চিংড়ি
-শম্পা সাহা
“আবার তুমি এতগুলো চিংড়ি মাছ নিয়ে এসেছ এই অবেলায়! আমি স্কুলে বেরোবো, না চিংড়ি বাছবো? এ হে হে এগুলো তো নরম! ফ্রিজে রেখে দিলেও খারাপ হয়ে যাবে! কত করে নিল?”
“সত্তর টাকা শ”,
রাঘবের উত্তর শুনে চোখ কপালে চন্দ্রার।
“তুমি জানো, আজ ফুলির মা আসেনি তাও ! আমি বাছতে পারবো না, বসে বসে তুমি বাছো গে”!
রাঘব মনে মনে লজ্জিত হয়। সত্যিই তো ফুলির মা আজ আসবে না, চন্দ্রা গতকালই বলেছিল। ও কি মনে থাকে ছাই ! চিংড়ি দেখে একটু লাউ চিংড়ি খাবার ইচ্ছে হয়। মিন মিন করে বললো,
“রাতে করলেও হবে”,
“কিন্তু বাছবে কে?” চোখের সামনে খুন্তি নাড়ায় চন্দ্রা।
স্কুলে বেরোতে হবে সাড়ে নটার মধ্যে। অন্যরা তো বের হয় সেই কোন ভোরে, নেহাত এসএসসিতে রাঙ্কিং ভালো ছিল, তাই বাড়ির কাছে স্কুল! না হলে টের পাওয়া যেত, মনে মনে গজগজ করে চন্দ্রা। হাঁটা দেয় রান্নাঘরের দিকে। এসব নিয়ে ভাবলেই মাথা গরম হয়ে যায়, লোকটার কি কোনোদিন বুদ্ধি হবে না!
সহেলি বিরক্ত হয়, রোজ এক ঘটনা। বাবার কি কোনোদিনই বুদ্ধি হবে না!
পাশের বাড়ির অপর্ণার মা চেঁচামেচি শুনে উঁকি দেয়, “কি হল গো বৌদি, এত রাগ করছো কেন?”
“আর বোলো না! এই দেখো না তোমার দাদা, এই সময় একগাদা চিংড়ি এনে হাজির করেছে! এখন কে বাছবে?”
“কেন ফুলির মা আসেনি?”
“সে তো আজ ছুটি নিয়েছে”
“ওহ্, তাহলে আমাকে দাও, আমি বেছে দিচ্ছি।
“সত্যিই দেবে? তোমার রান্না হয়ে গেছে?” হাতে চাঁদ পায় চন্দ্রা!
“আমার আবার রান্না! ও তো কখন সারা! দাও আমি বেছে দিচ্ছি।”
চন্দ্রা জানালা দিয়ে মাছের প্লাস্টিকটা বাড়িয়ে দেয়।
সত্যিই মাঝে মাঝে অপর্ণার মা বেশ ত্রাতার ভূমিকা নেয়। কাঁথা কেচে দেওয়া, পোড়া কড়াই মেজে দেওয়া, লেপ-তোষক রোদে দেওয়া, বেশি লোকজন আসলে রান্নাঘরে সাহায্য করা। ফুলির মা তো লাট সাহেব, তাকে কিছু বললে বলে ওঠে, “দত্ত কাকিমা রাগ করবে বা ডাক্তার বৌদির দেরি হয়ে যাবে”, মনে মনে আওড়ায় চন্দ্রা ।
অপর্ণার মা খুব যত্ন করে মাছগুলো বেছে, ধুয়ে, নুন হলুদ মাখিয়ে দেয়, চন্দ্রা স্কুলে বেরোবার আগেই। চন্দ্রা বাটিটা ফ্রিজে তুলে রাখে, কাল রাঁধবে।
অপর্ণার মা একটা পেঁয়াজ আর একটা ছোট আলু কুচিয়ে নেয়। ওই চিংড়ির মাথাগুলো দিয়ে মেয়েটাকে একটু চচ্চড়ি করে দেবে। মেয়েটা চিংড়ি খুব ভালোবাসে, ওর বাবার কাজটা যাওয়ার পর থেকে তো মাছ বলতে পুঁটি তাও সপ্তাহে একবার । অপর্ণার মা যত্ন করে মাথাগুলো ধোয়, যাতে জলের তোড়ে একটাও পড়ে না যায়।