজিয়েছি । দেখোতো চিনতে পারো কিনা ! ইতি
বৃষ্টি
অমল ছবিটা খোঁজে । কই নেইতো খাম !
বৃষ্টি অন্য নামে তার ফ্রেণ্ড ! কিন্তু কে সে ?কিছু ভাবতে পারেনা আর অমল ! ছবিটা নেইতো !
সামনে তাকিয়ে দেখে বিনির হাতে একটা ছবি ,-পাপা পাপা দেখো রং মাখা জোকার দেখো দেখো । কাঁপা হাতে ছবিটা ধরে অমল । খুব ক্লোজ একটা ছবি বৃষ্টির সঙ্গে; কিন্তু তার মুখটায় রং দিয়ে একটা জোকার বানানো হয়েছে যেন ! হঠাৎ দরজায় দাঁড়ানো সুধা চিৎকার করে হাসতে শুরু করে ।