এইতো হেথায়
-সুজিত চট্টোপাধ্যায়
আসবো আসবো করে সেও আসেনি। যাবো যাবো করে এরও যাওয়া হয়ে ওঠেনি। অথচ আমন্ত্রণ ছিল উভয় পক্ষেই। তবুও..
আজ কথা আছে। আসবার। তার। কতদিন পর আজ অনেক আয়োজন। পরিপাটি সাজানো সারা বাড়ি। ও আসবে। বলেছে আসবে।
নিজেকেও সাজিয়ে তুলেছে বেশ। সেই তার কথা মনে করে। তার ভাললাগাগুলোকে একটু একটু করে তুলে নিয়েছে তার সারা অঙ্গে। সোনা রঙের শাড়ীতে কালো আর লালচে আলপনা। শাড়ী ব্লাউজের ম্যাচিং। ঢেউ খেলানো কালো চুলের সাথে একাকার।
মনে সাগরের উথাল পাথাল। দোতলার বারান্দায় মানি প্ল্যান্টের সবুজ পাতার আড়ালে বুলবুলি পাখির ব্যস্ত ওড়াউড়ি।
ফাগুন হাওয়ায় বাসন্তী সিল্ক পর্দা গুলোর ওডিসি নৃত্যে ওডিকলোন সুবাস। ফ্রিজে আইসক্রিম রাখতে রাখতে মন ভেসে যায় দূরে । অনেক দূরের ফেলে আসা সময়ের কাছে।
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল এর সামনের রাস্তায়, ছুটন্ত সুসজ্জিত ঘোড়ার গাড়ি। সওয়ার দুজনে। অনন্ত সুখে হারিয়ে যাওয়া। চৈত্রের সন্ধ্যায়। গলে যাওয়া আইসক্রিমের টসটসে ফোঁটায় ভিজে যাওয়া শাড়ির কোল, রুমাল দিয়ে মুছে দেবার ওর সে কি আপ্রাণ চেষ্টা। হেসে বাঁচিনে। ব্যগ্র চোখে হতাশ গলায় অপাপবিদ্ধ সরলতার পরশ মাখা প্রশ্ন, কী হবে?
আবারও হেসে বাঁচিনে ।
সিঁড়িতে পায়ের শব্দ। ও কি এলো?
এখন ঘড়িতে ঠিক রাত দুটো বেজে সাত মিনিট।
আতর জলে ডুবিয়ে রাখা বসরাই গোলাপ খানি, সে তুলে নিলো হাতে। পরম ভালবাসায় রেখে দিলো ওর হাসিমুখ ছবিটার পাশে । আইসক্রিমের পাত্রটাও সাজিয়ে রাখলো ওরই সামনে। তারপর তাকিয়ে রইলো খোলা দরজার দিকে।
ও আসবে । নিশ্চয়ই আসবে। ও মিথ্যে বলে না। ও মিথ্যে বলতে জানে না। ও আসবে।
রাত ঠিক দুটো বেজে সাত মিনিট। ওর প্লেনটা ঠিক এইসময়ই..মুহূর্তে আগুন। বিধ্বংসী সর্বগ্রাসী প্রলয় আগুন। সবশেষ। স্মৃতিটুকু ছাড়া।
চোখের টসটসে ফোঁটায় ভিজে যাওয়া শাড়ির কোল। রুমাল দিয়ে মুছিয়ে দিতে দিতে ও ব্যগ্র চোখে অপাপবিদ্ধ সরলতার পরশ মাখা গলায় বললো, এইতো আমি, চেয়ে দ্যাখো। তোমার আমি।
আবারও মুগ্ধ চোখে, হেসে বাঁচিনে।