Site icon আলাপী মন

অণু গল্প- সেলসম্যান

সেলসম্যান
-জয়তী মিত্র

 

 

সারাদিন দরজায় দরজায় জিনিসপত্র বিক্রি করার পর একটা চায়ের দোকানে গিয়ে বসলো সৌরভ। চায়ে চুমুক দিতেই এক নিমেষে তার সব ক্লান্তি দূর হয়ে গেল। হঠাৎ তার মনে পড়ে গেল, এই পাড়াতেই তো রিমিদের বাড়ি ছিল। বহু বছর পর এই পাড়াতে এলাম। যদিও এই পাড়ায় আসার প্রথম অভিজ্ঞতা তার মোটেও ভালো নয়। এত বছর পরেও তার অপমানিত হবার স্মৃতি মনের গভীরে আজও উজ্জ্বল হয়ে আছে।
রিমি আর সৌরভ দুজনে একই মাস্টার মহাশয়ের কাছে বাংলা পড়তে যেত। দুজনেই তখন একাদশ শ্রেণীতে পড়ে। এক জায়গায় পড়ার সুবাদে নোটস আদান প্রদান হতে হতে কখন যে দুজনে ভালোবাসার বন্ধনে জড়িয়ে পড়েছিল, দুজনের কেউ সেটা বুঝতে পারেনি। পড়াশুনার পাশাপাশি চলতে লাগলো চুটিয়ে প্রেম পর্ব। মাস্টার মহাশয়ের বাড়ির কিছু দূরে গঙ্গা নদীর পাড়ে একটা কৃষ্ণচূড়া গাছ ছিল। সেখানে গিয়ে তারা মাঝে মধ্যে বসতো, কত রঙিন স্বপ্নের জাল বুনতো। কত ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করতো। সৌরভ বলতো, দুজনে অনেকদূর পড়াশুনা করে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে তারপর বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হবে। তখন আর বাড়ির লোকেরা আপত্তি করতে পারবে না।

মানুষের সব আশা এক জীবনে বাস্তবায়িত হয় না। একদিন দুজনকে একসাথে দেখে রিমির দাদার এক বন্ধু রিমিদের বাড়িতে সব বলে দেয়। শুরু হয় রিমির ওপর নির্যাতন। রিমির বাবা ছিলেন খুব রক্ষণশীল প্রকৃতির, তার বাড়ির মেয়ে পথে ঘাটে ঘুরে প্রেম করে বেড়াচ্ছে এটা তিনি মেনে নিতে পারলেন না। রিমির বাইরে বেরোনো বন্ধ করে দিলেন তিনি। রিমি তো প্রথম কদিন খুব কান্না কাটি করলো। সৌরভও মনে মনে খুব ভেঙে পড়লো।
একদিন রিমির সাথে দেখা করার জন্য তার বাড়ির কাছে আসতেই রিমির দাদার নজরে পড়ে যায়। পাড়ার সকলের সামনে দুই গালে সপাটে চড় মারে সৌরভকে রিমির দাদা। চূড়ান্ত অপমানিত হয়ে চোখের জল ফেলতে ফেলতে সৌরভ ফিরে যায় নিজের বাড়িতে।
তার পর বেশ কয়েক বছর পার হয়ে যায়। রিমির সাথে আর কোনোদিন দেখা হয় নি সৌরভের। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর নাকি রিমিকে বিয়ে দিয়ে দিয়েছিল রিমির বাবা। এক বন্ধুর কাছে রিমির বিয়ের কথা শুনেছিল সৌরভ। সৌরভও বি এ পাশ করার পর রাতে ছাত্রছাত্রীদের পড়াতো আর দিনের বেলায় সেলসম্যানের কাজ করতো। সরকারী চাকরীর পরীক্ষায় বসার প্রস্তুতিও নিচ্ছিল।

চা খাওয়া শেষ হলে দোকানের মালিককে রিমির কথা জিজ্ঞাসা করে জানতে পারে বিয়ের এক বছরের মাথাতে পণ মেটাতে না পারায় পুড়িয়ে মারে রিমিকে।
এই কথা শুনে সৌরভের চোখ দিয়ে ঝর ঝর করে জল পড়তে থাকে। তার রিমিকে শেষ কালে পণের বলি হতে হল।
একটা ফুলের মত নিষ্পাপ মেয়ের জীবনটা অকালে ঝরে গেল!
একরাশ হতাশা নিয়ে বাড়ির দিকে পা বাড়ালো সৌরভ। 

Exit mobile version