শুধু খবর
-শম্পা সাহা
খুবই গরিব ঘরের ছেলে সমীরন ,বাবা রাজমিস্ত্রির কাজ করে তাদের তিন ভাইবোনকে বড় করেছেন। তাদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট সমীরণ, কিন্তু ওই ভাই-বোনদের মধ্যে পড়াশোনায় সবচেয়ে ভালো । ওর বাবা নিমাই সর্দার যথেষ্ট চেষ্টা করেছেন যাতে ছেলের পড়াশোনার ক্ষেত্রে কোন অসুবিধে না হয়। বাবার আশা পূর্ণ করে ছেলেও বেশ ভালোভাবেই বিএ পাস করেছে তাই ওর পরের পড়াশোনা চালানোর জন্য টিউশনিই ভরসা, কারণ নিমাই সর্দার আর পারবেন কি ভাবে?
সমীরন জানে, পরিশ্রম না করলে সফল হওয়া যায় না তাই টিউশনিটা ও খুব মন দিয়ে করে । অনেক ছাত্র পড়ে ওর কাছে,তাদের প্রত্যেকের দিকে কিন্তু ও আলাদা আলাদা নজর দেয়। তাই ছাত্র-ছাত্রীদের রেজাল্ট ও হয় খুব ভালো।প্রাইভেট মাস্টার হিসাবে বেশ নাম ডাকও হয়েছে। তবে ও কিন্তু ছাত্র-ছাত্রীদের শুধু বিষয়ভিত্তিক পড়াশোনায় উৎসাহ দেয় না, তাদের সঙ্গে সঙ্গে মানবিক শিক্ষাও দেয়। খুব ভালো ছেলে হিসেবে ও বেশ জনপ্রিয় । সব বাবা-মা তাদের ছেলেমেয়েদের সমীরণের কাছে পড়তে পাঠিয়ে নিশ্চিন্ত। সমীরন বাচ্চাদের নিজেদের পায়ে দাঁড়ানোর শিক্ষা দেয় ,অন্যায়ের সঙ্গে আপোষ না করার শিক্ষা দেয়।
একবার সরস্বতী পুজোর দিন কোচিং সেন্টারে পূজো, কিশোর-কিশোরী ছেলেমেয়েদের ভিড়, বারো থেকে ষোলো সব মেয়েরাই শাড়ি পড়ে গিন্নী সেজে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
ছাত্র-ছাত্রীদের ভোগ প্রসাদ দেবার আগে সমীরনের মনে পড়ল পাতা তো আনা হয়নি। ছেলেমেয়েগুলো আনন্দ করছে দেখে ওদের আর বিরক্ত না করে ও নিজেই সাইকেল নিয়ে বের হল । কিছুটা যেতেই চোখে পড়লো রাস্তার ধারে ছোট্ট একটা প্যান্ডেলে গান বাজছে আর ছেলেপেলেরা উদ্দাম নাচ জুড়েছে । দুটো বাচ্চা মেয়ে রাস্তা থেকে যাবার সময়, ওরা জুড়লো অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি । মেয়ে দুটো সমীরনের চেনা মনে হল না, তবে দেখে মনে হল ক্লাস এইট নাইনে পড়ে। মেয়েগুলো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওই এলাকার পাড় হবার চেষ্টা করলেও অসভ্য ছেলে গুলো কিন্তু ওদের পিছু নেয়। এই দেখে সমীকরণ সাইকেল থেকে নামলো। পুরো বিষয়টার নির্বাক সাক্ষী হয়ে থাকতে ও আর পারল না। ওর ভেতরের প্রতিবাদী মানুষটা মাথা চাড়া দিয়ে উঠল, দৌড়ে ছুটে গেল, ইতিমধ্যে একটা অসভ্য ছেলে হলুদ শাড়ি পরা মেয়েটার আঁচল ধরে দিয়েছে এক টান! সমীরন সপাটে চড় কষালো ছেলেটার গালে।ছেলেটা হতচকিত হয়ে টাল সামলে ঝাঁপিয়ে পড়ল সমীরনের উপর, ততক্ষণে ওর আরো বন্ধু এসে পড়েছে। কিল, চড়, ঘুষি অজস্র বর্ষিত হতে লাগল সমীরনের উপর। মেয়েদুটো থর থর করে কাঁপছে । চারিপাশে বেশ একটা ভীড় ,সবাই তাকিয়ে দেখছে, কিন্তু কারো সাহস নেই মারমুখী মাতাল ছেলেগুলোর হাত থেকে সমীরনকে বাঁচানোর! জনগণ শুধু তামাশা দেখছে !
খবর পেয়ে সমীরনের ছাত্রছাত্রীরা ,পরিবারের লোকজন ছুটে আসতে দেখে ,অসভ্য ছেলেগুলো দিল চম্পট। মেরুদণ্ডহীনরা এভাবেই পালায় !রক্তাক্ত সমীরণকে ধরাধরি করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, কিন্তু বাঁচানো যায়নি । মাথার বাঁদিকটা পাথরের আঘাতে একেবারে থেঁতলে গেছিল !আর বাকিটা খবর! খবরের কাগজের একটা খবর জনগণের সহানুভূতির কারণ হলো, “কিশোরীর সম্মান বাঁচাতে প্রাইভেট মাস্টার এর আত্মবলিদান! “