গল্প

গল্প- শেষ আঘাত

শেষ আঘাত
– অঞ্জনা গোড়িয়া

 

 

এই আমায় বিয়ে করবে? আজ এই মুহুর্তে এখুনি। রাজী থাকলে বলো। নইলে অন্য পাত্রের খোঁজে যাবো। ঠিক করে ভেবে বলো।
অনুপম একেবারে থ হয়ে গেল। বলে কি রুমি? এত দিন পর। যার জন্য দিনের পর দিন আদাজল খেয়ে পড়ে ছিল একটু রাজী করাতে। আজ সে নিজে এভাবে ধরা দিতে এসেছে।
ভাববার বিষয়। মনে মনে ভাবলো, রুমি কিছু ফন্দি আঁটছে না কি?
তীব্র কণ্ঠে রুমি বলে উঠলো, এই যে মিঃ তাড়াতাড়ি উত্তর চাই। আমার হাতে বেশি সময় নেই।
-ইয়ে মানে, বিয়ে? মানে কি হয়েছে একটু বলবে? বিয়ে বললেই বিয়ে হয় নাকি? একটু সময় দাও। দিনক্ষন ঠিক করি। একটু প্রস্তুতি নিতে দাও।
-ও, বুঝেছি। তুমি আর সব ছেলের মতো। মা বাবার বাধ্য সন্তান। তাই তো? তার মানে তোমার এখন সময় নেই। চলে যাচ্ছি। পরে যেন আফসোস করো না। যাকে পাবো তাকেই বিয়ে করবো।
-ঝোঁকের বশে এমন সিদ্ধান্ত নিও না রুমি। একটু শান্ত হও। কি হয়েছে বলো? অনুপম শক্ত করে ধরে দু’টো হাত- এ হাত যখন ধরেছি।আর ছাড়বো না। আজ তুমি নিজে ধরা দিতে এসেছ। চলো কোথাও বসি। তারপর আইসক্রিম খেতে খেতে সব শুনবো। কি বলো রুমি? আইস্ক্রিম খাবে?
রুমির সহজ উত্তর- “আমার মাথায় আগুন জ্বলছে। আর তুমি আইসক্রিম খেতে বলছো?
হা হা হা করে হেসে উঠলো অনুপম। সেই জন্যই তো খেতে বলছি, মাথাটা ঠান্ডা করতে হবে তো”।
ঠিক আছে আজই বিয়ে করবো। এখুনি। দাঁড়াও ছুরিটা আনি। সিনেমার নায়কের মতো হাত কেটে পরিয়ে দেব৷ রক্তে রাঙিয়ে দেব সিঁথি। তাই তো?
রুমি এতক্ষণে একটু ঠান্ডা হয়েছে। ছ,বছরের মেয়ের মতো হাউহাউ করে কেঁদে ফেললো। অনুপমের কলারটা চেপে ধরলো। -জানো বাপী আমার কথা রাখে নি। আজ আবার বাড়িতে বিয়ার এনেছে। ডাক্তার এত করে বারণ করলো, এসব ছাইপাঁশ না খেতে। রাখলো না আমাকে দেওয়া কথা?

অনুপম এত দিনে বেশ চিনেছে অষ্টাদশী রুমিকে। অনুপম স্কুল টিচার। নতুন অ্যাপয়েন্টমেন্ট রুমিদের পাড়ার হাইস্কুলে। এই স্কুলেরই ছাত্রী রুমি। রুমি যেমন ছেলেমানুষ তেমনই বদমেজাজী। রেগে গেলে রক্ষে নেই। একটু একটু করে আলাপ তারপর বেশ বন্ধুত্ব জমে উঠে ছিল।

-তুমি নিশ্চয় বাবার ওপর অভিমান করে এসেছ? কিন্তু ভেবে দেখেছ একবার, মানুষটা এখন কত কষ্ট পাচ্ছে? বাবার আশির্বাদ না নিয়েই বিয়ে করবে?
অনুপমের জামার কলার চেপে ধরে বললো- বিয়ে করবে হ্যাঁ কি না?
আর কোনো উপায় নেই। এত দিন এই মেয়েটাকে বিয়ে করার জন্য পায়ে পায়ে ঘুরেছে। আজ সে সম্মুখে।

সামনেই কালী মন্দির। আর কোনো প্রশ্ন নয়। পুরোহিতের সামনে দুই অবিবাহিত নারী পুরুষ। আজই এই মুহুর্তে বিয়ে। অবাক মন্দিরের পুজারী।
মায়ের পায়ে দেওয়া সিঁদুর তুলে নিল হাতে। পুরোহিতের সম্মতিতে পরিয়ে দিতে প্রস্তুত অনুপম।
একটা তীব্র কন্ঠস্বর ভেসে এলো দূর থেকে।
-এমন শাস্তি দিস না মা আমার। আর একবার সুযোগ দে মা। কথা দিচ্ছি আর কোনো দিন এমন করবো না। ক্ষমা করে দে মা। তোকে হারাতে পারবো না।
পুরোহিত মশাই খুব ভালো করে চেনেন এই ভদ্রলোককে। এখানকার নামকরা সম্মানিত ব্যক্তি। সেই ব্যক্তির মেয়ের আজ বিয়ে দিচ্ছেন বাবার অনুমতি ছাড়াই।
ভয়ে থতমত খেয়ে বললেন- অপরাধ নেবেন না। এ মেয়ে যে নাছোড়বান্দা। আজই বিয়ে করবে। নইলে মন্দিরে সব কিছু লন্ডভন্ড করে দিচ্ছিল।
মুচকি হেসে বাবা বললেন- এ মেয়ে যে আমারই রক্তে তেজী। সাহসী। অভিমানী। সব আমার দোষ পুরোহিতমশাই।এই কান মুলছি। আর কোনো দিন বোতল ছোঁবো না। আর একবার ক্ষমা করে দে। রুমির জেদ কেমন? সবই জানে বাবা।
আজ যদি এভাবে বিয়ে হয়ে যায়। চিরদিনের মতো বাবার সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে ফেলবে।
মাস খানেক আগে কিডনির সমস্যায় দারুন ভাবে এফেক্টেট হয়ে ছিল। জীবন নিয়ে টানাটানি। ডাক্তারবাবু জানিয়ে দিয়েছিল আর কোনোরকম ধূপপান, মদ্যপান করা চলবে না। তাহলে জীবন সংশয় হতে পারে। মেয়েকে কথা দিয়ে ছিলেন কোনো অবস্থায় এসব করবে না।
রুমি পরিস্কার জানিয়ে ছিল- আবার যদি মদ্যপান করো। সেদিনই যাকে পাবে বিয়ে করবো। আর তোমার সাথে সব সম্পর্ক শেষ।
কথা রাখতে পারেন নি। মেয়ের জন্মদিন। বাড়িতে কিছু পুরানো বন্ধুর অনুরোধে লুকিয়ে খেয়েছিল বেশ কিছুটা। অনুষ্ঠান শেষ। কিন্তু সেই রাতেই পেটের অসহ্য যন্ত্রণায় আবার ভর্তি করতে হলো হসপিটালে।
বাবা একটু সুস্থ হতেই শেষ বারের মতো প্রণাম করে বেরিয়ে আসে। বুঝে ছিল বাবা। মেয়ের জেদের কথা। সোজা হসপিটাল থেকে খবর নিয়ে মন্দিরে উপস্থিত। মেয়ের কাছে বাবার হার।
দেবী মায়ের কাছে দু’ বাপে ঝিয়ের এক কঠোর প্রতিজ্ঞা। হয় মেয়েকে ছাড়ো। নয় তো মদ ছাড়ো।
অনুপমই ফোন করে জানিয়ে ছিলো রুমির বাবাকে তার মেয়ের পাগলামির কথা।
এমন একরোখা জেদি মেয়েকে নিয়ে ঘর বাঁধার স্বপ্নটা অনুপমের তবু সত্যি হলো।

Loading

Leave A Comment

You cannot copy content of this page